যশোর অফিস : যশোরে আমন চাল সংগ্রহে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সংগ্রহের নীতিমালা উপেক্ষা করে জেলা খাদ্য কর্মকর্তা সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে ইতোমধ্যে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট একাধিকসুত্র নিশ্চিত করেছে। বিভাজনে অনিয়ম ও অতি নিম্নমানের চাল সংগ্রহ করে তিনি অবৈধ উপার্জনের বিষয়টি সম্পাদন করছেন। আর সংগ্রহ কমিটির নাম ভাঙ্গিয়ে তা জায়েজ করা হচ্ছে। পুনরায় অতিরিক্ত বরাদ্দ আসা ৩ হাজার মেট্রিক টন চাল ক্রয় বাবদ আরও প্রায় ১ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পায়তারা করছেন। এতে সংশ্লিষ্ঠ বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তা ও চালকল মালিকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে আমন চাল সংগ্রহ উপলক্ষে যশোরে ৮ উপজেলায় ২১শ’ ৯৩ মেট্রিক টন বরাদ্দ আসে। ঐ চাল সদরে ৩শ’৪৩ মেট্রিক টন,শার্শা ২শ’৪৮,অভয়নগর ১শ’৫৮,ঝিকরগাছা ২শ’৩০, কেশবপুরে ৩শ’২৬, মণিরামপুর ৭শ’৯, চৌগাছায় ১শ’৭০ ও বাঘারপাড়ায় ৯০মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। বিগত বছরের ১২ ডিসেম্বর যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চাল সংগ্রহ কমিটির মিটিংয়ে ঐ চাল ক্রয়ের সিন্ধান্ত নেয়া হয়। ঐ মিটিংয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক মো.আশরাফ উদ্দিনের সভাপতিত্বে সিন্ধান্ত হয়, চাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিভাগীয় নীতিমালা অনুসরণ করা হবে। কিন্তু সেই নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেনি জেলা খাদ্য কর্মকর্তা নকীব সাদ সাইফুল ইসলাম। তিনি চালকল মালিকদের চুক্তির জন্য জেলা অফিসে ডেকে নিয়ে আসেন। তারপর সংগ্রহ কমিটি ও উদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের কেজি প্রতি দুই টাকা উৎকোচ না দিলে চুক্তি হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। বাধ্য হয়ে চালকল মালিকরা উৎকোচের বিনিময়ে চুক্তি সম্পাদন করেন।
সুত্র বলছে, খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডি এবং উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার মাধ্যমে চালকল মালিকরা সরকারের সাথে চুক্তি সম্পাদন করবেন। জেলা খাদ্য কর্মকর্তা শুধু অনুমোদন দেবেন। কিন্তু আমন চাল সংগ্রহে জেলা খাদ্য কর্মকর্তা নিজেই চালকল মালিকদের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদন করে ফেলেছেন। তিনি অফিসের বসেই চালকল মালিকদের কাছ থেকে ১ম দফায় টন প্রতি ২ হাজার টাকা হারে প্রায় ৪৪ লাখ টাকা উৎকোচ গ্রহণ করেন বলে অভিযোগ করেছে একাধিক চালকল মালিক। এর পর দ্বিতীয় দফায় আরও অতিরিক্ত ৩শ’মেট্রিক টন চাল ক্রয়ের নির্দেশনা আসলে জেলা খাদ্য কর্মকর্তা উৎকোচের রেট আরও বাড়িয়ে দেন। কেজি প্রতি ৪ টাকা হারে গোপনে তিনি ঐ চাল যশোর সদর উপজেলার রুপদিয়ায় ৫০ মেট্রিক টন, কেশবপুরে ১শ’ ও চৌগাছায় ১শ’৫০ মেট্রিক টন করে মোট ১২ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন। সংগ্রহ কমিটির একটি সুত্রে জানা গেছে, অতিরিক্ত চাল ক্রয়ের নির্দেশনা আসলে সংগ্রহ কমিটির সভাপতির অনুমতি সাপেক্ষে চালকল মালিকদের নোর্টিশ দিয়ে জানাতে হবে। কিন্তু সংগ্রহ কমিটির সভাপতি যশোরের জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়াই চালকল মালিকদের নোর্টিশ না দিয়ে জেলা খাদ্য কর্মকর্তা উৎকোচ নিয়ে ঐ চাল বিক্রি করে দিয়েছেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর জেলা খাদ্য কর্মকর্তা সাংবাদিকদের কাছে অতিরিক্ত ৩শ’টন বরাদ্দ আসার বিষয়টি অস্বীকার করছেন। তবে ঐ অতিরিক্ত বরাদ্দ পাওয়া কথা স্বীকার করছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার খাদ্য কর্মকর্তারা। রুপদিয়া খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা আব্দুল জলিল বলেন, দ্বিতীয় দফায় তার স্টেশনের চালকল মালিকরা ৫০ টন অতিরিক্ত চাল বরাদ্দ পেয়েছেন। একইভাবে অতিরিক্ত বরাদ্দ পাওয়ার কথা স্বীকার করছেন কেশবপুর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান এবং চৌগাছা উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা সালমা চৌধুরী।
সুত্র বলছে, তৃতীয় দফায় আরও অতিরিক্ত ৩ হাজার মেট্রিক টন চাল ক্রয়ের নির্দেশনা এসেছে। এতে জেলা খাদ্য কর্মকর্তা নকীব সাদ সাইফুল ইসলামের পোয়াবারো অবস্থা হয়েছে। ঐ ৩ হাজার মেট্রিক টন চাল ক্রয় বাবদ আরও প্রায় ১ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য বিভিন্ন উপজেলার চালকল মালিকদের তার অফিসে ডেকে নিয়ে এসে উৎকোচের দর কষাকষি করছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা খাদ্য কর্মকর্তার রুমে চালকল মালিকদের ভিড় লেগে আছে। হচ্ছে টাকা লেনদেন।
সুত্র বলছে, সরকারের ক্রয়কৃত খাদ্যশস্যে গুনগতমান যাচাই বাছাইয়ের জন্য বৃহত্তর যশোরের ৪ জেলায় হাফিজুর রহমান নামে একজন কারিগরি খাদ্য নিয়ন্ত্রক রয়েছেন। জেলা খাদ্য কর্মকর্তা ওই কারিগরি খাদ্য নিয়ন্ত্রককে ম্যানেজ করতে ইতোমধ্যে কেশবপুর উপজেলার খাদ্য কর্মকর্তার পদ খালি থাকায় তাকে সেখানে ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকতার হিসাবে অতিরিক্ত দায়িক্ত দিয়ে রেখেছেন। কারিগরি খাদ্য কর্মকর্তার কাজ খাদ্যের গুণগত মান যাচাই করা। তিনিই যদি খাদ্য ক্রয় করেন তার মান যাচাই করবে কে? একাধিক চালকল মালিকের অভিযোগ, জেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে অনৈতিক সবিধা দিতেই তারা অতি নিম্নমানের চাল সবরাহ করতে বাধ্য হচ্ছে। তারা জেলা খাদ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ঠ অধিদপ্তরের উদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে যশোরের খাদ্য কর্মকর্তা নকীব সাদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। কোন টাকা লেনদেন হচ্ছে না। আমাদের অগোচরে কেউ নিম্নমানের চাল সবরাহ করতে পারে।’
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ডক্টর এম এ মহাসিনের মোবাইল ফোন নাম্বারের একাধিকবার কল করা হলে তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।