আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন বলেছেন, তাঁর দেশের অস্ত্র আইনে পরিবর্তন আনা হবে। ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে গতকাল শুক্রবারের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর আজ শনিবার সকালে ওয়েলিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী আরডার্ন। সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী আরর্ডান বলেন, ‘হামলাকারীর কাছে পাঁচটি বন্দুক ও একটি লাইসেন্স ছিল। আমাকে জানানো হয়েছে যে লাইসেন্সটি ২০১৭ সালের নভেম্বরে দেওয়া হয়েছিল। তার কাছে পাওয়া অস্ত্রগুগুলোর মধ্যে দুটি সেমি-অটোমেটিক, দুটি শটগান ও লিভার অ্যাকশন ফায়ারআর্ম।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসী ব্রেনটন টারান্ট ২০১৭ সালের নভেম্বরে লাইসেন্স পেলেও অস্ত্র কেনা শুরু করেছিলেন ওই বছরের ডিসেম্বর থেকে।
প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘যেহেতু এ ধরনের ঘটনা একের পর ঘটেই যাচ্ছে আর এগুলো ঘটছে লাইসেন্স করা বন্দুক দিয়েই, তাই আমি ঠিক এই মুহূর্তে আপনাদের বলতে পারি…আমাদের অস্ত্র আইনে পরিবর্তন আসবে।’
গতকালের আগে ‘শান্ত দেশ’ হিসেবে পরিচিত নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে এর আগে বড় সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছিল ৩০ বছর আগে। ডেভিড গ্রে নামের এক বন্দুধারী গুলি চালিয়ে ১৩ জনকে হত্যা করে। এরপর ১৯৮৩ সালে পাস হওয়া দেশটির বন্দুক আইনের পরিবর্তনের প্রশ্নটি আসে। বহু বিতর্কের পর ১৯৯২ সালে আইনে কিছু পরিবর্তন আসে। এরপরও যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে নিউজিল্যান্ডের অস্ত্র আইনটিকে অনেক ঢিলেঢালা বলে মনে করা হয়। দেশটির অস্ত্র আইনে বন্দুকধারীকে নিবন্ধন নিতে হয়, তবে বন্দুকের নয়। দেশটিতে কত বৈধ বা অবৈধ বন্দুক আছে, এর সঠিক হিসাব নেই। তবে মনে করা হয়, দেশটিতে বিভিন্ন মানুষের হাতে থাকা বন্দুকের সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। এ হিসাব দেশটির পুলিশের। এর অর্থ হলো, দেশটির প্রতি তিনজন মানুষের একজনের অস্ত্র আছে। এই হার অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে বেশি। অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি আটজন মানুষে একটি করে অস্ত্র আছে।
গতকাল ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদে স্থানীয় সময় বেলা দেড়টার দিকে জুমার নামাজ আদায়রত মুসল্লিদের ওপর স্বয়ংক্রিয় রাইফেল নিয়ে হামলা চালান ব্রেনটন। অল্পের জন্য ওই হামলা থেকে বেঁচে যান বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যরা। কাছাকাছি লিনউড মসজিদে দ্বিতীয় দফায় হামলা চালানো হয়। দুই মসজিদে হামলায় নিহত ৪৯ জন। এর মধ্যে আল নুর মসজিদে ৪১ জন ও লিনউড মসজিদে সাতজন নিহত হন। একজন হাসপাতালে মারা যান। আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ৪০ জন। এর মধ্যে পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
নিউজিল্যান্ডের অস্ত্র আইন পরবির্তন করার কথা বললেও তা করতে প্রধানমন্ত্রী কতটা সক্ষম হবেন, তা নিয়ে সংশয় আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের অস্ত্র ব্যবসায়ীদের শক্ত তদবিরের জোরে এর আগেও আইন কঠোর করার চেষ্টা ভেস্তে গেছে।
অস্ত্র নিয়ে কাজ করা অনলাইন গানপলিসি ডট ওআরজির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ফিলিপ অ্যালপারস বলেন, নিউজিল্যান্ডে সম্ভাব্য অস্ত্রের মালিকের বয়স ১৬ বছরের বেশি হতে হয়। অ্যালপারস বলেন, নিউজিল্যান্ডে বন্দুক ব্যবসায়ীরা সংখ্যায় অল্প, তবে তারা খুব শক্তিশালী। সেই ১৯৯২ সালের পর থেকেই অস্ত্র আইন কঠোর করার চেষ্টা হচ্ছে। তবে বারবারই তারা সেই চেষ্টা ভণ্ডুল করে দেয়।