খুলনায় দেড় বছরে আটক ১৯২, দন্ডিত ২২ : কেএমপি তালিকায় খুলনায় মাদক বিক্রেতা ২২১
কামরুল হোসেন মনি : আজ মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস। মাদকের চোরাচালান যেমন বাড়ছে তেমনি মাদকবিরোধী অভিযানও দিনকে দিন জোরদার হচ্ছে। জনবল ও যানবাহন সঙ্কট সত্ত্বেও খুলনা জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর গত ১৭ মাসে ১৯২ জন মাদক বিক্রেতাকে আটক করেছেন। এই সময়ে মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২২ মাদক বিক্রেতার বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। অভিযানের সময় উল্লেখযোগ্য মাদকদ্রব্য উদ্ধারের মধ্যে রয়েছে ১২ হাজার ৬৭২ পিস ইয়াবা, ১৯ কেজি গাঁজা, ফেনসিডিল ৩২৯ বোতল এছাড়া মাদক বিক্রির ৬০ হাজার ৭শ টাকা জব্দ করা হয়।
এমন অভিযানের মধ্যে দিয়ে আজ বুধবার পালিত হচ্ছে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘সুস্বাস্থ্যেই সুবিচার, মাদক মুক্তির অঙ্গীকার’। দিবসটি উদ্যাপনের লক্ষ্যে খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন এর সহযোগিতায় খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় নগরীর শহীদ হাদিস পার্ক হতে জেলাপ্রশাসক অফিস চত্বর পর্যন্ত এক বর্ণাঢ্য র্যালি বের হবে। র্যালি শেষে জেলাপ্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার খন্দকার লুৎফর কবির (পিপিএম সেবা), অ্যাডিশনাল ডিআইজি একেএম নাহিদুল ইসলাম বিপিএম (অপারেশন ক্রাইম), র্যাব-৬ এর অধিনায়ক লেঃ কর্নেল সৈয়দ মোহাম্মদ নুরুস সালেহীন ইউসুফ পিএসসি ইঞ্জিনিয়ার্সসহ বিভিন্ন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
খুলনা কেএমপি পুলিশ কমিশনার খন্দকার লুৎফর কবির এ প্রতিবেদককে বলেন, খুলনায় নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযানের ফলে বর্তমানে মাদক বিক্রি ৯৫ শতাংশ নেই। অভিযানের সময় তাদেরকে আটক করা হচ্ছে। অভিযানের কারণে অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন। তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসনের একার পক্ষে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। সেক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন রয়েছে। সবাই মিলে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলেই আগামী এক বছরের মধ্যে খুলনাকে একটি মাদকমুক্ত শহর হিসেবে ঘোষণা করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী। তিনি মাদক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে তথ্য দেওয়ার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
কেএমপি’র সূত্র মতে, খুলনায় মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে ২২১ জন। এর মধ্যে পলাতক রয়েছে ৩৪ জন। এছাড়া জেল হাজতে আটক রয়েছে ২৩ জন। জামিনে রয়েছে ১৩৪ জন। জামিনে গিয়ে পলাতক রয়েছে ৩০ জন।
খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় সূত্র মতে, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ১৯ মে পর্যন্ত মাদকদ্রব্য কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা বিভাগ পৃথক অভিযান চালিয়েছেন ১ হাজার ৪১৬টি। এর মধ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয় ১৮৭টি। এ সময়ে নিয়মিত মামলায় ও মোবাইল কোর্টসহ মোট আসামির সংখ্যা হচ্ছে ৪২৪ জন। এর মধ্যে মাদক মামলার আসামি পলাতক রয়েছে ৪৫ জন। আদালতে মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২২ মাদক ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়।
জানা গেছে, সংস্থাটি ২০১৮ সালে বিভিন্ন অভিযানে মাদকসহ বিক্রেতাদেরকে আটক করেন। এ সময়ে ৮৯৩টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের সময় ১২৮ জনকে আটক করা হয়। এছাড়া পালিয়ে যায় ২১ জন। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১১২ জনকে আটক করেন। এই সময়ে আদালতে মাদক মামলায় বিচার প্রক্রিয়া শেষে ১৫ জনকে সাজা ও ৪ জনকে খালাস প্রদান করা হয়।
এছাড়া ২০১৯ সালের ১৯ মে পর্যন্ত ৫২২টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে নিয়মিত মামলা রয়েছে ৭৬টি এবং মোবাইল কোর্ট করা হয় ৭৫টি। নিয়মিত মামলায় ২৪ জন মাদক বিক্রেতা পলাতক রয়েছে।
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় এর উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামান বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে খুলনার এ কার্যালয় জনবল ও যানবাহন সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। এরকম পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে তাদের দিন-রাত পৃথক তিনটি টিম অভিযান পরিচালনা করছেন। অভিযানের পাশাপাশি মাদকের কুফল সম্পর্কে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদকের ভয়াবহতার দিক শিক্ষার্থীদের মাঝে তুলে ধরা হচ্ছে। এছাড়া জনসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চলছে। তিনি বলেন, আজ মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস। দিবসটি উপলক্ষে তাদের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে এর আগে চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া বেসরকারিভাবে পরিচালিত মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে বিনামূল্যে চিকিৎসা ক্যাম্প খোলা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে এর আগে ২৪ জুন সংস্থার উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামান এর নেতৃত্বে পরিদর্শক হাওলাদার মোঃ সিরাজুল ইসলাম, পারভীন আক্তার, মোঃ সাইফুর রহমান, নিরঞ্জন কুমার সিকদার এবং সিপাইগণ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে লিফলেট, পোস্টার, মাইকিং ও স্টিকার বিতরণ করেন। এছাড়া গত ১৯ জুন দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে শিশু-কিশোরদের মধ্যে বাংলাদেশ শিশু একাডেমীতে ৪টি গ্রুপে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার এবং বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে “ক ও খ” গ্রুপে দুইটি বিষয়ে “মাদকমুক্ত সুস্থ্য পরিবার, মাদকমুক্ত যুব সমাজ, খেলাধুলা : মাদকমুক্ত সুস্থ্য জীবন, মাদকমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা” এবং “সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে মাদক প্রতিরোধের গুরুত্ব” এর ওপর রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কারাগার ও মসজিদে মুসল্লিদের মাঝে জুম্মার খুৎবার পূর্বে মাদকবিরোধী জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।