অভিনব পন্থায় মাদক বিক্রেতারা

প্রকাশঃ ২০১৮-০৪-০৩ - ১৮:৫১

কামরুল হোসেন মনি : একের পর এক নগর গোয়েন্দা বিভাগ কর্তৃক মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা অব্যাহত থাকায় মাদক বিক্রেতারা অভিনব পন্থায় মাদক পাচারের পথ খুঁজছে। কোন না কোনভাবেই এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় মাদক পৌঁছে যাচ্ছে। গত ২৫ মার্চ স্যালো মেশিনের মধ্যে ১১ হাজার পিস ইয়াবা পাচার করার সময় ডিবি’র হাতে আটক হওয়ায় অভিনব পন্থার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ডিবি’র তালিকায় ৮টি থানায় পাইকারী ও খুচরা মিলে ৪৫১ জন মাদক বিক্রেতা রয়েছে।
এ চক্রের সদস্যরা অভিনব পন্থায় সবকিছু নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়। মাঝে মধ্যে কোথাও কোথাও প্রশাসনিক অভিযান পরিচালিত হলেও তা মাদক নেটওয়ার্কে কোনো রকম ব্যাঘাত ঘটে না। গত ৪ বছরে নগর গোয়েন্দা বিভাগ ১ হাজারের বেশি মামলা, ৩৪ হাজার ৪৯০ পিস ইয়াবা, ৫ হাজার ৮৬৭ বোতল ফেন্সিডিল, ৪৭ কেজি গাঁজাসহ মাদক বিক্রেতাদের আটক করেন।
কেএমপির গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার এ, এম কামরুল ইসলাম বলেন, মাদক নির্মূল করা একার পক্ষে সম্ভব না। এটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। মাদক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, অভিযান বৃদ্ধি করা হচ্ছে অপরদিকে মাদক বিক্রেতারাও মাদক পাচারের ক্ষেত্রে নতুন নতুন অভিনব পন্থা অবলম্বন করছে। দিন-রাত মিলে নগরীতে তার তত্ত্বাবধানে অভিযান টিমগুলো সক্রিয় রয়েছে।
গোয়েন্দা ডিবি’র সূত্র মতে, গত শনিবার স্যালো মেশিনের মধ্যে সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে ১১ হাজার পিস ইয়াবাসহ কবির হাওলাদার (৪৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য নতুন কৌশল অবলম্বন করে ওই চক্রটি ইয়াবার চালানটি পাচারে ব্যর্থ হয়। ওই চক্রটি চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন কৌশলে বিভিন্ন রুটে ইয়াবা ট্যাবলেট এনে খুলনা এলাকায় পাইকারী বিক্রি করতো।
ডিবি’র সূত্র মতে, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত গত ৪ বছরে নগর গোয়েন্দা বিভাগের অভিযানে মাদক, চোরাচালন ও অন্যান্য মামলাসহ মোট ১ হাজার ৮৫টি মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়া ওই সময়ের মধ্যে ৩৪ হাজার ৪৯০ পিস ইয়াবা, ৫ হাজার ৮৬৭ বোতল ফেনসিডিল, ৪৭ কেজি গাঁজাসহ হেরোইন, চোলাই মদ ও গাঁজার গাছ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার আসামিকেও গ্রেফতার করা হয়। ২৭টি ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিকেও আটক করা হয়। এছাড়া গুলি, অস্ত্র ও বন্দুক উদ্ধার করা হয়।
সূত্র মতে, ২০১৪ সালে মাদক ও চোরাচালনসহ অন্যান্য ২০০ মামলা দায়ের করা হয়। এ সময় ইয়াবা ১৭১০ পিস, ফেনসিডিল ২ হাজার ৬৭৭ বোতল, ২১ কেজি গাঁজা ও অন্যান্য মাদক উদ্ধার হয়। ২০১৫ সালে মামলার সংখ্যা কমে ১৪৯টি করা হয়। এ সময়ের মধ্যে ১৮৯৮ পিস ইয়াবা, ৬৮৬ বোতল ফেনসিডিল, ৬ কেজি গাঁজাসহ অন্যান্য মাদক উদ্ধার হয়। ২০১৬ সালের মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ওই সালে বিভিন্ন অপরাধের কারণে ২৬৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই সময়ে ৪ হাজার ৯৪৫ পিস ইয়াবা, ৫৮০ বোতল ফেনসিডিল, ৮ কেজি গাঁজাসহ অন্যান্য মাদক জব্দ করা হয়। এই সময়ে রিভলবার, পিস্তল, দেশি পাইপগান, দোনলা বন্দুক জব্দ করা হয়। এক লাখ ৫০ হাজার জাল টাকাও আটক করা হয়। ২০১৭ সালে বিভিন্ন অপরাধে ৪৭২টি মামলা দায়ের করা হয়। এ সালে ২৬ হাজার ৩৫৭ পিস ইয়াবা, ১ হাজার ৯২৪ বোতল ফেনসিডিল, ১১ কেজি গাঁজাসহ অন্যান্য মাদক আটক করতে সক্ষম হয়। এই সময়ের মধ্যে সরকারি হাসপাতালের বিপুল পরিমাণ ওষুধ ও মাদক বিক্রির টাকাসহ মোট ১১ লাখ ৭৯ হাজার ১৭০ টাকা জব্দ করা হয়। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত গোয়েন্দা বিভাগের অভিযানে ৭৬টি মামলা দায়ের হয়। ১৪ হাজার ৮৬৩ পিস ইয়াবা, ৬২ বোতল ফেনসিডিলসহ গাঁজা ও অন্যান্য মাদক জব্দ করা হয়। এ সময়ে বিভিন্ন অপরাধের কারণে ৬৫ জনকে আটক করা হয়।
গোয়েন্দা (ডিবি)’র সূত্র মতে, মহানগরীর ৮টি থানাধীন এলাকায় ৪৫১ জন পাইকারী ও খুচরা মাদক বিক্রেতা রয়েছে। এরা ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা, হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদক বিক্রি করছে। তালিকায় নতুন মুখের অনেক সদস্য এ ব্যবসায় রয়েছে। ডিবির মাদক বিক্রেতা তালিকার শীর্ষে রয়েছে খালিশপুর থানা এলাকা। এখানে খুচরা ও পাইকারী ১৩৩ জন বিক্রেতা রয়েছে। খুলনা থানায় ৮৬ জন, সোনাডাঙ্গা থানায় ৬৩ জন, লবণচরা থানায় ৬৩ জন, দৌলতপুর থানায় ৬৪ জন, খানজাহান আলী থানায় ২৬ জন, আড়ংঘাটা থানায় ৭ জন ও হরিণটানা থানায় ৯ জন মাদক বিক্রেতা রয়েছে। তবে গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার এ, এম কামরুল ইসলাম (পিপিএম) যোগদানের পর থেকে খালিশপুর এলাকায় মাদক বিক্রেতারা কৌশল অবলম্বন শুরু করেছে। অনেক মাদক বিক্রেতা প্রকাশ্যে না এসে তারা টোকাই ও শিশুদের দিয়ে মাদক বিক্রির করাচ্ছে। সরকারি কঠোর পদক্ষেপের মধ্যেও মাদক ব্যবসায়ীরা আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সচল রয়েছে তাদের সরবরাহ ব্যবস্থাও। মাদক আমদানি, সরবরাহ ও বিপণন ব্যবস্থা নির্বিঘœ রাখতে একের পর এক কৌশল পাল্টাচ্ছে তারা। এসব নিত্যনতুন কৌশলে পাচার হওয়া মাদক ধরতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন।