বাগেরহাট : সুন্দরবনে আবারো সংগঠিত হচ্ছেন বনদস্যুরা।প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে আনুষ্ঠানিকভাবে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করলেও কার্যত এখনো পুরোপুরি তা দস্যুমুক্ত হয়নি। মুক্তিপণ আদায়ে জেলেদের ওপর বেড়েছে অত্যাচার-নির্যাতন। জেলে-মৌয়াল অপহরণ ও বনরক্ষীদের সাথে গোলাগুলির মধ্য দিয়ে ‘রাজা-বাদশা’ নামের ওই দস্যুবাহিনী তাদের অস্তিত্ব জানান দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা এবং চাঁদপাই রেঞ্জে পৃথক তিনটি দস্যুতা ও গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটিয়েছে নতুন এই বাহিনী। এতে বনের পেশাজীবীদের মাঝে নতুন করে আবার দস্যু আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। দস্যুদের জিম্মিদশা থেকে আট জন জেলেকে উদ্ধার করেছে বনবিভাগ।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সুন্দরবনের ছয়টি দস্যু বাহিনী বাগেরহাট স্টেডিয়ামে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে অস্ত্র-গোলাবরুদ জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সর্বমোট ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন সদস্য তাদের ৪৬২টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৩৩ হাজার ৫০৪ রাউন্ড গোলাবারুদ জমা দেয়। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে সুন্দনবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করেন। সেই দস্যুমুক্ত সুন্দরবনে প্রায় দেড় বছর পর এই প্রথম দস্যুতা ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানায়, নতুন আবির্ভূত রাজা-বাদশা বাহিনীতে পাঁচজন সদস্য রয়েছে। এদের কাছে আছে দুটি পাইপগান, একটি শার্টার গান, দুটি রামদা। বাহিনীর প্রধান শরণখোলা উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন সোনাতলা গ্রামে চাঁনমিয়া বয়াতীর ছেলে সাবেক বনদস্যু মো. কবির বয়াতী। বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে একই গ্রামের আ. রহমান, মডেল বাজারের আনোয়ার ফরাজী এবং পাথরঘাটার পদ্মাস্লুইস এলাকার বেল্লালসহ তিন জনের নাম জানা গেছে।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন জানান, গত ১৮ এপ্রিল সকালে শ্যালারচর টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীরা নিয়মিত টহলকালে বনের নীলবাড়ীয়া এলাকার খালে একটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলার দেখতে পায়। বনরক্ষীরা ট্রলারটির কাছাকাছি গেলে ট্রলার থেকে বনদস্যুরা লাফিয়ে বনে উঠে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এ সময় বনরক্ষীরাও পাল্টা গুলি চালায়। একপর্যায়ে বনরক্ষীদের গুলির মুখে দস্যুরা গহীন বনে পালিয়ে যায়।
এসিএফ জানান, দস্যূদের ফেলে যাওয়া ট্রলার থেকে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার উত্তর রাজাপুর গ্রামের আ. জব্বার (৬৫), ফজলে হক (৫৫), আ. কুদ্দুস (৩৫) এবং দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের গিয়াস উদ্দিন (২০) নামের চার জেলেকে উদ্ধার করা হয়। রবিবার রাতে তারা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে গেছেন।
এর আগে ১৪ এপ্রিল বিকেলে কটকা ফরেস্ট টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীরা বনের টিয়ারচর এলাকায় বনদস্যুদের কবল থেকে আরো চার জেলে ও মৌয়ালীকে উদ্ধার করে তাদের বাড়িতে পাঠিয়েছে। তাদের বাড়ি পাথরঘাটা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। তবে, তাদের নাম জানাতে পারেননি ওই বন কর্মকর্তা।
অপরদিকে জেলে সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ এপ্রিল রাতে চাঁদপাই রঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের লাঠিমারা ভারাণী খাল থেকে শরণখোলার উত্তর রাজাপুর ও মোরেলগঞ্জ গুলিশাখালী এলাকার চারটি জেলে নৌকায় হানা দেয় ওই দস্যুরা। তাদের নৌকা থেকে চার-পাঁচ হাজার টাকার মাছ ১১০০ টাকা নিয়ে যায়।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বেলায়েত হোসেন সুন্দরবনে বনদস্যুদের কবল থেকে জিম্মী জেলেদের উদ্ধার এবং গোলাগুলির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ## ## ######## ছবি সংযুক্ত আছে।