মোল্লাহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধিঃ মোল্লাহাটে একরাতে একই এলাকায় দুই মহিলার সম্ভ্রমহানির ঘটনা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পর ধামাচাপার কৌশল পরিবর্তন করেছে স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তি। এছাড়া ভীতসন্ত্রস্থ ভিকটিমরা অভিযোগ না করায় নিরব রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ/পুলিশ প্রশাসন। একজন বিধবা ও অপরজন প্রবাসীর স্ত্রীর জোর পূর্বক সম্ভ্রমহানির চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পার হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন ভ্রæক্ষেপ না করায় চরম হতাশা ব্যক্ত করেছে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীসহ সচেতন মহল।
উপজেলার আড়–য়াডিহি গ্রামের জঘণ্য ওই ঘটনার অনুসন্ধানকালে বিধবা ভিকটিমের চাচী শাশুড়ি (৬৫) জানান-গত বুধবার রাতে তার ভাসুরের ছেলের বউ অত্যন্ত গরীব-অসহায় বিধবা কিছু আনতে দোকানে যাচ্ছিলো, তখন রাস্তা থেকে ধরে বাগানে নিয়ে বিধবার ইজ্জত নষ্ট করে এই গ্রামের রজব আলী শেখের ছেলে রেজাউল শেখ (৩৫)। এরপর ওই রাতেই স্থানীয় মেম্বার মারুফসহ ছিকু (রাজু) মোল্লা ও আবু মোল্লা মিমাংসা করে। বিধবা মহিলাকে জোর করে মাত্র পাচ হাজার টাকা দিছে বলেও জানান তিনি। ওই রূপ তথ্যদেন আরো বেশ কয়েক নারী-পুরুষ। তবে, সকলেই বলেন-তাদের বিপদ হতে পারে এই সত্যকথা বলায়। কারন যারা মিমাংসার নামে এ ঘটনা ধামাচাপা দিচ্ছে তারা এলাকার শক্তিশালী।
বিধবা ভিকটিম জানান-তিনি জরুরী দরকারে দোকানে যাচ্ছিলেন, তখন রাস্তা থেকে তাকে টেনে একটি পরিত্যাক্ত বাড়ির বাগানে নিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যা-কিছু করে রেজাউল। একপর্যায়ে তার ছেলে ও দেবর ওই স্থানে পৌছে তাকে উদ্ধার করে। পরে তিনি বাড়ি এসে কাদছিলেন। এমন সময় তার এক চাচা শশুর (বড় বংশের এবং প্রভাবশালী) তিনি আসেন এবং তাকে নিয়ে রেজাউলের বাড়িতে যেতে চান। তখন যেতে রাজি না হওয়ায় তাকে লাথি মেরে এবং হত্যার ভয়-ভীতি দেখিয়ে নিয়ে যান ভিকটিমকে। সেখানে অনেক লোকের ভীড়ে দশ হাজার টাকায় মিট করেন। এরপর তাকে বাড়িতে আসার সুযোগ দেন। পরে বাড়িতে পাচ হাজার টাকা পৌছে দেন দুই মাতবর। টাকা রাখতে রাজি না হলেও জোর করে এবং ভয় দেখিয়ে রেখে যায় তারা। পরে ওই টাকা তুলে রেখেছেন বলেও জানান ভিকটিম।
ইউপি সদস্য মারুফ তার প্রথম দিনের বক্তব্য পাল্টে পুনঃবক্তব্যে জানান-সোমবার মিমাংসা হবে। একই কথা বলেন-ধামাচাপার কৌশল পরিবর্তনকারী আরো দুই মাতবর।
রেজাউলের মা লিপিয়া বেগম বলেন-রাতের ঘটনা রাতেই ফয়সালা হইছে, দশ হাজার টাকা দিছি, দশ হাজার টাকায় মেম্বার মারুফ মিটাইছে।
এছাড়া ওই একই রাতে রেজাউলের পাশের বাড়ির ঘটনায় শ্লীলতা-সম্ভ্রমহানির শিকার প্রবাসীর স্ত্রী (৩৫) জানান-তিনি তার পোষা মুরগীর খোজে বৃহস্পতিবার সন্ধায় পাশের বাড়ি যান। তখন ওই বাড়িতে অন্য কেউ না থাকার সুযোগে আলমগীর ফকিরের ছেলে শাহিন ফকির (২৫) তাকে টেনে ঘরের ভেতরে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ চেষ্টা করে। তিনি লোক-লজ্জায় উচ্চ স্বরে চিৎকার না করলেও ইজ্জত রক্ষায় ধস্তা-ধস্তি করেন। এভাবে প্রায় আধা ঘন্টা সময় পার হয়। একপর্যায়ে তার শাশুড়িসহ কয়েকজন এসে তাকে উদ্ধার করেন। ওই সময় লম্পট শাহিনকে তার তিন চাচি মিলে সরিয়ে দেয়। একই সময়ে শাহিনের পক্ষের কয়েক ব্যক্তি উল্টা তাকে (মহিলা) ধমকিয়ে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন। ওই ঘটনার বিচার দাবী করেন ভিকটিম।
শাহিনের চাচী ঝর্না, খুশি ও ববিতা বলেন-ওই মহিলার চরিত্র ভালোনা, আমাদের ওই ঘরে শাহিন একা থেকে লেখা-পড়া করে, ওই মহিলা নিজে এসে শাহিনের ঘরে ঢুকেছে, পরে তার শাশুড়িসহ কয়েকজনে তাকে নিয়ে গেছে। শাহিনের চাচী ববিতা আরো বলেন-ওই ঘটনায় তিনি নিজে তার পায়ের জুতা খুলে শাহিনকে পিটিয়েছেন। এরপর থেকে শাহিন আর বাড়ি নাই।
শাহিনের পিতা আলমগীর ফকির ০১৭২৪৪১৪৩০৮ নং মোবাইলে বলেন-আপনাদেরকে অনুরোধ করলাম সংবাদ না লেখার জন্য। খরচও দিতে চালাম, তাও নিতে রাজী হলেনা না, মানবিক কারনে না লেখা উচিত ছিলো। তিনি আরো বলেন-ওই মহিলা তার ছেলের ঘরে এসে উঠেছে এবং তার ছেলে অত্যন্ত ভালো। এর পূর্বে মেয়েলী এক ঘটনায় তার ছেলে জনতার হাতে মারপিটের শিকার হয়েছিলো কি-না ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বেশ পূর্বে ভান্ডারখোলা এলাকায় মারপিটের শিকার হয়েছিলো, তবে, তার ছেলের দোষ ছিলোনা। আলমগীর ফকির আরো বলেন-এঘটনা মিমাংসার জন্য তার এক নিকটাতœীয় এবং ওই মহিলার এক নিকটাতœীয় দয়িত্ব নিয়েছেন। তারা দুই জনই ঢাকাতে থাকেন বলেও জানান তিনি।
থানা অফিসার ইনচার্জ কাজি গোলাম কবীর বলেন-থানায় কোন অভিযোগ কেউ করে নাই, তবে, এ জঘণ্য ঘটনার বিচার হওয়া উচিৎ। বিষয়টি তিনি খোজ-খবর নিবেন বলেও জানান।