মোসলেহ উদ্দিন, উখিয়া, কক্সবাজারঃ ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে না উঠতেই ভারী বর্ষণে প্লাবিত হয়েছে উখিয়ার ১৮টি গ্রাম। প্রায় ৫শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে হাজারো পরিবার। নিঃস্ব অসহায়+ পরিবারগুলো বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। এ সময় পাহাড় ধ্বসে ও পানিতে পড়ে ২ শিশু নিহত হয়েছে, নিখোঁজ রয়েছে ১ কিশোর। সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সরেজমিন ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা ঘুরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, বুধবার সকাল ১০টা থেকে মুষলধারে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এ সময় পাহাড়ী ঢল ও জোয়ারের পানি একাকার হয়ে বন্যার আকার ধারণ করে। প্লাবিত হয়ে পড়ে এ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের প্রায় ১৮টি গ্রাম। বন্যায় পালংখালী ইউনিয়নের আনজুমানপাড়া, রহমতেরবিল, ফারিরবিল, বালুখালী, ধামনখালী, নলবনিয়া, তেলখোলা, মোছারখোলা এলাকার শতাধিক ও জালিয়াপালং, রতœাপালং, হলদিয়াপালং, রাজাপালং ইউনিয়নের আরো ২ শতাধিক সহ প্রায় কাঁচা আধাপাকা আরো ২ শতাধিক কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এসব পরিবারের লোকজন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিকটতম আত্মীয় স্বজনের কাছে আশ্রয় নিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী পালংখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি এমএ মনজুর জানান, বুধবার রাত ১০টার দিকে আনজুমানপাড়া গ্রামে পাহাড় ধ্বসে ঘর চাপা পড়ে মোঃ সরওয়ারের ছেলে রাব্বি নামের ৭ বছর বয়সী এক শিশু ঘটনাস্থলেই মারা গেছে। জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি গ্রামের জাফর আলমের কন্যা, কোটবাজার আয়েশা ছিদ্দিকা বালিকা মাদরাসার ছাত্রী ছমিরা আক্তার (১৪) এর লাশ স্থানীয় গ্রামবাসী গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পার্শ্ববর্তী খাল থেকে উদ্ধার করেছে বলে জালিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী জানিয়েছেন। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সে মাদরাসায় যাওয়ার পথে পানির স্রোতে ভেসে যায়।হলদিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ আলম জানান, রেজু খালের মোহনায় মনির মার্কেট এলাকায় প্রচন্ড স্রোতের টানে চৌধুরীপাড়া গ্রামের অমূল্য বড়–য়ার ছেলে ইতুন বড়–য়া (১৪) নিঁেখাজ রয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। এদিকে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের পানের ছড়া, সাদৃকাটা, বালুখালী কাস্টমস্ ও থাইংখালী এলাকায় সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ার কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। প্রায় শতাধিক গ্রামীণ সড়ক বিধ্বস্ত হয়ে পড়ার কারণে জনজীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত কোন ত্রাণ সামগ্রী পৌছানো হয়নি বলে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় এলাকার অধিকাংশ মানুষ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের জন্য তিনি জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাঈন উদ্দিন জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের তালিকা করার জন্য জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।