আবু হোসাইন সুমন, মোংলা : ভাঙ্গন, কয়লা দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সুন্দরবন ও পশুর নদী রক্ষার দাবীতে মোংলায় নৌ র্যালী এবং সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী ক্লাইমেট চেঞ্জ এ্যাকশন ডে কর্মসূচীর অংশ হিসেবে পশুর রিভার ওয়াটারকিপার এবং ওয়াটাকিপার্স বাংলাদেশ’র আয়োজনে রবিবার দুপুরে মোংলার চিলা বাজার সংলগ্ন পশুর নদীতে এ নৌ র্যালী ও সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়। নৌ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পশুর রিভার ওয়াটারকিপার ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা’র মোংলার সমন্বয়কারী মোঃ নূর আলম শেখ। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন’র মোংলা শাখা সভাপতি শিক্ষাবিদ ফ্রান্সিস সুদান হালদার। এছাড়া সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইউপি সদস্য আব্দুল হালিম হাওলাদার, নারীনেত্রী গীতা হালদার, কমলা সরকার, মিনু হালদার, জেলে সমিতির সভাপতি রণজিৎ প্রামাণ্য, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা’র নাজমুল হক, পশুর রিভার ওয়াটারকিপার স্বেচ্ছাসেবক মারুফ শেখ, রাকেশ সানা ও ইমাম হোসেন। সমাবেশে বক্তারা বলেন, কয়লা এবং তেল দূষণ রোধ করতে না পারলে সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র এবং পশুর নদীর জলজ প্রাণী অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতির প্রভাবে সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পশুর নদীর পাড়ের প্রায় বিষ হাজার মানুষ ভিটে-মাটি ও ঘর-বাড়ী হারিয়ে আজ জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে আমাদের দাবী ঋণ চাই না, জলবায়ু ন্যায্যতা চাই। সমাবেশে বক্তারা পশুর নদীর ভাঙ্গনে যারা ঘর-বাড়ী হারিয়ে জলবায়ু উদ্বাস্তু হয়েছে তাদের মধ্যে সরকারি খাস জমি বরাদ্দ দেয়ার দাবী জানান। সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, সুন্দরবনের প্রাণ হচ্ছে পশুর নদী। ভাঙ্গন এবং দূষণে পশুর নদী ইতিমধ্যে তার জৌলুস হারিয়ে ফেলেছে। ইলিশ মৌসুমে এখন পশুর নদী ইলিশ শুণ্য হয়ে পড়েছে যেটা উদ্বিগ্নের বিষয়। অন্যদিকে সুন্দরবন প্রশ্নে সরকারি নির্লিপ্ততা ও সুন্দরবন বিনাশী কার্যক্রমে সারাদেশবাসীই উদ্বিগ্ন। সুন্দরবন রক্ষার আকুতি আজ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে ও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাজার হাজার বছরের পরিপূর্ণতায় যে অনন্য সুন্দরবন তৈরী হয়েছে তাকে সম্পদ, জলবায়ুর ছোবল ও পরিবেশ বিনাশী কোন কর্মকান্ড দ্বারা ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে দেওয়া যাবে না। এটি সময়ের দাবী, দেশবাসীর দাবী, সারা বিশ্বের দাবী। সভাপতির বক্তব্যে পশুর রিভার ওয়াটারকিপার মোঃ নূর আলম শেখ বলেন, সুন্দরবন কেবল বাংলাদেশের সম্পদ নয় এটি বিশ্ববাসীর সম্পদ। এর ক্ষতি করার কোন অধিকার আমাদের নেই। আমরা এই বনের গর্বিত অভিভাবক। এই গর্বের সাথে জড়িয়ে আছে বন রক্ষায় আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রতিঘাত মোকাবেলায় অক্ষত-সতেজ সুন্দরবন সুরক্ষার জন্য প্রবলভাবে উদ্যোগী হতে হবে। তিনি সুন্দরবন বিষয়ে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির প্রস্তাব সম্পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবী জানিয়ে বলেন, সুন্দরবনের উপর আরোপিত সকল অনিয়ম-অত্যাচার বন্ধ করতে হবে। ব্যতিক্রমী এ নৌ র্যালীতে কয়েক’শ জেলে জাল-দড়ি এবং নৌকা নিয়ে চিলা বাজারের পশুর নদীতে জড়ো হয়।