খুলনা : খুলনায় চলমান সর্বকালের বৃহত্তম কর্মযজ্ঞ। এই কর্মকাণ্ড শেষ হলে দেশের অন্যতম তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত হবে খুলনা। কেসিসি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এই উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের তদারকি নিজেই করছেন। দিচ্ছেন পরামর্শ, প্রয়োজনে কঠোর হচ্ছেন। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা:) এর শাসন আমলের কর্মপদ্ধতির পদাঙ্ক অনুসরণ করে রাতে-দিনে নিরন্তর তিনি বিচরণ করে চলেছেন।
এ বিষয়ে নগরীর কাস্টমঘাট এলাকার করিম খাঁ বলেন, “মিয়ররে অনেকখানিই খলফা উমুরির মতো লাগতি লাগে” [মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের কার্যক্রম অনেকাংশেই খলীফা ওমরের অনুরূপ]। “যহনি দেহি নুড়াই বেড়াচ্ছে। এই বয়সে এত কাম করে কেমনে” [যখনই দেখি দৌঁড়ায় বেড়াচ্ছে। এই বয়সে এত কাজ করে কিভাবে]
১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত খুলনা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বিভাগীয় সিটি কর্পোরেশন হিসেবে রূপ নেয়। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের আয়তন ৪৫ বর্গকিলোমিটার আর ১৯১৭ সালে এর জনসংখ্যা ছিল পনের লক্ষ। এ সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ২০ লক্ষে পৌঁছেছে। ১৯৮৪ সালে খুলনা নগরীর মর্যাদা লাভ করে। পরে ১৯৯০ সালের ৬ আগস্ট খুলনাকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করা হয়। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন অন্যতম নেতা। ২০১৮ সালে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি দলীয় এমডি মনিরুজ্জামান মনিকে পরাজিত করে দ্বিতীয় দফায় বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হন। তারপর থেকেই শুরু হয় খুলনায় উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ। রূপসা নদীর তীর ঘেষে গড়া ওঠা নগরীকে রূপসী সাজে সজ্জিত করতে চলছে তার নিরলস পরিশ্রম।
করোনার ভয়াবহতা তাকে থমকে দিতে পারেনি। কোভিডের সেই অতিমারীর মধ্যেও তিনি মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। করোনাকালে থেমে থাকা উন্নয়ন দ্রুত সম্পন্ন করতে নগরীর ৪৫ বর্গকিলোমিটার জায়গায় চলছে দৃশ্যমান কর্মযজ্ঞ। যথাযথ ভাবে কাজ হচ্ছে কিনা তা তিনি নিজেই তদারকি করছেন। দিচ্ছেন পরামর্শ, প্রয়োজনে কঠোর হচ্ছেন। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা:) এর শাসন আমলের কর্মপদ্ধতির পদাঙ্ক অনুসরণ করে রাতে দিনে নিরন্তর তিনি বিচরণ করে চলেছেন।
চলছে মহানগরীর উন্নয়নে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) ব্যাপক কর্মকান্ড। নির্বাচনে দেয়া প্রতিশ্রুতি, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন, জরাজীর্ণ সড়ক মেরামত, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নসহ তিনটি মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এ ছাড়া আরও চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে। মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে ‘খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক আরও একটি মেগাপ্রকল্প। খুলনাবাসী মনে করে প্রকল্পগুলো পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হলে নগরবাসী একটি তিলোত্তমা নগরী হিসেবে খুলনায় বসবাসের সুবিধা পাবে। বদলে যাবে নগরীর সার্বিক দৃশ্যপট। কেসিসি সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ১৫ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তালুকদার আব্দুল খালেক দ্বিতীয় দফায় মেয়র নির্বাচিত হন। পূর্ববর্তী মেয়রের মেয়াদকাল শেষে ওই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরপরই তালুকদার আব্দুল খালেক নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ আনেন। পরবর্তীতে আরও ৫টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ আনা হয়। বর্তমানে ৭টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে আরও একটি মেগাপ্রকল্প।
সূত্র জানায়, সিটি মেয়র দায়িত্ব গ্রহণের পর অবৈধ দখল উচ্ছেদে পদক্ষেপ নেন। প্রশাসনের সহযোগিতায় নগরীর ২২ খাল ও ময়ূর নদীর তীরে বহুতল ভবনসহ যত স্থাপনা ছিল তা ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। সূত্র জানায়, দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় ও লকডাউনের কারণে নগরীর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে চলমান প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ পুরোদমে চলছে। সিটি মেয়র নিজে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ পর্যবেক্ষণ করছেন।
কেসিসির প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবিরুল জব্বার জানান, শহরের তুলনায় রূপসা নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে পারে না। এ কারণে শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ৮২৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে ‘নগরীর ড্র্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন’ প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ এগিয়ে চলেছে। প্রকল্পের আওতায় প্রধান সড়কের পাশে ও বিভিন্ন ওযার্ডে ২২০ দশমিক ১৬ কিলোমিটার ড্রেন সংস্কার করা হচ্ছে। ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদকাল। ৬০৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৯৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের কাজ রয়েছে শেষের পথে। এ প্রকল্পের মধ্যে ৭৮ কিলোমিটার সড়ক কার্পেটিং, ১৫১ কিলোমিটার সড়ক আরসিসি ঢালাই ও ৩৩ কিলোমিটার সড়ক সিসি ঢালাই দেয়ার কাজও শেষের পথে রয়েছে। নগরীর ২০টি গুরুত্বপূর্ণ মোড় উন্নয়ন, সৌন্দর্যবর্ধন ও কিছু যানবাহন কেনার প্রস্তাব রয়েছে প্রকল্পে। তিনি জানান, নগরী বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নে ৩৯৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা, বর্জ্য দিয়ে ডিজেল তৈরির জন্য ৬৫ কোটি টাকার বরাদ্দ মিলেছে। ওই প্রকল্পের আওতায় রাজবাঁধ ও শলুয়া এলাকার বর্জ্য ডাম্পিং পয়েন্টের উন্নয়ন ও বর্জ্য রিসাইকেলিংয়ের মাধ্যমে ডিজেল তৈরির কাজ করা হবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ৮ কোটি টাকা এবং বিএমডিসির ফান্ড (বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড) থেকে ৪৫ কোটি টাকার কাজ চলছে। জলবায়ু মোকাবেলায় মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়া গেছে আরও তিন কোটি টাকা। কয়েকটি প্রকল্পে এডিবি, বিশ্বব্যাংক, জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জার্মান উন্নয়ন সংস্থা, নেদারল্যান্ডসের উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, মন্ত্রণালয়ে পাসের অপেক্ষায় রয়েছে ‘খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প। এই মেগা প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা।
কেসিসি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, খুলনা মহানগরীকে সর্বাঙ্গীন সুন্দর তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত করতে সর্বদা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমার নির্বাচনী ইশতেহারের ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ করেছি। আগামী মাসে আরো অনেক কাজ দৃশ্যমান হবে। আর এটা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নে সব সময় আন্তরিক বলে।