জামাল উদ্দিন জীবন
হাফিজেকে তাদের জন্য রাতের খাবার তৈরী করতে বলে হাফিজ চুপচাপ কাজ করে,আর মনে মনে ভাবে সকল ঘটোনাগুলো মাস্টরসাব আর আমাগো লোকজনকে জানাতে হবে নয়তো বিপদ বাড়তে পাড়ে।মালেক অলিকে বলে শোন নামের তালিকাটা দেইখা বলতো কার কার বাড়িতে আগে হামলা করতে হবে।অলি বলে হুজুর প্রথমে মাস্টরের বাড়ি থিকা শুরু করেন শালায় আবার লিডার হইছে গ্রামের মানুষের।এইডা আপনার লাইগা কত বড় অপমানের কথা একবার চিন্তা কইরা দেখেন।আপনে হইলেন গ্রামের মাথা আপনারে রাইখা গ্রামের মানুষ ঐ মাস্টরের কথা শুনে।এর একটা শাস্তি পাওয়ন লাগবো গ্রামের মানুষের।মালেক বলে অলি তুই ঠিক কথা কইছো তয় আজ রাতেই আমরা কামডা সাইরা ফালামু।তুই শুধু খেয়াল রাখুবি যে মাস্টারের বাড়িতে কার কার যাওয়া আসা আছে।হাফিজ রান্নার পানির জন্য একবার নিরবে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে আর তাদের দুজনের সকল কথা কান পেতে চুপিসারে শুনে।কথাগুলো শুনে তার গা শিউরে উঠে।সকলের কথা চিন্তা করতে থাকে কি করবো এখন আমি।কি করে বাঁচাবো গ্রামের মানুষগুলোকে মাস্টার সাবের মত লোককে ওরা বাঁচতে দিবে না।না না এটা হতে পারে না্।আমার জীবন থাকতে এটা হতে দিতে পারি না আমি।অলি আবার এসে দেখে হাফিজ কাজ করছে নাকি ঠিক মত।হাফিজ খুব দ্রুত হাতের কাজ শেষ করে দিয়ে বলে হুজুর অমি এবার আশি।অলি বলে কোথায় যাও?হাফিজ বলে আমার শরিলের অবস্হা ভালো না ভাই বিশ্বাস না হলে তুমি আমার গায়ে হাত দিয়ে দেখো অনেক জ্বর আমার মাথাটা ঘুরাইতাছে।মেম্বার বলে দেখতো সত্যি কথা বলছে নাকি মিথ্যা বলছে অলি।অলি হাত দিয়ে দেখে জ্বর আছে বলে হুজুর আপনার লগে মিথ্যা কথা কওনের সাহস আছেনি ওর।জি হুজুর সত্যি সত্যি জ্বর আছে এই কথা শেষ না হতেই হাফিজ মাটিতে পড়ে গেলো।আরে অলি ওরে চলে যেতে বল তাড়াতাড়ি এই সব লোক দিয়া কি আর কাজ হয়।দুর করে দে হারামজাদারে আমার বাড়ি থেকে।যা যা হারামজাদা এখন বাড়ি যা তয় সকাল সকাল আইসা পড়িছ হুজুরের বাসায়।এইটা যেন মনে থাকে নয়তো তোর হাড় মাংস আলাদা কইরা হালামু আর তোর পোলারে গাছের ডালে ঝুলাইয়া দিমু।ঐ বট গাছের লগে সবাই দেখবো হুজুরের কথা না মানলে কি হয়।তখনি টের পাইবো হুজুরের ক্ষমতা কত।হাফিজ কোন মতে উঠে বাড়ির দিকে পা বাড়ায়।মনে মনে বলে দাঁড়াও হালার চামচা তোমাগো ব্যবস্হা আমি করতাছি।সে দ্রুত মাস্টারের বাড়ির দিকে পা চালায়।গিয়ে দেখে বেশ কিছু লোক বসে আছে।কারো সাথে কোন কথা না বলে হাফিজ মাস্টারের সাথে আলাদা ভাবে মালেকের বাড়ির কথাগুলো শুধু বলে।মাস্টার বলে ঠিক আছে তুমি বাড়িতে চলে যাও আমি এই দিকটা দেখছি।
আজাদ বলে যে অবস্হা হয়েছে তাতে আজকে সকলকে নিযে আর মিটিং করা যাবে না।আমার নিজেরও বাড়িতে থাকাটা মোটেও নিরাবদ নয়।পরিবার আছে আমি এখন কি যে করি ভেবে পাচ্ছিনা।হাফিজের কথা সত্য আর যদি তারা আমাকে বাড়িতে না পায় তবে হাফিজ যে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে এটা তারা বুঝে যাবে তখন বিপদ আরো বাড়বে কমবে না।হাফিজকেওতো বাঁচাতে হবে।যাক অনেক ভেবনা চিন্তা করে মজিদ ভাইয়ের বাসায় গিয়ে রাতে থাকে।স্ত্রীকে বলে আমি বাহিরে যাচ্ছি সকালে আসবো।আরিফা বলে তুমি কোথায় যাও?আজাদ সমস্যা আছে রাতে পরে বলবো।সকলকে সাবধান করে দিয়ে বলে সবাই আজ রাতে নিজ নিজ দাইত্বে পরিবার সহ থাকবে এখন আসো সকলে আবার সকালে কথা হবে।অনেকে জানতে চাইলো কি ব্যাপার কি হয়েছে?মাস্টার শুধু বললো এখন হাতে বেশী সময় নেই পড়ে কথা হবে সবাই সবার মত করে ভালো থাকবেন।অলি আর মেম্বার আসে রাতে আজাদের বাড়িতে।দরজায় বেশ কয়েক বার ধাক্কা দিলো কিন্তু কেউ দরজা খুলে দিলো না।পড়ে আবার নাম ধরে ডাকে আজাদ এই আজাদ বাড়িতে নাই নাকি?এবার আরিফা বিছানা ছেড়ে এসে বলে জি উনি বাড়িতে নাই একটা কাজে সন্ধ্যায় বাহিরে গেছে। বলছে ফিরতে সকাল হবে।আচ্ছা বাসায় আসলে বলবে মেম্বার সাব দেখা করতে বলেছেন।আরিফা বলে জি আচ্ছা বলবো।জিয়াউর আর মেম্বার খালি হাতে ফিরে আসে আজাদের বাড়ি হতে।অলি কি মনে করে যেন বলে হুজুর চলেন একটু হাফিজের বাড়িতে যাই।দেখি সে বাড়িতে আছে না সেও অন্য কোথাও গেছে।মেজর বলে আচ্ছা বলা চলিয়ে হাফিজকা ঘরমে।জরুর চলিয়ে হুজুর তারা হাফিজের বাসায় গিয়ে দেখে হাফিজ নিজের বাসাতেই ঘুমিয়ে আছে।চলিয়ে মালেক তোম ঘরমে যাইয়ে সুবা সুবা চলে আইয়ে ঠিক হায় মালেক ঠিক হায়। আজ সুবা সুবা আনা ফিকির মাত করিয়ে আপ।অলি আর মেম্বার নিজেদের বাসায় ফিরে আসে আর চিন্তা করে মেম্বার ওরা কি আমাগো গতি বিধির উপর নজর রাখা শুরু করছে।আমরা যে রাতে আসবো আজাদের বাড়িতে এই খবর অন্য কেউতো জানে না বুঝলাম না।ব্যাপারটা আমার কাছে কেমন সন্দেহ জনক মনে হচ্ছে আচ্ছা আমিও নতুন লোক রাখতেছি তাদের খবর নিতে।
পনেরো:মজিদ,আমেনা,জমিলা,হাফিজ,আপন,অবন্তি,জব্বার সকলে বিকালে বসে আছে জমিলাদের বাড়ির উঠানে।সকলে কালকে রাতের ঘটোনা নিয়ে কথা বলছে।এরি মাঝে আজাদ মাস্টার এসে হাজির হলো।তিনি লোক মারফত খবর নিয়েছেন পাশের গ্রামের বেশ কিছু লোক নিখোঁজ আছে আর আমাদের গ্রামের অবস্হাও বেশি ভালো না।এখন রাতের বেলায় মানুষের বাসায় যাওয়া শুরু করেছে।আমাদের সকলকে আরো সাবধানে কাজ করতে হবে।সব দিক ভালো ভাবে খেয়াল রাখতে হবে।ট্রেনিং প্রায় শেষের দিকে হয়তো আর দু/এক দিন হবে।তবে একটা কথা হলো হাফিজ ভাই তুমি বেশি শতর্ক থাকবে যেন তারা কোন ভাবে বুঝতে না পারে।তুমি আমাদের সাথে জড়িত আছো।আমরা পরবর্তি দিক নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের কাজগুলো এভাবে চালিয়ে যাব সকলে বুঝলেন বিষয়টা।আপন বলে চাচা জান আমি যতটুক জানি পাশের গ্রাম সহ আমাদের আশে পাসের বাড়ির কিছু লোক নিখোঁজ রয়েছে।আবার কারো কারো পরিবারের সদস্যদের লাশও পাওয়া গেছে।এখন আমরা কি করবো।মজিদ বলে কথাটা সত্য বাজারে গিয়ে ছিলাম তারাও বলছে তাদের গ্রাম থেকেও নাকি নারী পুরুষ যাকে পাচ্ছে মেলেটারিরা ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছে তাহলে আমাদের কি অবস্হা হবে আজাদ ভাই।আমেনা বলে আমরা মেয়ে মানুষ আমরা বাড়ি ছেরে কোথায় গিয়ে থাকবো।পুরুষ মানুষগুলো নয় এক জাগয় হতে অন্য জায়গায় গিয়ে থাকতে পারে আমাদের হয়েছে মহা বিপদ।জমিলা আমার ঘরেতো যুবোতি মেয়ে আছে আমার চিন্তার কোন শেষ নেই।আজাদ বলে এটা ঠিক কথা শুধু আমাদের একার নয় এখন সারো দেশের মানুষের বিপদ আর বিপদে ধৈর্য হারালে চলবে না।সকলকে একসাথে বুদ্ধি করে তা মোকাবেলা করতে হবে।সবার জীবন বাঁচাবার কথা ভাবতে হবে।একার কথা চিন্তা করা যাবে না আর নারী ও শিশুদের জন্য একটু বেশি ভাবতে হবে আমাদের।সকলে সন্ধ্যায় আমার বাড়িতে চলে আসবেন আজ আমাদের সাথে লিয়কৎ ভাই আসবে যে আমাদের ট্রেনিং ও পরোবর্তি করনীয় সম্পর্কে সব কিছু বুঝিয়ে বলবেন।আমি তাহলে এখন আশি আল্লাহ হাফেজ।