স্ত্রীর পরকীয়ার ইঙ্গিত শ্বশুরবাড়িতেই আগুনে ঝলসে গেলো স্বামী

প্রকাশঃ ২০১৭-১২-১১ - ১১:২০

স্ত্রী উর্ম্মে রুম্মান পুলিশের হেফাজতে : স্ত্রীর পরকিয়ার ইঙ্গিত
আমাকে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় : জাহিদের জবানবন্দী
খুমেক হাসপাতালে আগুনের বিষয়ে স্ত্রীর মিথ্যা তথ্য প্রদান

কামরুল হোসেন মনি, খুলনা :  শ্বশুর বাড়িতে স্ত্রীর কাছে জ্যাকেট ও কোর্ট দিতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে স্বামী জাহিদ হোসেন (২৮) নামে এক ব্যক্তি। ওই বাড়িতে থাকা অবস্থায় তাকে পেছন থেকে কেউ বোতলে থাকা ধার্য্য পদার্থ ছুড়ে মেরে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। এমনই বক্তব্য জাহিদের। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তার শরীরের ৮০-৯০ শতাংশ আগুনে ঝলসে গেছে। আবস্থা খুবই আশংকাজনক হাওয়ায় তাকে ঢাকা বার্ন ইউনিটে রেফার্ড করা হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা বার্ন ইউনিটে আইসিসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার রাত ৮ টার দিকে ঢাকা বার্ন ইউনিটে আইসিসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।। এ সবের বিষয়ে গুরুত্বপুর্ণ তথ্য এ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষন রয়েছে।
এ ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য জাহিদের স্ত্রী রুম্মান খুমেক হাসপাতালে ভর্তি সময় জরুরি বিভাগে বলেন, তার স্বামী গ্যাস সিলিন্ডারে ব্লাস্ট হয়ে আগুনে পুড়ে যান। তার হাতেও আগুনে পুড়ে যায় বলে দাবি স্ত্রীর। এ ঘটনায় রুম্মানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের হেফাজতে প্রিজন সেলে  চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। শনিবার সন্ধ্যায় নগরীর বাগমারা বাই সোবহান লেন এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারি রেজিস্ট্রার ডাঃ মোঃ ফরিদ উদ্দিন বলেন, কোন ধার্য্য পদার্থের সাহায্যো জাহিদের শরীর আগুনে পুড়ে গেছে।  শতকরা ৮০ ভাগই উপরে আগুনে শরীর ঝলসে গেছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতে ঢাকা বার্ন ইউনিটে রেফার্ড করা হয়েছে। সে জীবন-মৃত্যু সন্ধিক্ষনে আছেন।
খুলনা থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, জাহিদ শ্বশুর বাড়ি থেকে দেয়া বেলাজার ফেরত দিতে গেছিল। ওই সময় তার স্ত্রী উর্ম্মে রুম্মান ঘরে একাই ছিল। তখন তাদের দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। উর্ম্মে ভাষ্য মতে, ওই সময় জাহিদ রাগান্বিত হয়ে বোতলে কেরোসিন নিজের গায়ে দিয়ে নিজেই আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় আগুন নিভাতে গিয়ে উর্ম্মে রুম্মানের হাত পুড়ে যায়। এদিকে জাহিদের ভাষ্য হচ্ছে, সে নিজের শরীরে আগুন ধরায়নি। পেছন থেকে তার পিঠের ওপর একটি বোতল ছুড়ে মারে, তারপরে  তার শরীরে আগুন ধরে যায়। এরপর সে আর কিছু বলতে পারেনা। পেছন থেকে কে ছুড়ে মারলো তা তিনি দেখতে পাননি। উর্ম্মে রুম্মান হাসপাতালে চিকিৎসাধীনা আছেন, তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে হাসপাতালে প্রিজনসেলে রাখা হয়েছে।
জাহিদের বোন জামাই এ কে আবেদীন ওরফে সাজন রোববার রাত পৌনে ৭টায় মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, তার ভাই ঢাকার বার্ন ইউনিটে আইসিসিইউতে আছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শারীরিক অবস্থা আশংকাজনক। যত সময় যাচ্ছে তার শারীরিক অবস্থা ততই অবনতির দিকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, শনিবার খুমেক হাসপাতাল থেকে ঢাকায় প্রেরণ করা সময় জাহিদ পুলিশের কাছে বলেছেন সে নিজের শরীরের নিজে আগুন ধরায়নি, পেছন থেকে কেউ একটি বোতল ছুড়ে মেরে আগুন ধরিয়ে দেন। সে এখন কোন কথা বলতে পারছে না, যার কারণে এর চেয়ে বেশি কিছু জানা সম্ভব হয়নি।
রোববার খুমেক হাসপাতালে জরুরি বিভাগে খোজ নিয়ে জানা গেছে, শনিবার রাতে যখন ওই জাহিদকে তার স্ত্রী উর্ম্মে রুম্মান ভর্তি করাতে আসেন। তখন সে বলে তার স্বামী গ্যাস সিলিন্ডারে ব্লাস্ট হয়ে গায়ে আগুন ধরে যায়। এই কথা বলে বার্ন ইউনিটে রাত পৌনে ৮টার দিকে ভর্তি করা হয়। উর্ম্মে রুম্মানের বড় বোন পারভিন আক্তার রোববার সকালে প্রিজনসেলের সামনে তার বোনকে দেখতে আসলে ঘটনার বিষয় এই প্রতিবেদককে বলেন, গত ৬ ডিসেম্বর তার বোন উর্ম্মে রুম্মান তার স্বামী জাহিদকে তালাক প্রদান করেন। শনিবার ঘটনার বিষয় তিনি বলেন, ওই দিন সন্ধ্যায় জাহিদ তার বাপের বাড়িতে যায়। তিনি জানতে পারেন ওই সময় তার বোন রুম্মান ছাড়া আর কেউ ছিল না। জাহিদ কাপড় থাকা ব্যাগ ঘরের মধ্যে রাখেন এবং তার বোনকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বললে সে যেতে রাজি হয়নি। তখন তার বোন বলে তুমি আবারও বিদেশে যাও সেখানে যাওয়ার পর তোমার আচরন ওপর ঠিক হয়কি না দেখবো। তারপর আমি চিন্তাভাবনা করবো। ওই সময় জাহিদ নিজের গায়ে বোতলে পেট্রোল দিয়ে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে দাবি করেন। এ সময় বোন জাহিদের গায়ে লেপ দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। প্রতিবেশী এসে তাকে উদ্ধার করে খুমেক হাসপাতালে নিয়ে আসেন। রোববার সকাল সাড়ে ১১টার পর যখন উর্ম্মে রুম্মানকে পুলিশ হেফাজতে বার্ন ইউনিটে উর্ম্মে চিকিৎসা নিতে আসেন তখন এই প্রতিবেদক ছবি তুলতে গেলে উর্ম্মে বড় বোন পারভিন আক্তার এ প্রতিবেদককে বাধা সৃষ্টি করেন।
পারভিনের এই বক্তব্য সাথে হাসপাতালে জরুরি বিভাগ দায়িত্ব ও প্রত্যেক্ষদর্শীর বক্তব্য মিল পাওয়া যায়নি। শনিবার রাতে একটি ইজিবাইকে করে উর্ম্মে রুম্মান ও তার স্বামী জাহিদ হোসেনকে একাই নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। কেউ কিছু জানতে চাইলে বলেন, সিলিন্ডারে ব্লাস্ট হয়ে আগুন শরীরে লাগে। জাহিদকে ভর্তি করে উর্ম্মে উধাও হয়ে যান। কয়েক ঘন্টার পর সে আবার হাসপাতালে ফিরে এসে বার্ন ইউনিটে তার হাত পুড়ে গেছে এই কথা বলে ভর্তি হন। জরুরি বিভাগে রাত ১০ টায় ভর্তির সময় উল্লেখ করা হয়।
অনুসন্ধানে রোববার দুপুরে জাহিদ হোসেনের বাসার এলাকা নগরীর ২নং কাশেম নগরে গেলে জাহিদ ও উর্ম্মে রুম্মানের বিষয় গুরুত্বপুর্ন তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, ওই এলাকার বাসিন্দা মৃত তাহের আহমেদ এর পুত্র জাহিদ হোসেনের সাথে ডাঃ মাও: হারুন অর রশিদের কন্যা উম্মে রুম্মানের সাথে পারিবারিকভাবে ২০১৩ সালে ৮ মার্চে বিয়ে হয়। জাহিদ ৪ ভাই বোনের মধ্যে  সে মেঝ। বিয়ের আগে থেকেই বিদেশে বাহারাইন থাকতো। তার মায়ের পছন্দের মতো উর্ম্মেকে বিয়ে করেন। সেই খুব ভদ্র ছিলেন। মাদ্রাসায় পড়াশুনা করতো। যখন বিদেশ থেকে আসেন তার কয়েকদিন পর বিয়ে হয়। ওই সময় বেশ দুই জনের মধ্যে সংসার ভালই চলছি। ওখান থেকে চলে আসার পরবর্তীতে সে সৌদীতে যান। চলতি বছরে রোজার ঈদের দুইদিন আগে দেশে আসেন। ওই সময় কোন কারণ ছাড়াই উর্ম্মে রুম্মান প্রথম জাহিদকে ডিভোর্স লেটার পাঠান। তখন বিচার শালিসের মাধ্যমে সমাঝোতা হয়ে আবার বিয়ে হয়। বিদেশ থেকে জাহিদ বউয়ের জন্য ৫-৬ ভরি স্বর্ণালংকা বানিয়ে আনেন।এছাড়া বউয়ের নামে কয়েকটি ডিপোজিট করে দেন। যখন যা চাইতো সেই অবদান জাহিদ পুরন করতো। জাহিদের নামে ডিপোজিটও বউয়ের নামে নমনী করা আছে। গত ৩ মাস আগে জাহিদ সৌদী থেকে তার স্ত্রী উর্ম্মে রুম্মানকে ফোন দিলে তেমন একটা কথা বলতো না, ফোন ধরতো না। তখন উম্মের্  রূম্মান রোজার ঈদের পর থেকে তার বাপের বাড়িতে বসাবস করতেন। ওই খানে জাহিদ তার ভরনপোষনসহ যাবতীয় আবদার পূরন করতেন। হঠাৎ জাহিদের স্ত্রী আচার আচরন পরিবর্তন হতে শুরু করে। বিদেশ থেকে ফোন দিলে সে ঠিকমত ফোন রিসিভ করতো না। সৌদী থেকে আসার পর স্ত্রীকে দেখতে শ্বশুর বাড়িতে গেলে তার স্ত্রী বাসায় নেই বাইরে গেছে বলে জাহিদকে বলে বিদায় করে দিতেন শ্বশুর বাড়ির লোকজন। গত ৬ ডিসেম্ববর মেয়ে ডিভোর্সের আগেও আরও একবার মেয়ে ডিভোর্স হয়। তখন আবার সমঝোতায় দুই জনে বিয়ে পুনরায় বিয়ে করেন। একাধিক সূত্র মতে, জাহিদ সৌদী থাকায় অবস্থায় তার স্ত্রী উর্ম্মে রুম্মান বাপের বাড়িতে বসাবস থাকায় সে পরকিয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। এর পর থেকেই জাহিদকে সে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। শনিবার যখন জাহিদের প্রতিবেশী ঘটনা শুনে খুমেক হাসপাতালে যান তখন ৩য় তলায় জাহিদ একাই মেঝেতে বসে ছিলেন। তার বউ উপস্থিত ছিলেন। কয়েক ঘন্টার পর জাহিদের স্ত্রী আবার হাসপাতালে ফিরে আসেন।