কামররুল হোসেন মনি : আজ ২২ অগ্রহায়ণ। দিন যতই যাচ্ছে রাতের তাপমাত্রা কমে আসছে। গত এক দিনের ব্যবধানে খুলনায় তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলিসিয়াস কমেছে। ঠান্ডা বেড়ে যাওয়ার কারণেই শিশুরা ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। গড়ে প্রতিদিন ১৫-২০ শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। বেড স্বল্পতার কারণে খুলনা শিশু হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন ১০-১৫ রোগী ফেরত যাচ্ছে।
খুলনা আবওয়া অফিস জানায়, মঙ্গলবার খুলনায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিলো ১৪ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বোচ্চ ২৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলিসিয়াস।
খুলনার আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ মঙ্গলবার রাতে বলেন, দিনই যতই যাবে রাতের তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে। তার দেওয়া তথ্য মতে, সোমবার খুলনায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিলো ১৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার খুলনা বিভাগের মধ্যে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিলো চুয়াডাঙ্গায় ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বুধবার খুলনা শিশু হাসপাতালে দেখা যায়, শিশুরা ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তাদের অভিভাবকরা এ হাসপাতালে নিয়ে আসছেন। অনেকেই বেড খালি না পেয়ে অন্যত্র চিকিৎসার জন্য বাচ্চাদের নিয়ে যাচ্ছেন।
হাসপাতালের সূত্র মতে, গত ২৭ নভেম্বর থেকে গত ৩ ডিসেম্বর শুধুমাত্র ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে শিশু রোগী ভর্তি ছিলো ১১৩ জন। এ সময়ে নিউমোনিয়ায় শিশু রোগী ছিলো ২৮ জন। গত নভেম্বর মাসে শুধু ডায়রিয়া আক্রান্ত ৪৩২ শিশুকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। নগরীর মীরেরডাঙ্গা সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালেও গত ১০ দিনের ব্যবধানে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বয়স্কদের পাশাপাশি শিশুরাও ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে এ হাসপাতালে সেবা নিতে আসছেন।
খুলনা শিশু হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ কামরুজ্জামান মঙ্গলবার বলেন, গত ১০-১২ দিনের ব্যবধানে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশুরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। গড়ে প্রতিদিন ৫০-৬০ জন রোগীর মধ্যে ৩০ ভাগই ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। বেড স্বল্পতার কারণে প্রতিদিন ১০-১৫ জন রোগীকে ফেরত দিতে হচ্ছে। কেবিন থেকে শুরু করে কোনো বেডই খালি নেই বর্তমানে।
খুলনা শিশু হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ সৈয়দ ইমতিয়াজ আহমেদ (এমও) বলেন, ঠা-া যখন আসা শুরু করে তখন বিভিন্ন ইনফেকশনের কারণে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে শিশুরা আক্রান্ত হয়। ব্যাকটেরিয়াল ভাইরাল ও প্যারাসাইটিক্যাল ইনফেকশনের জন্য শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। ৬ মাসের শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে মায়ের বুকের দুধ বন্ধ করা যাবে না। শুধুমাত্র মায়ের দুধই চলবে। ৬ মাসের ওপরে বয়স হলে মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি কাঁচকলা ভর্তা, চিড়ের পানি ও ওরস্যালাইন খাওয়াতে হবে। বাচ্চা যদি ৫-৬ ঘন্টা পর পর প্রস্রাব করে তাহলে বুঝতে হবে শিশুটির পানি শূন্যতা নেই। যদি প্রস্রাব না করে, বাচ্চাটি নিস্তেজ হয়ে যায় ও পানি খেতে না চায় তাহলে অতি দ্রুত নিকটতম হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দেন তিনি। বর্তমানে নিউমোনিয়ার চেয়ে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি পাওয়া যাচ্ছে বলে ওই চিকিৎসক উল্লেখ করেন।
সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের ডাঃ হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতিদিন গড়ে ১০-১৫ জন ডায়রিয়া রোগী আসছে। এর মধ্যে শিশু ৩-৪ জন রয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে এ সব রোগীর চাপ বেড়েছে। শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় শিশুদেরকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করছি।