সেলিম হায়দার, সাতক্ষীরা : সমাজের প্রত্যন্ত এলাকার অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়েপড়া এবং অবহেলিত পরিবারের ঝরেপড়া শিশুর শিক্ষার আলো ছড়ানো একজন নিবেদিত আলোকিত মানুষ তালা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অহিদুল ইসলাম। বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণকারী বহুমূখি মেধার অধিকারী এ তরুন শিক্ষা কর্মকর্তা ঢাকা কলেজ থেকে এইচ.এস.সি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্সসহ মাস্টার্স পাস করে চাকুরি পান উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পদে। ২০০৫ সালে পটুয়াখালির বাউফল উপজেলায় যোগদান করে দেখতে পান সমাজের প্রত্যন্ত এলাকার অবহেলিত পরিবারের শিশুরা পড়ালেখা হতে ঝরেপড়ে বেছে নেয় পূর্ব পুরুষের পেশা-মাছ ধরা, কৃষি কাজ করা ও দিনমজুরসহ অন্যান্য পেশা। জ্ঞান, প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক ভাবে দেশ ও জাতি উন্নতি লাভ করলেও ভাগ্যের চাকার কোন পরিবর্তন হয় না এসব অবহেলিত পরিবারের। শিক্ষা ব্যবস্থা ধনীশ্রেণির দখলে চলে যায়। ফলে সমাজ শাসিত হয় ধনীশ্রেণির শিক্ষিত মানুষ দ্বারা আর শোষিত হয় এসব অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়েপড়া অবহেলিত পরিবার। সমাজের এই বৈষম্য দূর করার হাতিয়ার হিসাবে তিনি বেছে নেন একমাত্র শিক্ষা।
নতুন নতুন সংযোজিত যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্নপত্রের কাঠামোর ধারণা প্রদান, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানকে আকর্ষনীয়করণের নতুন কৌশল , শতভাগ শিশুভর্তি , উপস্থিতি বৃদ্ধি, ঝরেপড়া হ্রাস এবং পড়ালেখায় পিছিয়েপড়া দুর্বল শিশুদের বিশেষপাঠদান বিষয়ে সকল শিক্ষককে পেশাগত দক্ষতাবৃদ্ধির প্রশিক্ষণ দেন তিনি। বিদ্যালয়কে আকর্ষনীয় ও শিশুবান্ধব করার জন্য তিনি চালু করেন বিনোদনমূলক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। শিক্ষকদের কাজে গতিশীলতা আনয়নের জন্য তাদের বেতন-ভাতাদিসহ সকল প্রকার পাওনা পরিশোধ করেন যথাসময়ে। পেনশন, টাইমস্কেল,শ্রান্তিবিনোদন ও ইবিক্রসসহ কোন আর্থিক পাওনা পেতে বেগপেতে হয়না কোন শিক্ষককে। ঘুষ ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ছাড়াই শিক্ষকরা বদলি হন অতি সহজে। তিনি শিক্ষা অফিস হতে দূর করেন ঘুষ, দুর্নীতি ও সকল প্রকার হয়রানি। ফলে শিক্ষক ও সুবিধাভোগীরা শিক্ষা অফিস হতে পরিত্রান পান অযথা হয়রানির হাত হতে। এ কর্মঠ ও দক্ষ শিক্ষা কর্মকর্তার সকল কর্মস্থলে সততার সুনাম ছড়িয়ে রয়েছে আকাশ চুম্বী। শিক্ষকরা চাকুরি করেন নির্বিঘেœ। ফলে শিক্ষকরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে আগমন ও প্রস্থান করেন। তাঁর সকল কর্মস্থলে কর্মজীবনে রয়েছে তাঁর সততা, ন্যায়নিষ্ঠা,পেশাগত দক্ষতা, কর্মতৎপরতা ও অভিজ্ঞতার সুনাম। সরকারি দায়িত্বপালনে তিনি একজন নিবেদিত কর্মকর্তা। সরকারি সকল নির্দেশনা ও নীতিমালার আলোকে তিনি সম্পাদন করেন তাঁর দাপ্তরিক দায়িত্ব। তিনি একজন সৎ, নিষ্ঠাবান, দক্ষ, কর্মঠ ও দায়িত্ববান কর্মকর্তা হিসাবে সর্বত্র পরিচিত।
এ তরুন মেধাবী শিক্ষা কর্মকর্তার সৃজনশীল পরিকল্পনার ফলে সমাজে ছিন্নমূল, হতদরিদ্র ও অসহায় গরিব পরিবারের শিশুরা স্থান করে নেয় প্রাথমিক শিক্ষায়। শতভাগ শিশুভর্তি ও সকল শিশুর পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ফলে ছিন্নমূল, হতদরিদ্র ও অসহায় গরিব পরিবারের শিশুরা সুযোগ পায় উচ্চশিক্ষা গ্রহনের। সমাজ থেকে দুর হয় নিরক্ষরতা। কর্মক্ষেত্রে রয়েছে উক্ত শিক্ষা কর্মকর্তার ঈর্ষনীয় সুনাম ও সাফল্যতার উচ্চ আসন। প্রাথমিক শিক্ষার মান-উন্নয়নের ক্ষেত্রে তার গবেষণামূলক সৃজনশীল পরিকল্পনা গ্রহনের ফলে সারাদেশে অভিন্ন প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে দেশে প্রথম অনুষ্ঠিত ২০০৯ সালে ৫মশ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলা পরীক্ষার্থীর উপস্থিতি ও পাসের দিক দিয়ে জাতীয় পর্যায়ে প্রথমস্থান অধিকার করে। এরই ধারাবাহিকতায় তাঁর কর্মস্থল মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলা ২০১০ সালে ৫ম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষায় জাতীয় পর্যায়ে প্রথমস্থান, ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলা ২০১১ সালে জাতীয় পর্যায়ে ৫মস্থান এবং যশোর জেলার শার্শা উপজেলা ২০১২ সালে জাতীয় পর্যায়ে ৪র্থস্থানসহ ২০১৩ সালে জাতীয় পর্যায়ে ১মস্থান অধিকার করে।
দেশ স্বাধীনতার পর থেকেই তালা উপজেলা শিক্ষা অফিস ছিল ঘুষ, দুর্নীতি এবং হয়রানির স্বর্গরাজ্যে। ৩/৪ জন শিক্ষক নেতা ছিলেন এর মূল হোতা। তারাই ঘুষ, দুর্নীতি এবং হয়রানির কালো নকশার স্থপতি ছিলেন। অন্যদিকে বিদ্যালয়ের পাঠদান পরিহার করে শিক্ষকগণ চায়ের দোকান, হাট-বাজার এবং অফিস-আদালতে অধিকাংশ সময় ব্যয় করতেন। প্রাথমিক শিক্ষা থেকে তালা উপজেলা ছিল পিছিয়ে এবং অবহেলিত। আর এই কান্তিলগ্নে ২০১৬ সালের আগষ্ট মাসে তালা উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসাবে যোগদান করেন মো :অহিদুল ইসলাম। তিনি যোগদান করেই তালা শিক্ষা অফিস হতে দুর করেন সকল প্রকার ঘুষ, দুর্নীতি আর হয়রানির কালোথাবা। শিক্ষকদের করেন স্কুলমূখী। বৃদ্ধিপায় প্রাথমিক শিক্ষারমান। ঈর্ষনীয় উন্নয়ন ঘটে প্রশাসনিক এবং একাডেমিক সকল বিষয়ের। আর ২০১৬ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলে জেলায় স্থান করে দেন তালা উপজেলাকে। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে অহিদুল ইসলামের সাফল্যতা শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয়, দাপ্তরিক বর্নাঢ্য কর্মজীবনে রয়েছে তাঁর ঈর্ষনীয় যোগ্যতার স্বীকৃতি। তিনি প্রাথমিক শিক্ষায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট হতে ২০১২, ২০১৩ এবং ২০১৫ সালে গ্রহণ করেন জাতীয় শিক্ষা পদক।
তিনি ২০১২, ২০১৩, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে খুলনা বিভাগীয় পর্যায়ে নির্বাচিত হন শ্রেষ্ঠ উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসাবে। শুধু তাই নয়, ২০১৫ সালে জাতীয়পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসাবে নির্বাচিত হন মো :অহিদুল ইসলাম। প্রাথমিক শিক্ষার উপর তাঁর রয়েছে প্রকাশিত চারটি বইয়ের পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষার মান-উন্নয়নমূলক তথ্যবহুল বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধ।
অহিদুল ইসলামের মত নিবেদিত আলোকিত মানুষ এ সমাজে থাকলে জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে ছিন্নমূল, হতদরিদ্র ও অসহায় গরিব পরিবারের মানুষের আর অন্যদিকে দেশের নিরক্ষরতা দূর হয়ে জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখবে এ সকল অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়েপড়া এবং অবহেলিত পরিবারের মানুষ।