ইউনিক ডেস্ক : শীতের বিদায় লগ্ন। গাছে গাছে পলাশ ও আম্র মুকুল’র আগমনে প্রকৃতিতে বসন্তের অগ্রিম হাতছানি। স্নিগ্ধ সকালের শিশির বিন্দুতে ভিজে লাল টকটকে হয়ে উঠছে ডালিয়া। রাতভর শিশির স্নানে রঙ ধরছে চন্দ্রমল্লিকাতে। হিমেল হওয়ায় সতেজ হয়ে উঠছে গাদা ফুলের গাছগুলো। ফুলগাছগুলোতে নেচে নেচে বেড়াচ্ছে নানা রঙের প্রজাপতি। সাজানো গোছানো ফুল বাগানের চারদিকে মৌ মৌ করছে রঙিন ফুলের সৌরভ। এমনই ফুলের পরসে মোহনীয় হয়ে উঠছে খুলনার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,দর্শণীয় স্থান, সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলো এবং নার্সারী। উঁচু ভবন থেকে দেখলে মনে হয় এক টুকরো মাটিতে ফুলের গালিচা বিছানো। শীতের সোনালী রোদের কিরণ ফুলের গায়ে পড়তেই চারদিকে তার আভা ছড়িয়ে পড়ছে।
গাছের পাতার ভাঁজে ভাঁজে হেসে উঠছে সবুজ প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য মৌসুমী ফুলে চার দিকে মনমাতানো গন্ধ ছড়াচ্ছে। প্রকৃতির আশির্বাদে শীতের দিনগুলোতে ফুল ফোটে। ফুল নিয়ে অনেক গান কবিতা, গল্প ও ছড়া রচনা করা হয়েছে। আম্র মুকুল, পলাশ ফুল ও কোকিলের কুহু কুহু সুরে জানিয়ে দিচ্ছে বসন্তের আগমনী বার্ত। প্রজাপতি ফুলে ফুলে নেচে নেচে বেড়াচ্ছে। মৌমাছি মধু সংগ্রহ করছে।
নগর ভবনের সামনে রয়েছে নানা রঙের ফুল। ফুলগাছগুলো নিয়মিত পরিচর্যা করা হচ্ছে। শহীদ হাদিস পার্কে রয়েছে ফুলের বাগান। করোনা সংক্রমনের কারণে গত বছর শহীদ হাদিস পার্ক দর্শনার্থীদের জন্য এখনো উন্মুক্ত করা হয়নি। এ বছর রয়েছে উন্মক্ত। খুলনা বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন ও প্রধান ফটকসহ বিভিন্ন স্থানে রয়েছে ফুল বাগান। খুলনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে প্রবেশ মুখে রয়েছে ফুলের বাগান। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিদ্যালয়, শিববাড়ি মোড়ে পানির ফোয়ারার চারপাশে লাগানো হয়েছে নানা রঙের ফুল গাছ। বাহারী সব ফুটন্ত পুষ্পে মাতোয়ারা। একটি মাবাইল কোম্পানি আর এর দেখভাল করছে। গণপূর্ত বিভাগ-১এর সামনে রয়েছে ফুলের বাগান। বিভাগীয় প্রাণি সম্পাদ অধিদপ্তরের সামনে রয়েছে ভেজষ বাগান। কৃষি বিপণন দপ্তরের সামনে রয়েছে। রয়রা সরকারি মহিলা কলেজের সাননে নানা রকম ফুল। স্থানীয় সরকার প্রকৗশলী দপ্তর (এলজিইডি) সামনে রয়েছে মনরম ফুলের বাগান। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে রয়েছে রকমারী ফুল। আঞ্চলিক খাদ্য অধিদপ্তর এবং আঞ্চলিক লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সামনে রয়েছে ফুলের বাগান।
খুলনা জিলা স্কুল, সরকারি ইকবাল নগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, বিজেপি খুলনা সেক্টরের সামনে রয়েছে বাহারী ফুল। খুলনার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামনে সাজানো গোছানে রয়েছে ফুলের বাগান। বিভিন্ন বাড়ির ছাদেও রয়েছে ফুলের বাগান। খুলনায় প্রায় ১০হাজার নার্সারী রয়েছে। প্রতিটি নার্সারীতে হরেক রকম ফুল ফুটেছে। ফুল ও চারা বিক্রি করা হচ্ছে। প্র্রতিষ্ঠান, সড়ক ও সড়ক দ্বীপগ্ুলোতে শোভা পাচ্ছে নানা রকম ফুল। দেশী ফুলের পাশাপাশি বিদেশী ফুল রয়েছে। শতাধিক প্র্রাতির রয়েছে গাঁদা।ফুলের মধ্যে বিদেশী গাঁদার মধ্যে রয়েছে মেরী গোল্ড, ইনকা, জান্বু, চাইনিজ, ফায়ার বন, ভারত থেকে আনা পানচাটিয়াসহ প্রায় শতাধিক গাঁদা ফুল। বিদেশী গোলাপের মধ্যে রয়েছে কালো গোলাপ, সবুজ গোলাপ, লাল গোলাপ, ভিনকা, মোবল, জারবরা, ডালিয়া ও চন্দ্রমল্লিকাসহ নানা রকমের ফুল। দেশী ফুলের মধ্যে রয়েছে জবা, টগর, হাসনাহেনা, গন্ধরাজ, কামিনী, বেলী, জুই চামেলী, রংগন, একঝাড়া, বারবিনা, স্টার, ফলিয়ক্স, নয়নতারা, কালেনগোলা, সানবিয়া, ন্যাশটোসিয়াম, পিটুলিয়া, ইসকাল্লোবালসহ হাজারো প্রজাতির ফুল। নগরীর আহসান আহমেদ রোডস্থ সোহাগ নার্সারীর সম্বাধিকারী মোঃ চান মিয়া বলেন, তার নার্সারীতে দেশী বিদেশী হাজারো প্রজাতির ফুল রয়েছে। অনেক নার্সারী মালিক জমি ভাড়া নিয়ে লাখ লাখ টাকা পুঁজি খাটিয়ে ব্যবসা করেন। এরপর যদি জমি চলে যেতে বললে বেঁচে থাকার কোন পথ থাকে না। ভারতে থেকে চারা সংগ্রহ করতে হয় এতে অনেক খরচ হয়। ফুল প্রেমিরা ঘুরতে আসেন। কেউ আবার শখ করে টবসহ চারা কিনছেন। কেউ আবার ছবি তুলে চলে যান।
জেলা নার্সারী মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি সাব্বির আহমেদ মুন্না বলেন, নার্সারী মালিকরা সব সময় আতংকে থাকেন কখন মালিক পক্ষ বলবে চলে যেতে। আমরা পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকি। খুলনায় প্রায় ১০ হাজার নার্সারী ছিল। এখন নানা কারণে অনেক কমে গেছে। আবার অনেকে ব্যবসা শুরু করেছে। তিনি সরকারি খাস জমি বরাদ্ধ পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছেন।