আরও ৪ ব্লগার হত্যার বিচারের অপেক্ষা

প্রকাশঃ ২০২১-০২-১৮ - ১৭:৫২

ইউনিক ডেস্ক : ব্লগার রাজীব হায়দারকে খুনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ব্লগার হত্যাকাণ্ড শুরু হয়। ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মোট ৬ ব্লগারকে হত্যা করে জঙ্গিরা। এর মধ্েয রাজীব হায়দার ও অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এবার আরও ৪ ব্লগার হত্যা মামলার বিচারের অপেক্ষা। যে ৪ ব্লগার হত্যা মামলার রায়ের অপেক্ষা, সেই মামলাগুলো হলো, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, অনন্ত বিজয় দাশ, নীলাদ্রি চ্যাটার্জি ওরফে নিলয় ও নাজিম উদ্দিন হত্যা মামলা। ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মিরপুরের পলাশনগরে নিজ বাড়ির সামনে ব্লগার রাজীবকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির অদূরে বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার ড. অভিজিৎ রায়, ৩০ মার্চ তেজগাঁও এলাকায় ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু, ১২ মে সিলেটের সুবিদবাজার এলাকায় ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ, ৭ আগস্ট রাজধানীর গোড়ানে ব্লগার নীলাদ্রি চ্যাটার্জি ওরফে নিলয় এবং ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল কুপিয়ে করা হয় ব্লগার নাজিম উদ্দিনকে। এই ৬ হত্যাকাণ্ডের মধ্যে রাজীব হায়দার ও অভিজিৎ রায়ের মামলার রায় ঘোষণার বাকি রয়েছে আরও ৪টি হত্যা মামলার বিচার। সম্প্রতি নীলয় ও নাজিম উদ্দিন হত্যা মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। আর ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যা মামলার রায় ঘোষণার তালিকা থেকে উত্তোলন করে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য রাখা হয়েছে।
ওয়াশিকুর রহমান বাবু: ২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর মামলা ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যা মামলার রায় ঘোষণার জন্য ধার্য ছিল। ওইদিন রায় থেকে মামলাটি উত্তোলন করে পুনরায় চার্জ গঠনের আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে চার্জ শুনানির জন্য তারিখ ধার্য করেন। ৪ নভেম্বর পুনঃচার্জ গঠনের আদেশ দেন আদালত। ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. রবিউল আলমের আদালতে মামলাটিতে সাক্ষীদের পুনরায় জেরা চলছে। আগামী ৪ মার্চর পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে। ২০১৫ সালের ৩০ মার্চ রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ীর দিপীকা মোড়ে ওয়াশিকুর রহমানকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ওয়াশিকুর রহমানের ভগ্নিপতি মনির হোসেন মাসুদ বাদী হয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা করেন। ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর মামলা তদন্ত করে ৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মশিউর রহমান। আসামিরা হলেন জিকরুল্লাহ ওরফে হাসান, আরিফুল ইসলাম ওরফে মুশফিক ওরফে এরফান ও সাইফুল ইসলাম ওরফে মানসুর। মাওলানা জুনায়েদ আহম্মেদ ওরফে তাহের ও সাইফুল ইসলাম ওরফে আকরাম পলাতক।
নিলয়: ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট রাজধানীর খিলগাঁওয়ের গোড়ানের ১৬৭ নম্বর বাড়ির পঞ্চমতলায় ভাড়া বাসায় খুন হন ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় ওরফে নিলয় নীল। এ ঘটনায় ওইদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে নিলয়ের স্ত্রী অজ্ঞাতপরিচয় ৪ জনকে আসামি করে খিলগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গত ৪ অক্টোবর মামলাটিতে বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ মো. জিয়াউল হক জিয়াসহ ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা রমনা জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক শাহ মো. আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস। গত ৬ অক্টোবর আদালত মামলার চার্জশিট গ্রহণ করে মেজর জিয়া পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় ঢাকা সিএমএম আদালত থেকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলি করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন মো. মাসুম রানা, সাদ আল নাহিন, মো. কাওসার হোসেন খাঁন, মো. কামাল হোসেন সরদার, মাওলানা মুফতী আব্দুল গফ্ফার, মো. মর্তুজা ফয়সলে সাব্বির, মো. তারেকুল আলম ওরফে তারেক, খায়রুল ইসলাম ওরফে জামিল ওরফে রিফাত ওরফে ফাহিম ওরফে জিসান, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাহাব, মোজাম্মেল হোসেন সায়মন, মো. আরাফাত রহমান ও মো. শেখ আব্দুল্লাহ ওরফে জুবায়ের।
অনন্ত বিজয় দাশ: ২০১৫ সালের ১২ মে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য সিলেটের সুবিদবাজার এলাকার নূরানী আবাসিক এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে গলির ভেতর থেকে একটু সামনে আসার পর বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে কুপিয়ে হত্যা করে ৪ অস্ত্রধারী। চাপাতির আঘাতে গুরুতর আহত অনন্ত হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করেন। হত্যাকাণ্ডের দিনই অনন্ত বিজয়ের বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ সিলেটের বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাত ৪ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটিতে ২০১৭ সালের ৯ মে ৬ জনকে অভিযুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী। অভিযুক্তরা হলেন সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন, খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ, সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বীরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ, কানাইঘাটের পূর্ব ফালজুর গ্রামের মান্নান ইয়াইয়া ওরফে মান্নান রাহী ওরফে এবি মান্নান ইয়াইয়া ওরফে ইবনে মঈন, কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ ও সিলেট নগরের রিকাবীবাজার এলাকায় বসবাসকারী সাফিউর রহমান ফারাবী ওরফে ফারাবী সাফিউর রহমান। মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।
নাজিম উদ্দিন: ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শেষে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় মেসে ফেরার পথে লক্ষ্মীবাজারের একরামপুর মোড়ে জঙ্গিরা কুপিয়ে এবং গুলি করে হত্যা করে ব্লগার নাজিম উদ্দিনকে। এ ঘটনায় পরদিন সূত্রাপুর থানার এসআই মো. নুরুল ইসলাম মামলা দায়ের করেন। গত ২০ আগস্ট বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ মো. জিয়াউল হক জিয়াসহ ৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। চার্জশিটভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন রশিদুন নবী ভূইয়া ওরফে টিপু ওরফে রাসেল ওরফে রফিক ওরফে রায়হান, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন, মো, আরাফাত রহমান, মো. শেখ আব্দুল্লাহ, মো. ওয়ালিউল্লাহ ওরফে ওলি ওরফে তাহেব ওরফে তাহসিন, সাব্বিরুল হক চৌধুরী ওরফে আকাশ ওরফে কনিক, মাওলানা জুনেদ আহাম্মেদ ওরফে সাব্বির ওরফে জুনায়েদ ওরফে তাহের ও আকরাম হোসেন।