অর্থপাচার-জালিয়াতি ঠেকাতে ব্যর্থ কর্মকর্তাদের তালিকা হচ্ছে

প্রকাশঃ ২০২১-০২-১৬ - ১৭:০২

ইউনিক ডেস্ক : প্রায় তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং তা বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে পি কে হালদার তথা প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে। বিচারিক আদালতের নির্দেশে পাসপোর্ট জব্দ থাকা সত্ত্বেও দেশত্যাগ করেন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। পি কে হালদার কাণ্ডে জড়িতদের খুঁজে বের করতে এবং পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দেশের উচ্চ আদালত। তবে এ যেন কেঁচো খুঁড়তে সাপ! পি কে হালদারকে কেন্দ্র করে একে একে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে বিদেশে টাকা পাচারকারী ও তাদের সহযোগীদের তথ্য। এসব সন্ধানে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। পি কে হালদারের দেশে ফেরত এলে তাকে যেন গ্রেফতার করা না হয় তার নির্দেশনা চেয়ে ২০২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে একটি আবেদন করে তার প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল)। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত জানিয়েছিলেন, পি কে হালদার কবে, কখন, কীভাবে দেশে ফিরতে চান তা আইএলএফএসএল লিখিতভাবে জানালে সে বিষয়ে পরবর্তী আদেশ দেওয়া হবে। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। পরবর্তীতে গত ২০ অক্টোবর আইএলএফএসএল-এর পক্ষ থেকে হাইকোর্টকে জানানো হয়, ২৫ অক্টোবর দুবাই থেকে অ্যামিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকা আসার জন্য টিকিট কেটেছেন পি কে হালদার। বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায় ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে। সার্বিক বিবেচনার পর পি কে হালদারকে দেশে ফেরার অনুমতি দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তিনি দেশে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেফতার করতে পুলিশের আইজি এবং ইমিগ্রেশন পুলিশকে নির্দেশ দেন আদালত। পাশাপাশি কারাগারে থাকাবস্থায় পি কে হালদার যেন অর্থ পরিশোধের সুযোগ পান সে বিষয়ে সুযোগ দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পি কে হালদারের দেশে ফেরার বিষয়ে আইএলএফএসএলের করা আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব আদেশ দেন। তবে পরে আর তিনি অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে দেশে ফেরেননি। তবে পি কে হালদার দেশে না ফিরলেও ভুক্তভোগীরা একে একে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে শুরু করলেন। যার ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সময়ে হাজির হওয়ার আবেদনগুলোর শুনানি নিয়ে দফায় দফায় আদেশ দিচ্ছেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। গত ২১ জানুয়ারি পি কে হালদারের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যর্থ কর্মকর্তাদের নামের তালিকা দাখিল করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে ২০০৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কর্মরত সেসব কর্মকর্তার নাম, পরিচয়সহ ওই তালিকা দাখিলের জন্য বলেন আদালত। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে বেশ কিছু প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এসব প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেম জেনারেটেড সফটওয়্যার থেকে ৩৯৪ জন কর্মকর্তার তালিকা বের করা হয়েছে। ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ডিপার্টমেন্ট অব ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট অ্যান্ড মার্কেটস (ডিএফআইএম)-এর ১৪৭ জন কর্মকর্তা, ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট ইন্সপেকশন ডিপার্টমেন্টে (এফআইআইডি)-এর ৫৭ কর্মকর্তা এবং ইন্টারনাল অডিট ডিপার্টমেন্ট (আইএডি)-এর ১৪০ কর্মকর্তাসহ মোট ৩৯৪ জনের নামের তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১০ সালের আগে ম্যানুয়াল সিস্টেম থাকার কারণে ২০০৮ ও ২০০৯ সালে কর্মরত কর্মকর্তাদের তালিকা প্রণয়নে তাদের আরও ১৫ দিন অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন। ডিএফআইএম, এফআইআইডিএবং আইএডি বিভাগসমূহ মানি লন্ডারিং চিহ্নিত করতে এবং ঋণ জালিয়াতি/অনিয়ম চিহ্নিত করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে কেন ব্যর্থ হলো তা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত দুই মাস সময় প্রয়োজন। এ বিষয়ে কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনগুলো আদালতে তুলে ধরার পর আদালত পি কে হালদার কাণ্ডে জড়িত ও ব্যর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের তালিকা জমা দিতে আগামী ১৫ মার্চ দিন নির্ধারণ করেছেন। এছাড়াও পি কে হালদারের পাসপোর্ট জব্দ থাকার পরও তাকে পালাতে সহযোগিতাকারী ইমিগ্রেশন পুলিশ, পুলিশ ও দুদকের তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলা বা জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে কিনা, তা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন আদালত। পুলিশের মহাপরিদর্শককে এই তদন্তভার দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পি কে হালদারের বিরুদ্ধে করা মামলার আসামিদের জবানবন্দিতে যাদের নাম এসেছে তাদের বিরুদ্ধে দুদকের পদক্ষেপ আদালত জানতে চেয়েছেন বলেও জানান একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।