সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের বহুল আলোচিত দুর্নীতিবাজ প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এও) এসএম মাহাবুববর রহমান অবশেষে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন। জেলা পরিষদের পুকুর ও খেয়াঘাট ডাকে অনিয়মসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে বৃহষ্পতিবার বিকাল ৪ টায় পরিষদের সভায় সদস্যদের চাপের মুখে পড়ে তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগের ঘোষনা দেন।
এক পর্যায়ে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত পদত্যাগ পত্রটি জমা দেন। প্রধান নির্বাহীর পক্ষে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সহকারী শাহানা পারভিন পদত্যাগ পত্রটি গ্রহন করেন। তার স্বেচ্ছায় চাকরী থেকে পদত্যাগের বিষয়টি সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ একাধিক সদস্য নিশ্চিত করেছেন।
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য অ্যাড. শাহানাজ পারভিন মিলি জানান, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুবর রহমানকে বিগত জেলা পরিষদ নির্বাচনের পরদিন স্থানীয়রা অফিসে এসে লাঞ্ছিত করে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে তার বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত আব্দুর রউফ কমপ্লেক্সে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে জেলা পরিষদের টাকা খরচ করার অভিযোগে তদন্ত হয়। বর্তমানে তার দুর্নীতির তদন্তে নেমেছ দুদক। বদলি সংক্রান্ত হাইকোর্টের খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে মাহাবুবর রহমান সুপ্রিম কোর্টে গেলে কোন সুবিধা করতে না পেরে আবারো বহাল থাকেন সাতক্ষীরা অফিসে।
তিনি আরো জানান, শ্যামনগরের নওয়াবেকী খেয়াঘাট ইজারার নামে ছয় লাখ টাকা নেওয়াসহ বিভিন্ন খেয়াঘাট ও পুকুর ইজারা দেওয়ার নাম করে বহু টাকা নিয়ে তিনি তার ব্যক্তিগত খরচ করেছেন এমন বিষয় জানতে পেরে বৃহষ্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে সদস্যদের সঙ্গে তার বচসা হয়। এসময় তার উপর চড়াও হলে তিনি ক্ষমা চেয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। একপর্যায়ে বিকেল ৪ টায় জেলা পরিষদেও সভা চলাকালিন সদস্যদের চাপের মুখে তিনি পদত্যাগের ঘোষনা দেন। পওে বিকাল ৫টার দিকে মাহাবুবর রহমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সহকারীর কাছে তার পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে চলে যান।
জেলা পরিষদ প্যানেল চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবু মোবাইল ফোনে মাহাবুবর রহমানের স্বেচ্ছায় পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এ.ও) এস.এম মাহাবুবুর রহমান জানান, আমি স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের জন্য বৃহস্পতিবার জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী বরাবর আবেদন করেছি। বহুদিন তো চাকরি করলাম। তাছাড়া আমি বেশ কিছুদিন যাবত অসুস্থ্য। শারীরিক অসুস্থ্যতার কারণে মূলত আমি আর চাকরি করতে চাইনা। তিনি আরো জানান, সাতক্ষীরা জেলা পরিষদে সম্মান নিয়ে চাকরি করার আর কোন পরিবেশ নেই।
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, বেশ কিছুদিন যাবত জেলা পরিষদের সদস্যরা প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করে আসছিল। বৃহস্পতিবার জেলার বিভিন্ন এলাকার খেয়াঘাট টেন্ডার নিয়ে মিটিং ছিল। এ সময় খেয়াঘাট টেন্ডার নিয়ে কয়েক জন সদস্যের সাথে প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরোধ বাধে। পরে কোরাম পুরন না হওয়ায় ওই মিটিং আর হয়নি। তিনি জানান, আমি বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪ টা পর্যন্ত অফিসে ছিলাম। আমি চলে আসার পর শুনলাম প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস,এম মাহবুবুর রহমান স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের জন্য পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন। তিনি আরো জানান, একজন সরকারি কর্মকর্তা স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করতে চাইলে সে ব্যাপারে আর কিছুই করার থাকে না।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী (ভারপ্রাপ্ত) মো: জাকির হোসেন জানান, আমি জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমানের স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। তিনি আরো জানান, আমার কাছে এ ধরনের কোন আবেদন পত্র এখনও পর্যন্ত পৌছায়নি।
 
					 
                             
                             
                             
                             
                            