৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার প্রস্তুতি
কামরুল হোসেন মনি, খুলনা : খারাবাদ বাইনতলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ এর দশম শ্রেণির ছাত্রী রাবেয়া খাতুন কেয়া (১৫)কে ওই এলাকার যৌথবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যরা প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতেন। বিষয়টি ছাত্রীর ভাই মোঃ তারেক মাহমুদ প্রতিবাদ করায় তাকে ক্যাম্পের মধ্যে বেধড়ক মারপিট করেন। এ ঘটনায় এলাকাবাসী এগিয়ে আসতে চাইলে পুলিশ তাদেরকে গুলি করে মেরা ফেলার হুমকি দেন। মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে খারাবাদ বাইনতলা পুলিশ ক্যাম্পে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত হয়ে অভিযুক্ত ৫ পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নেন। এছাড়া দায়িত্বে অবহেলার কারণে ক্যাম্পের ইনচার্জসহ আরও ৬ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়। আহত তারেক মাহমুদকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
বটিয়াঘাটা উপজেলার আমীরপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মোঃ তারেক মাহমুদ বলেন, তার বোন মোসাঃ রাবেয়া খাতুন কেয়া খারাবাদ বাইনতলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী। প্রতিদিন স্কুলে ও স্থানীয় শুভেচ্ছা কোচিং সেন্টারে পড়তে যান। ওই ক্যাম্পের কয়েকজন পুলিশ সদস্য তার বোনকে বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্ত করতেন। তার বোন ছাড়াও আরও স্কুলের মেয়েকে একইভাবে উত্ত্যক্ত করেন। কারো কাছে ফোন নম্বর চায়, আবার বাসার ঠিকানাও জানতে চায়। এমনকি বাড়ির পিছুও নেয় পুলিশ সদস্যরা। এছাড়া হাবিবা নামে এসএসসি পরীক্ষার্থী এক মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতে করতে বাসার সামনে পর্যন্ত যায় এমনও অভিযোগ রয়েছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় বোনের কোচিং ছুটি হয়। এ সময় আমি দোকানের সামনে রোদ পোহাচ্ছি। ওই সময় আমার বোনসহ আরও কয়েকজ স্কুলছাত্রী ক্যাম্পের সামনে গেলে ছাদের ওপর থেকে পুলিশ সদস্যরা বিভিন্ন ভঙ্গিতে ইভটিজিং শুরু করে। আমার বোনকে দেখে আমি বলি তুই চলে যা, আমি দেখছি। তারিকের ক্যাম্পের সামনে কম্পিউটারের দোকান রয়েছে। দোকান খোলা রেখে বিষয়টি ক্যাম্পের ইনচার্জকে অভিযোগ করতে যায়। ওই সময় ক্যাম্পের ইনচার্জ না থাকায় সে পুলিশ সদস্যদের বলে আসে ভাই এভাবে ‘ব্যাক সাউন্ড’ দেওয়া ঠিক না বলে আবারও দোকানে চলে আসে। তার কিছুক্ষণ পর এক পুলিশ সদস্য তাকে ক্যাম্পে আসার জন্য বলে। দোকানে কাজ থাকায় পুনরায় আরও ৫-৬ জন পুলিশ সদস্য দোকানে এসে দোকানের কম্পিউটার ও চেয়ার-টেবিল মাটিতে ফেলে দিয়ে তাকে মারতে মারতে ক্যাম্পের দিকে নিয়ে যায়। এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে ওই পুলিশ সদস্যরা বলে ‘কেউ এগিয়ে আসলে গুলি করে মেরে ফেলবো’। আর তারেককে ধাক্কা মেরে দোতলার ছাদ থেকে নিচে ফেলা দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় এলাকাবাসী স্থানীয় ক্যাম্পটি ঘেরাও করে রাখে। জানতে পেরে ৭নং আমিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান জিএম মিলন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বটিয়াঘাটার ওসি মোজাম্মেল হক মামুনকে অবহিত করেন। তিনি উপস্থিত হয়ে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানালে তারাও এসে উপস্থিত হন।
আহত ছেলের পিতা শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, আমার মেয়ে বাইনতলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী। খারাবাদ-বাইনতলা পুলিশ ক্যাম্পের সামনে থেকে কোচিংয়ে যাওয়ার সময় কনস্টেবল নাঈম, মামুন, রিয়াজ, আবির ও নায়েক জাহিদ প্রায় তাকে উত্ত্যক্ত করতো। ঘটনার দিন সকালেও তারা এ কাজ করেন। মেয়ে পুলিশ ক্যাম্পের সামনে আমার দোকানে বসা ছেলে তারেক মাহমুদকে বিষয়টি অবহিত করে। তারেক ক্যাম্প ইনচার্জ এএসআই তারেকুজ্জামানকে বিষয়টি জানাতে যায়, কিন্তু তিনি না থাকায় দোকানে চলে আসে। পরে অভিযুক্ত ওই ৫ পুলিশ বিষয়টি জানতে পেরে দোকানে এসে তারেককে মারধর করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। এ সময় দোকানে ভাঙচুরও চালায় তারা। খবর পেয়ে স্থানীয়রা ক্যাম্প ঘেরাও করে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ইভটিজিং এর ঘটনার সাথে জড়িত নায়েক জাহিদ (কঃনং-৪২৪), নাইম (কঃনং-২২০৮), সুমন্ত (কঃনং-২২৯৭), রিয়াজ (কঃনং-৯৮৫), আবির (কঃনং-১৬৮৩)। তাদের বিরুদ্ধে ৪-৫ জন ইভটিজিংয়ের শিকার লিখিতভাবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানায়। তাৎক্ষণিক ওই ৫ পুলিশ সদস্যকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়। এছাড়া দায়িত্বে অবহেলার কারণে ক্যাম্প ইনচার্জ তারিকুজ্জামান, কনস্টেবল আরিফ (১), আরিফ (২), তানভির, ইসতিয়াক, হুমায়ুন ও বকুলকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়।
বটিয়াঘাটা থানার ওসি মোজাম্মেল হক মামুন এ ব্যাপারে প্রতিবেদককে জানান, ওই ঘটনার সাথে জড়িত থাকায় ৫ পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া দায়িত্বে অবহেলার কারণে ওই ক্যাম্পের ইনচার্জসহ আরও ৬ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বটিয়াঘাটা উপজেলার ৭নং আমিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিএম মিলন বলেন, পুলিশ সদস্যরা ইভটিজিং এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন – এখন তারাই স্কুল পড়–য়া মেয়েদের ইভটিজিং করে আসছেন। তাহলে এলাকার সাধারণ মানুষ কার কাছে বিচার দেবে। তিনি বিষয়টি বটিয়াঘাটার ওসি ও ক্যাম্প ইনচার্জকে অবহিত করার পর তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন। তারা তাৎক্ষণিক বিষয়টির ব্যবস্থা নিয়েছেন। এছাড়া অভিযুক্ত ৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ইভটিজিং এর শিকার স্কুলছাত্রীরা লিখিত আকারে অভিযোগ দেন।
স্থানীয় ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আলী আহম্মেদ আকুঞ্জি বলেন, ওই ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যরা বিভিন্ন সময় স্থানীয় নিরীহ মানুষকে হয়রানি করতো। এছাড়া কোন কারণ ছাড়াই যে কাউকে ধরে নিয়ে আসতেন। ক্যাম্পের সামনে দিয়ে মেয়েরা স্কুলে বা কোচিংয়ে গেলে নানা ভঙ্গিমায় ইভটিজিং করতেন।