ভারত ও বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর পত্র পত্রিকায় একমাত্র কবিতাকেই উপজীব্য করে যিনি ইতিমধ্যে খ্যাতির শীর্ষে ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন, তিনি আমাদের সকলের অতী কাছের মানুষ ~ কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক । কবি তাঁর অন্তর্দৃষ্টি দ্বারা জন্ম – ও মৃত্যুর রহস্যকে উপলব্ধি করেছেন । তাঁর অধিকাংশ এই সময়ের কবিতাগুলি জন্ম ও মৃত্যু চেতনা সমৃদ্ধ, একথা বিদগ্ধ পাঠক মাত্রই দীর্ঘদিন যাবৎ অবগত আছেন ।
এমনই একটি কবিতা তিনি নির্বাচন করেছেন, যা এই ভূমিকা-র সংগে আদ্যোপান্ত ভাবে মিলে যাবে । তাঁর গুণমুগ্ধ পাঠক সবাই খুশি হবেন । পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার ঐতিহাসিক শহর শ্রীরামপুরের কৃতিসন্তানকে অভিনন্দন ~~~ ]
******************************
বিশেষ দীর্ঘ ধ্রুপদী কবিতা ***
**********************
ম্যাকডেভিড মহাশূন্য এবং প্রতিটা জন্মের মৃত্যু
******************************
*****************************
ক )
এখন অদ্ভুত এক বাতাস বইছে । বাতাস নয়, অতীব পরিণতি
এই বিশ্রী সময়ে মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গম হয় জীবনের
মৃত্যু বাড়ে, বেড়েই চলে সর্বনাশের মতো আয়ু
এখানে প্রভূত কষ্টে অন্ধকার গর্ভের ভেতর একাই নিঃশব্দ ;
নির্জনতা ****
অথচ শরীরহীন স্বপ্নগুলো প্রতিদিনের কানাকড়ি নিয়ে বিস্মৃতির ভেতর ডুবে গেলে বুকের ড্রয়ার খুলে কেউ একজন
দেখে নিজের কঙ্কাল !
বেশ বিষজ্বালায় অনন্ত গভীর অতল, সেও মৃত অন্তহীন
অবুঝ ~ নির্বোধ *****
পরের বাক্যে কবিতার কাছাকাছি চোখ ভরা বহতী নীরবতা
সেটাও ইচ্ছে হলে ছুঁয়ে থেমে যায় —
খ )
নতুন স্মৃতিতে ছায়ারাও অবাক
শিকরের টানে শুরু হয় অলীক আক্রোশ
প্রতিটা জন্মের মৃত্যু মহাকাশ থেকে ম্যাকডেভিড মহাশূন্য
ছিমছাম অথচ সতত যন্ত্রণা ভোগে !
বেশ কিছু অভুক্ত চোখ দিনরাত কবিতার ভেতর সময় কাটায়
এই হোলো জীবন ; জরায়ুর মধ্যে খোঁজে
কবেকার প্রাচীন খোলস । যদি মরে যাই — অথবা
জ্বর * থুতু * শ্লেষ্মা, — এদেরকে ভিখারি করে রেখে যাব
পথ পৃথিবীময়, গোপনতা আরও ভেতরে অনন্ত বিস্মৃত ।
গ )
হয়তো সারারাত আত্মঘাতী স্মৃতিরা
নিজস্ব নিয়মে দিক চিহ্নহীন *** ঘৃণা এবং অস্থিরতা
প্রতিদিন সিঁড়ির প্রতিটা ধাপে মধ্যরাতের চাঁদ চোখ চুপ প্রণয়ে
বুকের মধ্যে রাখে হাত !
অহর্নিশ এই দুর্দিন এই আমিত্ব ভরা নিঃশব্দ
স্বভাবতই ক্যালেন্ডারে দোল খেতে – খেতে অন্ধ হয়ে গেছে ***
শেষ রাতে অভিমানের তালা খুলে যায়
ব্যক্তিগত স্বপ্ন নিয়ে শুরু হয় মনে – মনে কথা বলাবলি,
এরপর কবিতা থেকে দু’চোখ তুলে নিয়ে নিজের
কপালে মাখি সর্বনাশী জ্যোৎস্না —
( এটা অবশ্য সখ করে নয় ; আবার সান্ত্বনা পাব বলে নয় )
কিছু কিছু অপূর্ণতা ম্যাকডেভিড মহাশূন্য মনে হয়
সেজন্য দিকচিহ্ন মুছে অতীত স্মরণের পথে একা হেঁটে যাওয়া
পাগল বৃষ্টির দল অবুঝ শিকারী, সেখানে বিচ্ছেদ জ্বালায়
নির্জন হয়ে থাকে পূর্ব পরিচয় । ( নির্ঘুমের উপাখ্যান )
ঘ )
বেঁচে থাকতে তোমার অতীব কাছে চোখ ছিল সততই ঈশ্বরীও
বুকের ভেতর এক সমুদ্র ঢেউ ; নতুন আকাশ থেকে তারাদের
বিজ্ঞাপন অন্তর লজ্জায় ঘুমের মতন একদলা স্বপ্ন গন্ধে
বহতাময় ! কেমন সহজ সেই ছবি এঁকে ভাসমান সুখ দেখাতে
চেয়ে ওষধি স্মৃতির ভেতর চোখাচোখি ;
চোখের মধ্যে ছুটে আসা স্পষ্ট ছায়া চুম্বনে মুছে ** তুমি এই মৃত্যুর আগেও শ্মশান যাত্রীদের নাম বাতাসে লিখেছো
সেই সারাদিনের বৃষ্টি স্পষ্ট কথাগুলোকে ইস্ত্রিকরা পোশাক
পরিয়ে কবিতা করেছি !
ঙ )
এই একবারই বৃষ্টি এনেছি চোখে ; তোমাকে দিয়েছি
অরণ্য উপহার *** এই একবারই নরকের পথ ঘুরে লক্ষ্য শিরা – উপশিরায় জন্মঋণের রহস্য খুঁজেছি, অতলমন্ত্রে শূন্য
নামে পায়ের নীচে ~~~~
বৃষ্টির গোপন ধারায় এলোমেলো হয় আয়নার তেপান্তর —
তবুও এই একবারই শ্রাবণ এনেছি অন্তরীক্ষ ভেঙে !
বেশ কিছু মৃত্যু আমার চেনা হয়ে গেছে ,
আমার প্রতিজন্মের মৃত্যু আক্ষরিক এবং ভালোবাসাহীন
এই জন্যেই মুছে দিতে হয় প্রতিটা মাতৃগর্ভের স্মৃতি
মনের ভেতর থেকে যাবতীয় স্তব্ধতা ; আদেশ দেয় তুমি
পদবী ভুলে যাও !
চ )
ফের দুঃস্বপ্ন, ফের ঘুমন্ত অস্তিত্ব শরীরময়
সমস্ত আকাঙ্খার ঘ্রাণ নিছক অবহেলায় মুছে দেয়
কত পথ, কত প্রেম, কতই যন্ত্রণার অবুঝ অস্থিরতা
এসব আমাকে বোঝায় *** আমি প্রাণহীন জীবন নিয়ে অতৃপ্তির জ্বালায় কত শত বছরের আকাশে ঘুরেছি ~~~~
এই একা – একা পোশাকহীন পছন্দ – অপছন্দ অথবা ছদ্ম
আদর্শ, — আমাকে অহর্নিশ অনন্তকাল ঘোরায় – ফেরায় –
ভাসায় ****
কোথায় মৃত্যুর ছবি দর্পণে দেখা দিলে ফুল ~ চন্দনের গন্ধ
পাপমোচনে উৎসাহ পায় ! কী এক দেবতার কাছে আমার
প্রতিটা মৃত্যু বিশ্লেষণ ; অনেকটাই ভাসমান !
ছ )
এরপর যতদিন মনে পড়া পাতা খসা বিকালে
কে আমার কথা মনে করছে ! সেকি প্রতিটা জন্মের চেনা মুখ ,
চারপাশে অসুখের ভেতর চুপচাপ হয়ে থাকে হেমন্তের চাঁদ
ঘুম কাটে না দুঃখে ~ অভিমানে, স্বপ্নের পোশাক খুলে স্নান করে অশরীর স্মৃতি **কেউ একজন নতমুখে ঘরে বসে থাকে ,
সেই কি প্রেত ? হতে পারে !
এরমধ্যে মন ভেঙে গেলে সমস্ত নির্জনতা হয় খেলার সঙ্গী
কতদিন এভাবে আসি আর যাই
কতদিন রাত ডোবা ভোরে ; মৃত্যুর এক ঘন্টা পরে আবার জন্মাই *** তারপর নির্নিমেষ খুঁজি ফিরি পথ , — যে পথে
দিক চিহ্নহীন দূরে আমার ঈশ্বর দাঁড়িয়ে !!
******************************