যশোর : বর্তমানে সম্প্রতি কয়েকটি হত্যাকান্ড এবং সন্ত্রাসী ঘটনায় অস্থির হয়ে উঠেছে যশোর শহর। একই সাথে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। শহরের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা হাতে অবৈধ অন্ত্র নিয়ে মহড়া এমনকি তা ব্যবহার করলেও তারা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে। অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারের সর্বশেষ শিকার হলেন ছাত্রলীগের জেলা কমিটির সাবেক সহসভাপতি মনোয়ার হোসেন ইমন। তবে পুলিশের দাবি, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশ সবসময়ই তৎপর। তবে সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনার পর পুলিশ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালাবে। মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হবে অভিযান। বেজপাড়া এলাকার একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ওই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের প্রায় অস্ত্র বহন করতে দেখা যায়। প্রায়স প্রকাশ্যে থাকে তারা। কিন্তু পুলিশের কাছে হয় তাদের অস্ত্র বহন করার সংবাদ পৌছায় না। অথবা পুলিশ তাদের আটকে তেমন কোন আগ্রহ প্রকাশ করে না। অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের যদি সুনির্দিষ্ট অভিযান থাকতো তাহলে ইমন হত্যাকান্ড নাও হতে পারতো। তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।এরআগে গুলি করে হত্যাচেষ্টা করা যশোর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শংকরপুর এলাকার বাসিন্দা গোলাম মোস্তফার ছেলে মিশ্রকে। তাকে শুধু গুলি করে নয় বোমা মেরে প্রকাশ্যে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। এই ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ ওই অবৈধ অস্ত্রধারীদের কাউকে আটক করতে পারেনি। তারও আগে যশোর এমএম কলেজের সামনে বিল্লাল হোসনে নামে এক যুবককে (ভাংড়ি ব্যবসায়ী) গুলি করে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে। কারা হত্যার চেষ্টা করেছে তা ওই এলাকার লোকজনের জানা। পুলিশও সন্ত্রাসীদের আটকের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। উদ্ধার হয়নি অবৈধ অস্ত্র। এই ঘটনার আরো আগে যশোর শংকরপুর মহিলা মাদ্রাসার সামনে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয় সজল নামে এক যুবককে। তার বাড়ি সদর উপজেলার হামিদপুরে। কী কারণে গুলি বা কারা গুলি করেছিল সজলকে তা অজানা রয়েছে মানুষের। গত শনিবার দিবাগত রাতে যশোর শহরতলীর শেখহাটি হাইকোর্ট মোড়ে বিএডিসি আফিসের পেছনের মৎস কর্মকর্তা ইমদাদুল হকের বাড়িতে দুধরর্ষ ডাকাতি সংঘটিত হয়। ডাকাত দলের প্রায় সবার কাছে অবৈধ অস্ত্র ছিল। ওই অস্ত্রের আঘাতে মৎস কর্মকর্তা ইমদাদুল হক সামান্য আহত হন। ওই বাড়ির নিচতলায় একটি ফার্টিলাইজার কোম্পানির ডিপো অফিসেও ডাকাতি করে এক লাখ টাকা নিয়ে যায় ডাকাতরা। এই ঘটনায় তিনি কোতয়ালি থানায় অভিযোগ দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তা দেখে শুনে এসেছে। কিন্তু অস্ত্র উদ্ধার তো দুরে থাক; ডাকাত দলের কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি। একটি সূত্র জানিয়েছে, যশোর শহরের বেজপাড়া, শংকরপুর, চোপদারপাড়া, খড়কীসহ আশেপাশের এলাকায় বেড়েছে চাঁদাবাজদের উৎপাত। নতুন বাড়ি করতে গেলে চাঁদাবাজির খপ্পড়ে পড়তে হচ্ছে বাড়ির মালিককে। তাদেরকে অস্ত্রের প্রদর্শন করা হচ্ছে। যে কারণে প্রাণ ভয়ে সস্ত্রাসীদের হাতে নগদ টাকা দিয়ে রেহায় পাচ্ছে। নীরবে এই ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটে চলেছে। বাড়ির মালিকরা পাছে কিছু না হয় এই আশংকায় পুলিশে অভিযোগ দেয়া না। নাম প্রাকাশে অনিচ্ছুক খড়কী এলাকার এক বাড়ির মালিক জানিয়েছেন, ‘পিস্তল আর চাকু চোখের সামনে দেখলে তাদের প্রস্তবে সাড়া দেয়া ছাড়া কিছু করার থাকেনা। কারণ পুলিশের কাছে অভিযোগ দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে ফের আবার অঘটন ঘটনাতে পারে অস্ত্রধারীরা। পুলিশ জীবনের নিরাপত্তা দেবে কী ভাবে। তারাতো আর দিন রাত বাড়ি পাহারা দেবে না ? ফলে জীবণ নাশের আশংকায় নীরবে সহ্য করে নিতে হচ্ছে। সূত্রমতে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মাঝে মধ্যে অস্ত্র উদ্ধার করে থাকে। কখনো পরিত্যাক্ত আবার কখনো আসামিসহ। কিন্তু অস্ত্রের চেহারা আর মামলার ধরন দেখলে যে কোন মানুষের মনে সন্দেহের উদ্রেগ জন্মে। প্রশ্ন জাগে-আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যা বলছে আসলে কী তা সত্য? আসামি বা তার স্বজনদের কাছে থেকে গল্প শোনার পর ওই ধরনের প্রশ্ন জাগে স্বাভাবিক ভাবে। এই ভাবে চলতে থাকলে প্রকৃত অস্ত্রধারীরা থেকে যাবে ধরা ছোয়ার বাইরে। আর অকালে জীবণ হারাবেন ইমনের মতো তরুণ নেতৃত্ব। সূত্রমতে ইমনের আগে নওমুসলিম পার্বতী ওরফে নুসরাত জাহান, তার আগে ব্যবসায়ী সাজিদ হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। সব হত্যাকান্ড পরিকল্পিত হয় না। সাজিদ বা পার্বতীর মতো হত্যাকান্ড পরিকল্পিত হলেও পুলিশের পক্ষে ঘটনা আগেথেকে জানা সম্ভব না। তবে কোন হত্যাকান্ড কারোর কাম্য না। একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন পুলিশের দায়িত্ব। আসামি আটক করাও তাদের কাজ। তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা না নিলে সন্ত্রাসীরা পার পেয়ে যাবে। আর অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার দিনদিন বাড়বে। অভিযোগ রয়েছে কোতয়ালি পুলিশ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা মাসোহারা আদায় করে। যে কারনে কাদের কাছে অস্ত্রআছে বা কারা অস্ত্র বহন করে পুলিশ সবই জানে। একারনে এদেরকে আটক করা হয় না। যশোর কোতয়ালি মডেল থানা গোল্ডেন থানা হিসেবে পরিচিত। এখানে আসার জন্য পুলিশের বড় বড় কর্তারা মোটা অংকের টাকা উৎকোচ দেয়। কোতয়ালি মডেল থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পেতে হলে উর্দ্ধতন কতাদের দিতে হয় প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। আর যিনি এখানে ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি এসে আগে তার টাকা উঠানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন। আর এটাকা উঠাতে গেলে চোরাচালান সিন্ডিকেট, মাদক সিন্ডিকেট,অস্ত্র সিন্ডিকেটের সাথে যোগাযোগ রাখতে হয়। কাজেই কোতয়ালি থানার দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তারা ল-ইন অর্ডার পালন করতে পারেন না। কারণ যাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয় তাদেরকে তো আর ধরতে পারে না। ফলে আইন শৃংখলার অবন্নতি হওয়াটাই স্বাভাবিক । এছাড়া ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে ক্ষতি গ্রস্থরা থানায় গেলে তাদেরকে পাত্তা দেয়া হয় না। দালাল প্রকৃতির লোকজনকে বেশ সমাদর করা হয়। যেহেতু দালাল প্রকৃতির লোকের কাছ থেকে পুলিশের আয় হয়। এসব বিষয়ে কথা হয় যশোরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ‘ক’ সার্কেল নাইমুর রহমানের সাথে। তিনি বলেছেন, ডিআইজি অফিস থেকে নির্দেশ এসেছে অবৈধ অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে। মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) রাত থেকে বিশেষ অভিযান চালানো হবে। আর ইমন হত্যা এবং মৎস কর্মকর্তার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনার এজাহার মঙ্গলবার হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার বা চাঁদাবাজি এমনকি যে কোন সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে সংবাদ দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহাবান জানিয়েছেন।