বটিয়াঘাটায় শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে অব্যাবস্থা

প্রকাশঃ ২০১৮-০২-১৪ - ১৫:০৮

বটিয়াঘাটা প্রতিনিধিঃ তপু ভিলার দ্বিতল এবং তিন তলার বারান্দায় গ্রিল ধরে প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকে শেখ রাসেল শিশু পুনর্বাসন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অনাথ বালকেরা। প্রথম দৃষ্টিতেই মনে হবে মিনি জেল খানায় ওরা বন্দি হয়ে আছে। দিনের বেশীর ভাগ সময় তাকিয়ে থাকে ফ্যাল ফেলিয়ে রাস্তার পথচারী এবং যানবাহন চলাচলের দিকে। ভবনের নীচে এক চিলতে খোলা উঠান। সেখানে পালাক্রমে নির্দিষ্ট সময়ে ওদের খেলা করতে দেয়া হয়। দ্বিতল ও তিনতলা মিলে ১২টি কক্ষে মানবেতর জীবন-যাপন করে মোট ৭২টি বালক। তাছাড়া গল্লামারী প্রাক্তন ভবঘুরে কেন্দ্রে (বর্তমান শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পূনর্বাসন কেন্দ্র-বালিকা) রয়েছে ১২৮ জন বালিকা। মোট ২২৮ জনের প্রত্যেকের বয়স ছয় থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। বিভিন্ন ঝুঁকি নিয়ে এ সব বালক-বালিকারা এ প্রকল্পে দিনাতিপাত করছে। নীচ তলায় অফিস কক্ষের দেয়ালে টানানো রয়েছে বিভিন্ন ঝুঁকির ধরণ। যেমন শারীরীক নির্যাতন, আবেগীয় বা মনস্তাত্তিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন ও শোষন, শারীরীক অবহেলা, আর্থিক শোষণ, নিজে সৃষ্ট সহিংসতা, অন্যের দ্বারা সহিংসতা, নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি। প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, এ সব বালক বালিকাদের বিভিন্ন স্কুলে লেখাপড়া শেখান হয়ে থাকে। কচুবুনিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিশ্বমুক্তিবানী সংস্থা ও জলমা চক্রখালী স্কুলে বালকরা লেখা পড়া করে। আর বালিকাদের দেয়া হয় মোহাম্মদ নগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রকল্পের ভিতরে আটক রেখে লেখা পড়া করাবার জন্য শিক্ষক রয়েছেন। এ ছাড়া বালকদের কমপিউটার, মটর সাইকেল গ্যারেজ, মোবাইল সার্ভেসিং, ইলেক্টিকসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। গল্লামারী প্রকল্পের বালিকাদের মধ্যে ৯০ জন মোহাম্মদ নগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যায়ে লেখা পড়া করে। তাদেরকে শেলাই, ব্লক, বাটিক, নার্সিং , দর্জী, বিউটিপার্লারসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে সহায়তা করা হয়। তবে স্থানীয়রা জানান, দিনের অধিকাংশ সময় তাদের চার দেয়ালের মধ্যে তালা দিয়ে রাখা হয়। খেলা ধুলাসহ চিত্তবিনোদনের তেমন কোন সুযোগ নেই। প্রকল্প দু’টির দায়িত্বে থাকা পরিচালক আবু জাফর বলেন, বটিয়াঘাটার জলমা ইউনিয়নে মল্লিকের মোড়ে তপু ভিলায় শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পূনর্বাসন কেন্দ্রে ৭২ জন বালকের মধ্যে ইমরান (১০), দুলাল (১১), ফয়সাল (১০) ও রাব্বী (১০) কোন ঠিকানাই বলতে পারে না। এ বাড়িটি ৪০ হাজার টাকা দিয়ে ভাড়া করা হয়েছে। প্রতি কক্ষে ৩টি করে দোতলা খাট রয়েছে। প্রতি খাটে ১জন করে ঘুমিয়ে থাকে। মোট ৩১ জন স্টাফ এখানে তাদের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। গত ২০১৩ সালে খুলনার পশ্চিম বানিয়া খামারে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। জায়গা সংকটের কারণে পরবর্তীতে গল্লামারীতে স্থানান্তর করা হয়েছে। মাদক সেবী ও বিক্রেতা, আদালত কর্তৃক প্রেরিত বালক বালিকা, প্রতিবন্ধী, পুলিশ কর্তৃক প্রেরণসহ বিভিন্ন ঘটনার শিকার শিশু, কিশের-কিশোরীদের এখানে রাখা হয়। সরকার তাদের সকল ব্যয় বহন করে। এ সব বালক বালিকারাদের যতœসহকারে রাখা হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে অনেক অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে যায়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, গল্লামারী এলাকার চিহ্নিত মাদক স¤্রাজ্ঞী মর্জিনার রয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক কিশোর কিশোরী। তাদের দিয়ে মাদকের ব্যবসা করিয়ে থাকে। তাদের কেউ আটক হলে মর্জিনা তাদের তদবির করে ছাড়িয়ে নিয়ে থাকে। তারা ছাড়া পেয়ে আবারও মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়ে। প্রকল্প দু’টিতে থাকা বালক বালিকাদের স্বার্থে গেটে তালাবন্ধ করে রাখা হয়। তবে ভিতরে খেলাধুলা এবং চিত্তবিনোদনের যথেষ্ট ব্যবস্থা ও সুযোগ রয়েছে।