ইউনিক প্রতিবেদক, মোংলা, বাগেরহাট :
বাগেরহাটের রামপাল সরকারি কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও বর্তমান সহকারী অধ্যাপক সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রায় অর্ধকোটি আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ওই কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রেবেকা সুলতানা সংশ্লিষ্ট উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে জানা গেছে, জৈষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ৪ জন সিনিয়র সহকারী অধ্যাপককে ডিংগিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সাইদুর রহমান বনে যান ওই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। এভাবে তিনি ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর থেকে থেকে ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপর এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে নানা ধরণের অভিযোগ উঠলে জৈষ্ঠ সহকারী অধ্যাপক দ্বীনবন্ধু পালের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। তার সময় কালের মধ্যে বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দ্বীনবন্ধু পাল তা নিয়ে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক ও তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তুষার কুমার পালের নির্দেশে একটি অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এজন্য ওই কলেজের সহকারি অধ্যাপক শেখ ইস্রাফিল হোসেনকে আহবায়ক করে ও প্রভাষক সঞ্জয় কুমার পাল, নিরুপম কুমার পাল ও জীবনদ্যূতি চক্রবর্ত্তীসহ ৪ সদস্যের কমিটি দীর্ঘ সময় ধরে অভ্যন্তরীণ অডিট সম্পন্ন করেন। অডিট প্রতিবেদনে দেখা যায়, সাইদুর রহমান বেশ কয়েকটি খাত থেকে ৪৪ লাখ ৮৮ হাজার ৮৯৪ টাকা আত্মসাত করেন। ১ থেকে ২২ নম্বর রশিদ বইয়ের মাধ্যমে টাকা আদায় করা হয় ৫১ লাখ ২ হাজার ৮৮২ টাকা। টাকা গ্রহণ করা হয়েছে কিন্তু রশিদ পাওয়া যায়নি যথাক্রমে ক-অংশ-এইচএসসি সাধারণ শাখা-৩ লাখ ৭৪ হাজার ৭১৫ টাকা, খ-অংশ এইচএসসি (বিএম) শাখা ৮ লাখ ৩৪ হাজার ৯০০ টাকা ও গ-অংশ স্নাতক পাস শাখার ৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৪৩ টাকা। তার সময়কালের মধ্যে কলেজের আয় হয়েছে মোট ৬৭ লাখ ৫৩ হাজার ৪০ টাকা। ব্যায়ের পরিমাণ মোট ২২ লাখ ৬৪ হাজার ১৪৬ টাকা। তিনি ৪৪ লাখ ৮৮ হাজার ৮৯৪ টাকার কোন হিসাব দিতে পারেননি যা নিরিক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ওই প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদনের বাইরেও তিনি ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এরমধ্যে কয়েক দফায় টিউশন ফি’র প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও অন্যান্য ফি বাবদ ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার কোন হদিস মিলছে না। এছাড়াও হিসাব বহির্ভূতভাবে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। ওই কলেজের অন্যান্য অধ্যাপকেরা বলেন, এই কলেজটি একটি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ। কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে বেশ সুনামের সাথে অন্যান্য অধ্যক্ষরা দায়িত্ব পালন করেন, কিন্তু সাইদুর রহমান দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আর্থিক অনিয়ম হওয়ায় সকলে হতাশা প্রকাশ করেন। তারা দাবী করেন সরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে যথাযথ তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
অভিযোগের বিষয়ে সাইদুর রহমানের সাথে কথা বলার জন্য কলেজে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। এছাড়া তার মোবাইলে (০১৭২১৭৫৮৪১৭) একাধিকবার যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রেবেকা সুলতানা সাইদুর রহমানের আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার কলে বলেন, আমাদের কলেজে সরকারিভাবে নিরীক্ষা শুরু হয়েছে। তার দায়িত্ব পালনের সময়ে যে আর্থিক অনিয়ম হয়েছে তার দায় কলেজ কর্তৃপক্ষ নিবে না। আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দিয়েছি।
এ বিষয়ে রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কবীর হোসেন বলেন, এ ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি এবং সংশ্লিষ্টকে নোটিশও করা হয়েছে। অভিযোগের তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।