রবিউল ইসলাম মিটু,যশোর : দেশ ও জনগনের উন্নয়নের জন্য আবারও নৌকায় ভোট দিয়ে দেশবাসীকে সেবা করার সুযোগ চাইলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নয়ন হয়। মানুষ শান্তিতে থাকে। দেশের উন্নয়ন হয়। দেশের মানুষ শান্তিতে বসবাস করে। জনগনের উন্নয়ন হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে নির্দিষ্ট লক্ষ নিয়ে দেশ পরিচালনা করি। রোববার বিকেলে যশোর ঈদগাহ মাঠে যশোর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার হারানোর কিছু নেই। চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আপনাদের সেবা করতে চাই। এজন্য অতীতের মতো এবারও নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে জনসেবা করার সুযোগ দিবেন। শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। যশোরকে দেশের ডিজিটাল জেলা হিসেবে উদ্বোধন করা হয়েছে। এসময় তিনি তার সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে বিএনপি সরকারের শাসনামলের সমালোচনা করে বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশের মানুষের ভাগ্য বদলাতে শুরু করে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নয়ন হয়। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে খুন, গুম জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। আমরা উন্নয়ন চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা। কিন্তু ঘাতকরা সেই স্বপ্ন পূরণ করতে দেয়নি। পঁচাত্তর পরবর্তীতে জিয়া ক্ষমতা দখল করে। জিয়ার গণতন্ত্র ছিল যুদ্ধাপরাধীরে পুর্নবাসন আর প্রতি রাতে কারফিউ জারি করে দেশ শাসন। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে সারাদেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেয়, বাংলা ভাই এর আর্বিভাব ঘটে। দেশের টাকা বিদেশে পাচার হয়। দেশের সন্ত্রাসের রাম রাজত্ব কায়েম করে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট বিদেশীদের কাছে দেশের সম্পদ গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় গিয়েছিল। ক্ষমতায় গিয়ে দুর্নীতি ও লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছিল।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সর্বত্রই দুর্নীতি জড়িয়ে পড়ে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জিয়া পরিবারের দুর্নীতি সারা বিশ্বের মানুষ জানে। বিএনপির সময়ে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়। খালেদা জিয়ার দুই ছেলের বিদেশে টাকা পাচারের কথা আজ সবাই জানে। অথচ ওয়াল্ড ব্যাংককে ভুল বুঝিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ তোলে। আমি তখন তাদেরকে চ্যালেন্স ছুড়ে দিয়েছিলাম। ওয়াল্ড ব্যাংক সেই দুর্নীতির কোন প্রমাণ করতে পারেনি। অথচ নিজেদের টাকায় পদ্মাসেতু নির্মাণ করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের দুশাসনে ও জরুরি অবস্থায় আরও ৭/৮ বছর এদেশের মানুষের জীবন থেকে চলে যায়। তিনি বলেন, জাতির পিতা সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন। স্বাধীনতার ৪৬ বছরের ২৯ বছর চলেছে দুঃশাসন। কেবল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নয়ন হয়। আজকে যশোরের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড উদ্বোধন করেছি।
এসময় শেখ হাসিনা বলেন, এগুলো আপনাদের জন্য উপহার হিসেবে দিয়ে গেলাম। এছাড়াও আরও দেড় ডজন কাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করছি। এই কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন হবে। আমরা যেখানে উন্নয়ন করি, সেখানে বিএনপি জামায়াত জোট মানুষ হত্যা করে।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের প্রতিষ্ঠা করার জন্য জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। আর যুদ্ধাপরাধীর দায়ে যাদের ফাঁসি হয়েছে সেই জামায়াত নেতা আলবদরদের মন্ত্রী বানিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তাদের হাতে দেশের পতাকা তুলে দিয়েছিলেন। আপনারা সেই রাজাকারদের আবার ক্ষমতায় দেখতে যদি না চান তাহলে বঙ্গবন্ধুর নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় আনবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরি করার কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা স্বাস্থ্যসেবা আজ মানুষের দোর গোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। আমরাই প্রথমে এই কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরি করেছিলাম। খালেকা জিয়া ক্ষমতায় এসে সেই কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেন।
আওয়ামী লীগের কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, আমরাই কৃষকদের ১০টাকার বিনিময়ে ব্যাংকে একাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করেছি। কৃষি উন্নয়নের জন্য সার, বীজ অন্যান্য উপকরণের দাম কমিয়েছি। কৃষকদের হাতে মুঠোয় পৌছানোর ব্যবস্থা করেছি। বর্গাচাষীদের কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করেছি।
জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পীয়ুষ কান্তি ভট্টাচার্য, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, কেন্দ্রীয় নেতা এস.এম কামাল হোসেন, যশোর ৫ আসনের সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য, যশোর ২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. মনিরুল ইসলাম মনির, যশোর ৪ আসনের সংসদ সদস্য রণজিত রায়, যশোর ৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, যশোর ১ আসনের সংসদ সদস্য আফিল উদ্দিন, যশোর মাগুরা সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য কামরুন্নাহার লাইলা, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ আল স্বপন এমপি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান,যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. শ্রী বিরেন সিকদার, যশোর জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি জহুর আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ, সহ-সভাপতি আলহাজ্ব একেএম খয়রাত হোসেন, সহ-সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল খালেক, সাইফুজ্জামান পিকুল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মোহাম্মদ আলী রায়হান, বেনাপোল পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম লিটন, যশোর পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, যুবমহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ এমপি, জেলা যুবলীগের সভাপতি মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি অ্যাড. মোশারফ হোসেন, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি নাসির উদ্দিন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রওশন ইকবাল সাহী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান লাবু প্রমূখ। সঞ্চালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। মঞ্চে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক,আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী দিপু মনি, যশোর খুলনা সাতক্ষীরা, নড়াইল, মাগুরা, ফরিদপুর, ঝিনাইদহের আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্যরা।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য প্রমুখ। জনসভা সঞ্চালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। প্রধানমন্ত্রী যশোরে ২৮টি প্রকল্পের ফলক উন্মোচন করেন।
প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার সকালে যশোর বিমানবাহিনীর রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যোগদেন। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেন। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ৭৪তম বাফা কোর্স ও ডিরেক্ট এন্ট্রি ২০১৭ কোর্সের সালাম গ্রহন করেন।