যশোর অফিস: যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার রাজাপুর গ্রামে তিনফসলি জমিতে ইটভাটা নির্মাণের প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজাপুর, বর্ণি, বেজিয়াতলা ও মোহিনীকাটি গ্রামের কৃষকসহ সর্বন্তরের মানুষ আলু ক্ষেতে এ মানববন্ধন করে। ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধনে অংশ নেয়া শতাধিক মানুষ এসময় কৃষি বিভাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। তবে কৃষি কর্মকর্তার দাবি ফসলি জমিতে ইটভাটা হলেও বাধা দেবার এখতিয়ার নেই তাদের।
স্থানীয় বাসিন্দা ও কৃষক আব্দুল হান্নান বলেন, চারগ্রামের মানুষ রাজাপুর মাঠে ফসল ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। এ জমি সোনার জমি। ধান পাট, আলু, পেঁপে, শাক সবজি, ফুল যা লাগান তার ফলনই ভালো হয়। কিন্তুএকটি কুচক্রী মহল পতিত জমি দেখিয়ে এখানে ইটভাটা করতে চায়। জীবন থাকতে এখানে ইটভাটা করতে দেয়া হবে না।
রবিউল ইসলাম নামে অপর এক কৃষক বলেন, আমাদের বাপ-দাদারা চাষা মানুষ। সোনার জমিতে সোনার ফসল ফলিয়েছেন। তাই খেয়ে বড় হয়েছি। ফসল ফলিয়ে ছেলে মেয়েকে লেখাপড়া করাচ্ছি। সেই জমির পাশে ইটভাটা হলে প্রাণে মরে যাবো। আমাদের দাবি সরকার এ ইটভাটা বন্ধে কার্যকরি উদ্যোগ নিক।
মানববন্ধনে অংশ নেয়া কামাল হোসেন নামে এক কৃষক বলেন, তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা করতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ছাড়পত্র দিয়েছে বলে শুনেছি। আমরা হতবাক যে সরকার কৃষি উৎপাদন বাড়াতে উৎসাহ দিচ্ছে আর একজন কৃষি কর্মকর্তা তার উল্টো কাজ করছেন। তিনি বলেন, ইটভাটা বন্ধের পাশাপাশি ও কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।
হারুন মিয়া নামে অপর এক কৃষক বলেন, ইটভাটা করার জন্য রাজাপুর মাঠের প্রায় ৮০ বিঘা জমি লিজ নেয়ার চেষ্টা করছে আব্দুর রাজ্জাক ও তার সহযোগীরা। ইতিমধ্যে তারা কিছু জমির মালিককে বাৎসরিক লিজের প্রায় দ্বিগুন টাকা দিয়ে জমি গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, এ মাঠে এক বিঘা কৃষি জমি বাৎসরিক ১২ হাজার টাকায় লিজ দেন জমির মালিকরা। আব্দুর রাজ্জাক সেই জমি ২২ হাজার টাকায় লিজ নিচ্ছেন এবং বাড়ি করতে ইট দেবার প্রলোভনও দিচ্ছে। হারুন মিয়া বলেন, এ মাঠে ইটভাটা হলে প্রায় ৫শ’ একর জমির ফসল আবাদে প্রভাব ফেলবে এবং উৎপাদন কমে যাবে।
মানববন্ধনের খবর পেয়ে স্থানীয় পানিসারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নওশের আলী ছুটে আসেন। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের এলাকায় ধান-পাট, সবজি, ফুল ভালো উৎপাদন হয়। এ অঞ্চলের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য দিয়ে নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করে। যার জন্য এ অঞ্চলের সুনামও রয়েছে। ফলে এখানে কোনভাবেই ইটভাটা করতে দেয়া হবে না।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার দীপঙ্কর দাশ বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ইটভাটার লাইসেন্স নিতে আবেদন করায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে কৃষি অফিসে প্রতিবেদন চাওয়া হয়। আমরা রিপোর্ট দিয়েছি যে, যে জমিতে ইটভাটা করতে চাওয়া হচ্ছে সেই জমি দুই ও তিন ফসলি। এখন জেলা প্রশাসক ইটভাটার অনুমতি দেবেন কিনা সেটা তার ব্যাপার।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইটভাটা হলেও আইনত কৃষি কর্মকর্তার বাধা দেবার কোন এখতিয়ার নেই। একইসাথে উৎকোচ নিয়ে ইটভাটার পক্ষে থাকার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুল ইসলামের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভি করেনি।
যশোর কৃষি সম্প্রষারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী হাবিবুর রহমান বলেন, ফসলি জমিতে ইটভাটা হবে কী হবে না তা জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর বুঝবে। আমরা প্রতিবেদন দিয়ে দিয়েছি। আমাদের পক্ষে বাধা দেবার কোন সুযোগ নেই।