আইএমএফ থেকে কোনো শর্তে ঋণ নিচ্ছে না বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশঃ ২০২৩-০১-১৯ - ১১:৩৫

ইউনিক ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেছেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে কোনো শর্ত দিয়ে ঋণ নিচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘আইএমএফ কেবল তখনই (যে কোন দেশকে) ঋণ দেয় যখন দেশটি ঋণ পরিশোধের যোগ্যতা অর্জন করে। আমরাতো তেমন কোনো শর্ত  দিয়ে ঋণ (আইএমএফ থেকে)  নিচ্ছি না।’

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মো. মুজিবুল হকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তো বিদ্যুৎ ও গ্যাসে ভর্তুকি দিচ্ছি। আমার প্রশ্ন হলো পৃথিবীর কোন দেশ গ্যাস আর বিদ্যুতে ভর্তুকি দেয়? কেউ দেয় না।’

কিছু ব্যবসায়ী ও শিল্পকারখানার মালিকদের উদ্দেশ্যে করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ চাইলে যে মূল্যে কিনে আনবো সেই মূল্য তাদের দিতে হবে। এখানে ভর্তুকি দেয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই।

তিনি বলেন, আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি, বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়িয়েছি। কিন্তু বিদ্যুৎ ব্যবহারে সকলকে সাশ্রয়ী হতে হবে। ইউক্রেন আর রাশিয়ার যুদ্ধের পর ইংল্যান্ড বিদ্যুতের দাম ১৫০ ভাগ বাড়িয়েছে। আমরা তো মাত্র ৫ শতাংশ বাড়ালাম আর বাল্কে কিছু গ্যাসের দাম বেড়েছে। এলএনজি আমরা যেটা ৬ ডলারে স্পট প্রাইসে কিনতাম, সেটা এখন ৬৮ ডলারে। কত ভর্তুকি দেবে সরকার? সরকার যে ভর্তুকি দেবে সেটা তো জনগণেরই টাকা। আর দ্রব্যমূল্য আজেকে সারা বিশ্বেই বৃদ্ধি পেয়েছে।

মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রনে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে  সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের যারা আমরা তাদের জন্য টিসিবির ফেয়ার প্রাইস কার্ড দিয়ে দিয়েছি। যেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল কিনতে পারে। তেল, চিনি, ডাল সীমিত আয়ের মানুষ ন্যায্য মূল্যে কিনতে পারে, সেই ব্যবস্থাটা করে দিয়েছি। এর থেকে যারা নিম্ন আয়ের তাদের জন্য আমরা ১৫ টাকায় চাল দিচ্ছি। সেই সঙ্গে তেল, ডাল ও চিনিও দেয়া হচ্ছে। আর একেবারে হতদরিদ্র যারা কিছুই করতে পারে না, তাদেরকে বিনাপয়সায় খাদ্য সরবরাহ করছি। স্বল্প আয়ের মানুষ যাতে কষ্টে না পড়ে সেদিকে দৃষ্টি রেখে এই ব্যবস্থা করছি। কৃষিতে আমরা ব্যাপকভাবে ভর্তুকি দিচ্ছি।

ভর্তুকি প্রশ্নে তিনি বলেন, গ্যাস উৎপাদন ও বিতরণ; বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণে যদি ৪০, ৫০ ও ৬০ হাজার কোটি টাকা আমাকে ভর্তুকি দিতে হয় তাহলে সেটা কী করে দেবো? এর ফলে দাম বাড়লে মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রন করার যে চেষ্টা সেটা করে কিছুটা সফলতা দেখাতে পেরেছি। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে মুল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে।

সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুতের দাম যদি বৃদ্ধি পায় পাশাপাশি মানুষ যদি একটু সাশ্রয়ী হয় তবে গায়ে লাগবে না। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনে বিদ্যুতের ব্যবহার ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছি। এভাবে যদি সবাই উদ্যোগ নেয়- তাহলে বিদ্যুৎ ব্যবহার সাশ্রয়ী হতে পারে।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ী আছেন, এখানেও (সংসদে) আছেন তাদের আমি তো স্পষ্ট বলেছি। গ্যাস আমি দিতে পারবো- কিন্তু যে মূল্যে গ্যাস আমরা বাইরে থেকে কিনে নিয়ে আসলাম সেই মূল্য যদি আপানারা দেন আমরা গ্যাস দিতে পারবো। তারা যদি নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ চায় তাহলে যে মূল্যে কিনে আনবো সেই মূল্য তাদের দিতে হবে।

ভর্তুকি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এটা ভুলে যাবেন না ভর্তুকির টাকা তো জনগণেরই টাকা। যত মুল্য কম থাকে তাদের অর্থাৎ আমাদের বিত্তশালীরা লাভবান হন। যারা সাধারণ মানুষ তারা কিন্তু ঠিকমত বিল দেয়। বিত্তশালীরা আরাম আয়েশ করবে আর স্বল্প মুল্যে পাবে তা কী করে হয়? সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা আমাদের পরিকল্পনা নিচ্ছি। সরকারি দলের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমানের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ প্রতিষ্ঠার জন্য এখন থেকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ হিসেবে কাজ করবে। স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভ  ঠিক করা হয়েছে। এগুলো হলো-স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট ইকোনমি ও স্মার্ট গভর্নমেন্ট।

তিনি বলেন, এ চারটি স্তম্ভের আলোকে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য বাস্তবায়নে কানেক্টিভিটি (অবকাঠামো উন্নয়ন), মানব সম্পদ উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ, ফ্রিল্যান্সারদের উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ এবং ইভেন্ট ও  প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজনে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে সরকার জোর দেওয়ার কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নয়নে সবচেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হবে।