অলৌকিক গাছ সজিনা পাতার বিস্ময়কর গুণ

প্রকাশঃ ২০২০-০৬-২৫ - ১৬:৫৪

প্রতিকার নয় প্রতিরোধ হোক আমাদের প্রত্যয়

সজনে (বৈজ্ঞানিক নাম : Moringa oleifera) হচ্ছে Moringaceae পরিবারের Moringa গণের একটি বৃক্ষ জাতীয় গাছ। সজনের কাঁচা লম্বা ফল সবজি হিসেবে খাওয়া হয়, পাতা খাওয়া হয় শাক হিসেবে। খরা সহিষ্ণু ও গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের একটি উদ্ভিদ। ডাল ও বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করলেও আমাদের দেশে সাধারণত ডালের মাধ্যমে বা অঙ্গজ জননের মাধ্যমে বংশবিস্তার করানো হয়। গ্রীষ্মকাল বিশেষত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত ডাল রোপণের উপযুক্ত সময়।
সজিনা গাছের পাতাকে বলা হয় অলৌকিক পাতা। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে পুষ্টিকর হার্ব। গবেষকরা সজিনা পাতাকে বলে থাকেন নিউট্রিশন্স সুপার ফুড এবং সজিনা গাছকে বলা হয় মিরাক্কেল ট্রি।
প্রতি গ্রাম সজনে পাতায় একটি কমলার চেয়ে সাত গুণ বেশি ভিটামিন সি, দুধের চেয়ে চার গুণ বেশি ক্যালসিয়াম ও দুই গুণ বেশি প্রোটিন, গাজরের চেয়ে চার গুণ বেশি ভিটামিন এ এবং কলার চেয়ে তিন গুণ বেশি পটাশিয়াম বিদ্যমান। ফলে এটি অন্ধত্ব, রক্তস্বল্পতা সহ বিভিন্ন ভিটামিন ঘাটতি জনিত রোগের বিরুদ্ধে বিশেষ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।
এতে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক থাকে এবং পালংশাকের চেয়ে তিন গুণ বেশি আয়রণ বিদ্যমান, যা অ্যানেমিয়া দূরীকরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সজনে শরীরে কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রনেও অন্যতম অবদান রাখে। মানুষের শরীরের প্রায় ২০% প্রোটিন যার গাঠনিক একক হলো অ্যামাইনো এসিড। শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মেটাবলিজম এবং অন্যান্য শারীরবৃত্ত্বীয় কার্যাবলী পরিপূর্ণরূপে সম্পাদনে অ্যামাইনো এসিড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। মানুষের শরীরের যে ৯ টি অ্যামাইনো এসিড খাদ্যের মাধ্যমে সরবরাহ করতে হয়, তার সবগুলোই এই মরিঙ্গার মধ্যে বিদ্যমান।
USDA এর মতে ১০ গ্রাম সজিনা পাতাতে, ১৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম(যা শতকরা১৫ ভাগ ডেইলি ভ্যালু), ২ মিলিগ্রাম আয়রন(যা শতকরা ১১ ভাগ ডেইলি ভ্যালু), ১৬০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ৩ গ্রাম প্রোটিন।
সজিনা পাতা অন্য যেকোন গাছের প্রজাতি থেকে বেশী পুষ্টি সরবরাহ করে। সজিনা পাতাতে কমলার চেয়ে বেশী ভিটামিন-সি রয়েছে। গাজরের চেয়ে বেশী ভিটামিন-এ এবং শাকের চেয়ে বেশী আয়রন রয়েছে।
এটি শরীরে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে ডায়াবেটিসের মত কঠিন রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে।নিয়মিত দৈনিক সেবন শরীরের ডিফেন্স মেকানিজমকে আরো শক্তিশালী করে এবং ‘ইমিউনিটি স্টিমুল্যান্ট’ হওয়ার দরুন এটি ‘এইডস’ আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এটি শরীরের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে পুষ্টিবর্ধক হিসেবে কাজ করে। শরীরের ওজন কমাতেও ব্যায়ামের পাশাপাশি এটি বেশ কার্যকরী ভুমিকা পালন করে থাকে। এটি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই। পাতা থেকে তৈরি এক টেবিল চামচ পাউডারে ১৪% প্রোটিন, ৪০% ক্যালসিয়াম, ২৩% আয়রণ বিদ্যমান, যা ১ থেকে তিন বছরের শিশুর সুষ্ঠু বিকাশে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় এবং বুকের দুধ খাওয়ানোকালীন সময়ে ৬ টেবিল চামচ পাউডার একজন মায়ের প্রতিদিনের আয়রণ এবং ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে থাকে। এটির অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এটি যকৃত ও কিডনী সুস্থ রাখতে এবং রূপের সৌন্দর্য বর্ধক হিসেবেও কাজ করে থাকে। সজনে-তে প্রায় ৯০টিরও বেশি এবং ৪৬ রকমের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বিদ্যমান। এতে ৩৬ টির মত অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য আছে। এছাড়াও এটি অকাল বার্ধক্যজনিত সমস্যা দূর করে এবং ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

এখানেই শেষ নয়,সজিনা পাতাতে রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল,অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি ও শরীরের বিভিন্ন রোগের বিরূদ্ধে আপনার দেহকে
শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।
নিয়মিত সজিনা পাতার পাউডার খেলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। করোনা প্রতিরোধে সজিনা পাতা এবং ফল উভয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

লেখক
এস,এম, মফিজুর রহমান
খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ
চট্রগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়