অর্থাভাবে জীবনযুদ্ধে হেরে যাচ্ছেন অভয়নগরের অদম্য মেধাবী আলামিন!

প্রকাশঃ ২০২০-১১-১৭ - ১৬:০৬

অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি : যশোরের অভয়নগর উপজেলার মধ্যপুর গ্রামের বাসিন্দা, একসময়ের নামকরা অদম্য মেধাবী ছাত্র মো. আলামিন মোল্যা (২৯) দীর্ঘ একযুগ অর্থাৎ ১২বছর ধরে বাড়িতে বন্দি থেকে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করে চলেছেন। মেনিনজাইটিস্ রোগে আক্রান্ত হয়ে ঘরে বন্দি থেকে অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলে তার জীবন কাটছে। অভাবী পিতা-মাতা ১২বছর ধরে তার চিকিৎসা করে চলেছেন টাকা পয়সা ধার-দেনা করে। তবুও সুস্থ অবস্থায় ফিরতে পারছেন না আলামিন। সরেজমিনে অদম্য মেধাবী আলামিন মোল্যার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আলামিন তার বাড়ির বারান্দায় বসে অনর্গল ইংরেজীতে কথা বলে চলেছেন। তার মনে নেই কোন দু:খের ছাপ। তাকে দেখতে আসা অগনিত মানুষের সাথে বকবক করে কথা বলেই চলেছেন তিনি। বিশেষ করে পুরানো দিনের কথা বলে চলেছেন দেদারছে। তার কথা শুনে মনে হয়, সে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় রয়েছে। উপজেলার ঐতিহ্যবাহী নওয়াপাড়া শংকরপাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২০০৯সালের এসএসসি ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন এই আলামিন। ওই সময় তিনি টিবি মেনিনজাইটিস্ রোগে আক্রান্ত হন। রোগে আক্রান্তের পর মাথায় সমস্যা দেখা দেয়ায় পাগলের মতো বকাবকি শুরু করেন। নিজের ইচ্ছায় খেয়াল-খুশি মতো অনর্গল ইংরেজীতে কথা বলতে থাকেন। ২০০৭সালের জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। টিবি মেনিনজাইটিস্ রোগে আক্রান্তের পর পিতা-মাতার বোঝা হয়ে দাঁড়ান তিনি। অদম্য মেধাবী হওয়ায় বাড়িতে তিনি সর্বদা ইংরেজী ডিকশনারি বই পড়েই চলেছেন। এলাকাবাসী তার ইংরেজীতে কথাবার্তা বলা শুনতে তার বাড়িতে ভীড় জমান। তার অসহায় পিতা আবু হানিফ মোল্যা জানান, তিনি বর্তমানে অসুস্থ অবস্থায় থেকে স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে মধ্যপুর গ্রামে বসবাস করেন। দুই ছেলের মধ্যে আলামিন তার বড় ছেলে। ছেলেটি অসুখে পড়লে সংসার চালানোর জন্য ছোট ছেলে রাব্বি মোল্যাকে আকিজ জুট মিলে শ্রমিকের চাকুরি দেয়া হয়েছে। দীর্ঘ ১২বছর ধরে অসুস্থ আলামিনকে সেবা দিতে গিয়ে অর্থাভাবে হিমশিম খাচ্ছেন অসহায় পিতা আবু হানিফ মোল্যা। উপজেলার নওয়াপাড়া পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে এসএসসি ভোকেশনাল বিভাগে পড়ুয়া আলামিনের একমাত্র বোন আফসানা মিম জানান, তার বড় ভাই ছিল অদম্য মেধাবী। তার শরীর খারাপ করায় তাদের সংসারে অভাব অনটন দেখা দেয়। তিনি আরও জানান, তার পিতার মেরুদন্ডের হাড়ে ব্যথা দেখা দেয়ায় কোন কাজকর্ম করতে পারেন না তিনি। আলামিনের মা তাসলিমা বেগম জানান, তার স্বামীর ৫শতক ভিটেমাটি ছাড়া কিছুই নেই তাদের। একচালা টিনের ঘরে বসবাস করে চলেছেন ছেলে-মেয়েদের নিয়ে। তিনি আরও জানান, তার স্বামীর মেরুদন্ডের হাড়ে ব্যথার জন্য ইতোমধ্যে ধারদেনা করে আড়াই লাখ টাকা খরচ করা হলেও চিকিৎসার কোনো উন্নতি হয়নি। স্বামীর চিকিৎসার অপারেশনের জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। স্বামীর পাশাপাশি ছেলেটিকেও উন্নত চিকিৎসাসেবা দেয়া প্রয়োজন। ছেলেটির জন্য প্রতি সপ্তাহের ওষুধের জন্য খরচ হয় ১হাজার ৮শত টাকা। চিকিৎসার টাকা জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এলাকাবাসীদের সাহায্য সহযোগিতায় চলছে তাদের চিকিৎসাসেবা। অদম্য মেধাবী আলামিনের পিতা সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্য কামনা করেছেন, সাহায্য পাঠানোর জন্য তার ব্যবহৃত মোবাইলের বিকাশের হিসাব নং ০১৯২৫-৪২৭২৬৯। অদম্য মেধাবী আলামিনের অসুখের বিষয়ে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এসএম মাহমুদুর রহমান রিজভী জানান, মেধাবী শিক্ষার্থী আলামিন টিবি মেনিনজাইটিস্ রোগে ভূগছেন। এই রোগে আক্রান্তের পর তার মাথায় বড় ধরণের সমস্যা দেখা দিয়েছে। উন্নতমানের ব্যয়বহুল চিকিৎসাসেবা দেয়া গেলে, হয়তবা তাকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হবে।