* ৪০ দিনে আক্রান্ত সংখ্যা ৪৯৩ : নিউমোনিয়ায় মৃত্যু ৮
* দিনে বাড়ছে তাপমাত্রা সন্ধ্যায় কম
* ৯ তলা ভবন নির্র্মাণের উদ্যোগ
কামরুল হোসেন মনি : দিনের বেলায় তাপমাত্রা ৩৩ দশমিক ৪ ডিঃ সেঃ থাকলে সন্ধ্যায় নেমে আসে ২৮-২৯ ডিঃ সেঃ। আবহাওয়ার এই পরিস্থিতির মধ্যে শিশু হাসপাতালে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ৪০ দিনে এ হাসপাতালে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত ভর্তি শিশুর সংখ্যা ৪৯৩। এর মধ্যে নিউমোনিয়ায় মারা গেছে ৮ শিশু। রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ভর্তি করাতে না পেরে অভিভাবকদের হাহাকার।
এদিকে খুলনার আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ রোববার দুপুরে এ প্রতিবেদককে বলেন, দিনের বেলায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে সন্ধ্যায় গড়ে ৫ ডিঃ সেঃ কমে আসে। ঘন্টায় ঘন্টায় তাপমাত্রা ওঠানামা করছে।
খুলনা শিশু হাসপাতালের সূত্র মতে, চলতি বছরের আগস্ট থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিশু ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তির সংখ্যা ৪৯৩। এর মধ্যে আগস্ট মাসে ডায়রিয়া ২৩৭ ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ১৩০ শিশু। এ সময়ে মধ্যে নিউমোনিয়ায় ৭ শিশু মারা যায়। এছাড়া ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডায়রিয়া ৭২ ও নিউমোনিয়ায় ৫৪ শিশু ভর্তি করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে বিভিন্ন কারণে শিশুর মৃত্যুর সংখ্যা ৯। এর মধ্যে নিউমোনিয়া মারা যায় ১ শিশু। শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে দিনের বেলায় গরমের তীব্রতা ও রাতের বেলায় ঠা-ার ভাব এরকম পরিস্থিতির কারণে এ সময়ে শিশুদের ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত সংখ্যা বেড়েইে চলেছে। প্রতিদিন ওই হাসপাতালে বহিঃবিভাগে ৬শ থেকে ৭শ শিশুকে অভিভাবকরা চিকিৎসা করাতে আসছেন। যার মধ্যে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও সর্দি-জ্বর আক্রান্ত সংখ্যা বেশি। রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় বেড স্বল্পতার কারণে অনেক শিশুকে ভর্তি করতে পারছেন না। অনেক অভিভাবক অন্য হাসপাতালে সাময়িকভাবে চিকিৎসা দিলেও শিশু হাসপাতালে এসে ভর্তির জন্য খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।
খুলনা শিশু হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ কামরুজ্জামান রোববার এ প্রতিবেদককে বলেন, শিশু ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দি-জ্বর রোগী বেশি আসছে। প্রতিদিন আউটডোরে ৬শ থেকে ৭শ শিশুকে তাদের অভিভাবকরা এনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেক শিশুকে ভর্তির দরকার হলেও বেড স্বল্পতার কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠছে না। এর পাশাপাশি রয়েছে অক্সিজেন সঙ্কট। ২০ দিন ধরে রোগীর চাপের এমন পরিস্থিতি চলছে। তিনি বলেন, খুলনা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের প্রতি এ হাসপাতালটি আস্থার স্থলে পরিণত হয়েছে। যার কারণে আগের চেয়ে কয়েকগুণ শিশু এ হাসপাতালে সেবা নিতে আসছে। এ কারণে ইতোমধ্যেই এই হাসপাতালে আরও ৯ তলা বিশিষ্ট আরও একটি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। হাসপাতালের কমিটিতে এ প্রস্তাবনা পাস হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার জায়গা পরিদর্শন করে গেছেন। খুব শিগগিরই এটার ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হবে। তিনি বলেন, শিশুর ডায়রিয়া হলে ৬ মাসের নিচের বাচ্চাদের বুকের দুধ কোনো মতে খাওয়ানো বন্ধ করা যাবে না। বিশুদ্ধ পানি বেশি করে পান করাতে হবে। জ্বর হলে ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার আগে মুছে দিতে হবে। জ্বর যদি ১০১-১০২ ডিগ্রি তাপমাত্রা ওঠে তাহলে সিরাপ দিন। এর বেশি হলে সাপেসেটার দিতে হবে।
খুলনার আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ রোববার এ প্রতিবেদককে বলেন, দিনে সকাল ৬টায় যদি তাপমাত্রা ২৮-২৯ ডিঃ সেঃ থাকে দুপুর ১২টার মধ্যে দেখা যাচ্ছে তাপমাত্রা ৩৩ দশমিক ৪ ডিঃ সেঃ উঠে গেছে। সন্ধ্যায় আবার দেখা গেছে তাপমাত্রা কমে গিয়ে ২৮-২৯ ডিঃ সেঃ চলে আসছে। তার দেওয়া তথ্য মতে, ৫ সেপ্টেম্বর খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৪ দশমিক ডিঃ সেঃ, ৬ সেপ্টেম্বর ৩০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেঃ, ৭ সেপ্টেম্বর ৩২ দশমিক ৪ ডিঃ সেঃ, ৮ সেপ্টেম্বর ৩৪ দশমিক ডিঃ সেঃ এবং রোববার বেলা ৩টা ছিলো সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৪ দশমিক ৫ ডিঃ সেঃ ও সর্বনি¤œ ছিলো ২৬ দশমিক ২ ডিঃ সেঃ। রোববার খুলনায় দমকা থেকে ঝড়ো হওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ওই আবহাওয়াবিদ জানান।
শিশু হাসপাতালে শিশুপুত্র অমৃত (৬ মাস)। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুটির পিতা নারায়ণ দাস তাকে এ হাসপাতালে ভর্তি করান। নারায়ণ দাস এ প্রতিবেদককে বলেন, তার শিশুপুত্রকে এর আগে এ হাসপাতালে ৪-৫ দিন আগে ৯ দিন ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা সেবা নেন। তিনি বলেন, প্রথমে এখানে ভর্তি করাতে না পেরে অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রতিদিন এসে খোঁজ নিতাম সিট খালি আছে কিনা। ২-৩ দিন পর সিট খালি পেয়ে ৫ সেপ্টেম্বর এখানে ভর্তি করানো হয়।