যশোর : যশোরের কিসমত রাজাপুরের মেম্বর রেজাউলের যৌণ নিপীড়ণের কারণে গৃহবধূ মুক্তা পারভীন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন বলে ডিসি এসপির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। আর এ অভিযোগটি তদন্তে মাঠে নেমেছে থানা পুলিশ। থানাকে অবহিত না করিয়েই কিসমত রাজাপুরের বাসিন্দা পুলিশ সদস্যের স্ত্রীর লাশ দাফন ও আত্মহত্যার ঘটনায় শ্বশুর মেম্বর রেজাউল ইসলামকে নোটিশ করা হয়েছে থানার পক্ষে। তদন্তে উঠে আসছে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছে চাউর করা হলেও গৃহবধূকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি না করে কেন ভর্তি করা হল দড়াটানা প্রাইভেট হাসপাতালে। স্বামী পুলিশ সদস্য সাদ্দাম হোসেন ঢাকায় কর্মরত থাকার সুযোগে শ্বশুর রেজাউল ইসলাম বউমার উপর নানামুখি নির্যাতন চালানোর যে অভিযোগ এসেছে সে ব্যাপারেও খোঁজ খবর নিচ্ছেন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই দেবাশীষ। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, দেড় বছর আগে যশোরর কিসমত রাজাপুরের মেম্বর রেজাউল ছেলে ঢাকায় কর্মরত পুলিশ কন্সটেবল সাদ্দামের সাথে বিয়ে হয় মাগুরা শালিখা উপজেলার ছয়ঘরিয়া গ্রামের মতিয়ার রহমান ঢালীর মেয়ে মুক্তা পারভীনের। আর বিয়ের পর স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভাল সম্পর্ক তৈরী হয়। এরপর অল্প কয়েকদিন পরে ছেলে পুলিশ কন্সটেবল ঢাকায় কর্মক্ষেত্রে চলে যান। দু’মাস তিন মাস পর পর সাদ্দাম বাড়িতে আসতে থাকেন। আর বাড়িতে গৃহবধূ মুক্তা পারভীন ও স্ত্রী বিয়োগ হওয়া শ্বশুর রেজাউল ইসলাম বসবাস করতে থাকেন। কিন্তু প্রতিনিয়তই শ্বশুর রেজাউল কারণে অকারণে গৃহবধূর উপর নির্যাতন চালাতে থাকেন। এমনকি গৃহবধূর উপর যৌন নীপিড়ণও চলতে থাকে। এরই এক পর্যায়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর সকালে মুক্তা পারভীন বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। এসময় ধুরন্ধর শ্বশুর রেজাউল ইসলাম তাকে সকরারি হাসপাতালে না নিয়ে ছল চাতুরি করে নিয়ে যায় খাজুরার তানিয়া মেডিকেলে। সেখানে আলোচিত কোয়াক ডাক্তার আব্দুল লতিফ তাকে ওয়াস করান। কিন্তু মুক্তার অবস্থার অবনতি হওয়া শুরু করলে হাল ছেড়ে দেন কোয়াক আব্দুল লতিফ। এরপর রেজাউল মেম্বর বউমাকে নিয়ে আসেন যশোর দড়াটানা প্রাইভেট হাসপাতালে। পাশেই যশোর মেডিকেল হাসপাতাল থাকতেও তিনি পাশে দড়াটানার হাসপাতালে ভর্তি করান বউমাকে। সেখানে গোপনে দুদিন চিকিৎসাধীন রাখেন রেজাউল। এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর তার মৃত্য হয়্। এদিকে এই মৃত্যু ঘটনা পুলিশকে গোপন করে রেজাউল। তিনি মেয়ের পিতা মতিয়ার ঢালী ও কয়েকজনকে খবর দিয়ে নিয়ে আসেন দড়াটানা প্রাইভেট হাসপাতালে। সেখান থেকে নানা ভয় ভিতী দিয়ে থানা পুলিশ না করতে ও মামলা না করতে চাপ দিয়ে লাশ দিয়ে বাড়ি চলে যেতে বলেন। উপায় না পেয়ে মেয়ের লাশ নিয়ে বাড়ি যান পিতা মতিয়ার ঢালী। আর মেম্বর রেজাউলের হুমকিতে পুলিশকে না জানিয়ে লাশ দাফন হয়ে যায়। এদিকে এতসব অন্যায় সহ্য করতে না পেয়ে মেরে পক্ষ বিভিন্ন মহলে মনের ক্ষোভ প্রকাশ করলে এনিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। বিষ খাওয়া রোগী হলেও যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলনা। নিয়ে যাওয়া হল উল্টো খাজুরায় এবং পরে আনা হল যশোর দড়াটনা হাসপাতালে। এমনকি পুলিশে খবর দেয়া হলনা। এসব বিষয় সামনে আনলে মুক্তার মৃত্যুর কারণ শ্ব্শুর রেজাউল এটা পরিস্কার হয়। স্বামী পুলিশ সদস্য সাদ্দাম থাকেন ঢাকার রাজারবাগ আর বাড়িতে থাকতেন ১৫ বছর আগে স্ত্রী হারা রেজাউল ইসলাম ও গৃহবধূ মুক্তা। এলাকায় খোঁজ নিলে মুক্তার উপর চলা নিরব নির্যাতন কাহিনীর তথ্য মিলবে বলে স্থানীয়দের দাবি। মুক্তার আত্মহত্যার মূল রহস্য উদঘাটান ও পুলিশকে না জানিয়ে লাশ দাফনের হেতু বের করার দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসক ওপুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। আর অভিযোগটি তদন্তে করতে থানায় দেয়া হলে এসআই দেবাশীষ তদন্ত শুরু করেছেন। এব্যাপারে এসআই দেবাশীষ জানান বিষ খাওয়া রোগী হলেও যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি না করে উল্টো খাজুরায় এবং পরে যশোরের দড়াটনা হাসপাতালে ভর্তির ঘটনা প্রমাণ করে নিঃসন্দেহে শ্বশুর রেজাউল দোষী। এব্যাপারে শ্বশুরের রেজাউল ইসলামকে নোটিশ করা হয়েছে। এছাড়া তদন্ত চলছে। তবে মেয়ে পক্ষ আত্মহত্যায় শ্বশুর জড়িত এমন অভিযোগ করছেনা। এদিকে রাজাপুরের একটি সূত্র জানিয়েছে মূলত মেয়ে পক্ষকে প্রথমে ভয় দেখানো হয়েছে। পরে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা হয়েছে। রেজাউল মেম্বর একটি রাজনৈতিক দলের সেল্টার নিয়েছে। আর মেয়ের বাড়ি মাগুরার ছয় ঘরিয়ায় হওয়ায় সেখানকার এক চেয়ারম্যানকেও ম্যানেজ করেছে রেজাউল। সেখানে দু’লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে বলেও সূত্রটি জানিয়েছে।