ইভিএম থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ

প্রকাশঃ ২০২৩-০৪-০৬ - ১৭:২৯

ইউনিক ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ৮ মাস বাকি। নির্বাচন কমিশন (ইসি) এ নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। রাজনৈতিক দলগুলোও নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচনের ভোট পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক এড়িয়ে সবার আস্থা অর্জনের কৌশল গ্রহণ করে ইসি। এ জন্যই ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ভোট গ্রহণ থেকে সরে এসে ৩০০ আসনেই ব্যালটে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর ইসির সিদ্ধান্তকে সকল রাজনৈতিক দল, দেশী-বিদেশী মহল এবং দেশের সর্বস্তরের মানুষ ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে।

বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ইভিএমে ভোট গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দেয়। এক পর্যায়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৩০০ আসনেই ইভিএমে ভোট করার দাবি জানানো হয়। আর আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল বিএনপি শুরু থেকেই ইভিএমে ভোটের বিরোধিতা করে ৩০০ আসনেই ব্যালটে ভোট করার দাবি জানায়। এক পর্যায়ে ইভিএমে ভোটের বিষয়ে মতামত নিতে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করে ইসি।

নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৯টি দল ইসির মতবিনিময়ে অংশ নেয়। এর মধ্যে ১৭টি দল ইভিএমের পক্ষে আর ১২টি দল বিপক্ষে মত দেয়। আর ১০টি দল মতবিনিময়ে অংশ নেয়নি, যারা সবাই ইভিএমের বিপক্ষে অবস্থানকারী। ইভিএমের পক্ষে অবস্থান করা দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগসহ চারটি দল নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে সরাসরি মত দেয়। আর ১৩টি দল অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই করে ইভিএমে ভোট করার পক্ষে মত দেয়।

ইসির মতবিনিময়ে অংশ নিয়ে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ ১২টি দল ইভিএমের বিপক্ষে মতামত দেয়। অন্যদিকে মতবিনিময়ে অংশ না নেয়া বিএনপিসহ ১০টি দল ইভিএমের বিরোধিতা করে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে তাদের অবস্থান জানায়। তাই সার্বিক পরিস্থিতিতে ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে সন্দেহ ও অবিশ্বাস আছে, নির্বাচন কমিশন সেটা দূর করতে এ বিষয়ে ইউটার্ন নেয়।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইভিএমে হবে কি হবে না এ নিয়ে যখন সারাদেশে বিতর্ক তুঙ্গে এমন পরিস্থিতিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল জানিয়েছিলেন, কোন পদ্ধতিতে ভোট হবে  সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের, অন্য কারও নয়। তবে রাজনৈতিক দলসহ যে কেউ তাদের প্রস্তাব দিতেই পারেন। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে আমরা স্বাধীন।

ইভিএমে ভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টির পরও ইসি ইভিএমের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় রাজনৈতি বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে। তারপরও ইসি কর্মকর্তারা বলতে থাকেন,  ভোট কেন্দ্র দখল, একজনের ভোট আরেকজনের দেয়া, আগের রাতেই ভোট দেয়া ও ভোটের পর ফল পরিবর্তন বন্ধ করতে ইভিএম সর্বোত্তম পদ্ধতি। তাই তারা সবার আস্থা অর্জনে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয়। তবে ইভিএমে ভোট গ্রহণের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করলেও ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট নেওয়ার সক্ষমতা নেই। তবে ১০০ আসনের প্রস্তুতি রয়েছে।

এক পর্যায়ে ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয় নতুন ২ লাখ ইভিএম কেনার অর্থ বরাদ্দ পেলে তারা ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণ করতে পারবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার সময়ও তারা ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করার কথা বলে। কিন্তু নতুন ইভিএম কেনার জন্য ৮ সহস্রাধিক কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ার পর তারা জানায় ৫০ থেকে ৬০ আসনের বেশি আসনে করা যাবে না। পরে ইসির হাতে থাকা দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে ৪০ হাজার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাকি ১ লাখ ১০ হাজার ইভিএম সংস্কারের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ চায়।

কিন্তু তাও না পাওয়ায় এবং বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দল ইভিএমের চরম বিরোধিতা করায় শেষ পর্যন্ত সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে ৩০০ আসনেই ব্যালটে ভোট করার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। তাদের এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে নেয় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষ।

নির্বাচন কমিশন ৩০০ আসনে ব্যালটে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর সরকারি দল আওয়ামী লীগ স্বাগত জানায়। বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধীদলও বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে নেয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মহলও ইসি স্বাধীনভাবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টিকে সাধুবাদ জানায়।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সংস্থা। তারা স্বাধীনভাবে যে সিদ্ধান্ত নেয় রাজনৈতিক দলগুলো তা মেনে চলতে বাধ্য। সে কারণে ইসি ইভিএমের পরিবর্তে ব্যালটে ভোট নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে আমরা স্বাগত জানাই। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার আবদুর রহমান বলেন, বিএনপির দাবি ছিল ব্যালটে ভোট। নির্বাচন কমিশন ব্যালটে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই আশা করি এবার বিএনপি নির্বাচনে আসবে।

এ বিষয়ে বিএনপি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, আমরা আগে থেকেই ইভিএমের বিরোধিতা করে এসেছি। কি কারণে ইভিএমে ভোট নিয়ে সন্দেহ রয়েছে তার যথাযথ কারণও ব্যাখ্যা করেছি। এখন নির্বাচন কমিশন ইভিএমে ভোট না করে ৩০০ আসনে ব্যালটে করার সিদ্ধান্ত নিলেও এ বিষয়ে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই, তাই এ নিয়ে ভাবছি না। কারণ, দেশের মূল সংকট এখন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার।