মৈত্রী পাইপলাইন

প্রকাশঃ ২০২৩-০৩-২১ - ১৫:০৪

প্রধানত চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেল-গ্যাস-বিদ্যুতের দুর্মূল্য ও সংকটের মুহূর্তে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে পাইপলাইনে সরাসরি ডিজেল আমদানির বিষয়টি অবশ্যই ইতিবাচক। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এই কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন গত শনিবার। ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে দিনাজপুরের পার্বতীপুরের মেঘনা পেট্রোলিয়ামে সরাসারি আসবে এই ডিজেল। সে দেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অসমের নুমানিগড় রিফাইনারি থেকে ৬০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে আসবে এই তেল। উল্লেখ্য, এতদিন এই ডিজেল আসত ধাপে ধাপে, প্রধানত রেলপথে। ফলে একদিকে যেমন ব্যয় বেশি হতো, অন্যদিকে সময় লাগত বেশি। এখন সময় ও খরচ দুটোরই সাশ্রয় হবে। কমবে অপচয় ও দীর্ঘসূত্রতা।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এক বৈঠকে প্রতিবছর এক মিলিয়ন মেট্রিক টন জ্বালানি তেল পরিবহনে সক্ষম এই পাইপলাইন বসানোর অর্থায়নে সম্মত হন। প্রাথমিকভাবে বছরে প্রায় আড়াই লাখ টন এবং পরে পর্যায়ক্রমে ৪/৫ লাখ টন পর্যন্ত ডিজেল আমদানি করা হবে। চুক্তির আওতায় ভারত থেকে আপাতত ১৫ বছরের জন্য তেল কিনবে বাংলাদেশ। এর ফলে উত্তরবঙ্গের  ১৬ জেলাসহ দেশের মানুষ উপকৃত হবে। নিশ্চিত হবে জ্বালানি নিরাপত্তা ও প্রায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎপ্রবাহ। সচল থাকবে শিল্প-কারখানার উৎপাদন। ব্যবহৃত হবে কৃষি কাজেও। স্বস্তি আসবে জনজীবনে।  পাশাপাশি ভারত বাংলাদেশকে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য গম-চালসহ ৮টি নিত্যপণ্য নিয়মিত জোগান দিতেও সম্মত হয়েছে। পাইপলাইনে সরাসরি ডিজেল আমদানির বিষয়টি বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী ও উন্নয়নের আরও একটি মাইলফলক।

বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তীও পালিত হয়েছে ইতোমধ্যে। বিমসটেক করিডর ও সার্ক হাইওয়ের পর শুরু হয়েছে বিবিআইএন কার্যক্রম। এর ফলে বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও নেপালে আন্তঃবাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রভূত সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। বিগত ২৫ বছর ধরে আন্তঃবাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। এও সত্য যে, কম-বেশি আন্তঃবাণিজ্য চলছেও দেশগুলোর মধ্যে। সড়ক যোগাযোগও রয়েছে। চলছে রেলসংযোগের কাজও। পারস্পরিক সমঝোতা ও চুক্তির আওতায় যথাযথ অবকাঠামো ও পরিকাঠামো চূড়ান্ত হলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে আন্তঃবাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে বহুলাংশে, যাতে উপকৃত হবে প্রতিবেশী দেশগুলো।