এবার সাইকেল চালিয়ে হজযাত্রায় চার কেনিয়ান

প্রকাশঃ ২০১৯-০৩-১৬ - ১৫:৩১

ধর্মপাতা : সাইকেল চালিয়ে হজে যাওয়ার চেষ্টা ইদানীং বাড়ছে। গত বছর নয়জন ব্রিটিশ নাগরিক এভাবে ইংল্যান্ড থেকে সৌদি গিয়ে পবিত্র হজব্রত পালন করেন। ইন্দোনেশীয় একটি পরিবারও হজের উদ্দেশ্যে সাইকেলযাত্রা শুরু করেছেন বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে। সে ধারাবাহিকতায় চার কেনিয়ান নাগরিকও সাইকেল চালিয়ে হজের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছেন। সাইকেলে হজযাত্রায় প্রত্যাশী দলের সদস্যদের প্রত্যেকেই পুরুষ। তারা হলেন মোহাম্মদ জহির (দলপতি), ওসমান ইদরিসা, মোহাম্মদ সালিম ও আনোয়ার মানসুর। কেনিয়া থেকে যাত্রা শুরু করে তারা ইথিওপিয়া ও উত্তর সুদান অতিক্রম করবেন। এরপর ফেরিতে করে লোহিত সাগর  পাড়ি দিয়ে সৌদির জেদ্দা বন্দরে পৌঁছবেন। সেখান থেকে তারা পবিত্র হজ পালনে মক্কায় পৌঁছবেন। তাদের আশা, দৈনিক ১০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রমের মাধ্যমে তারা ৪৫ দিনের ভেতর মক্কায় গিয়ে পৌঁছুতে পারবেন। তাদের সফরের সার্বিক তথ্য জানাতে তারা ‘পেডাল টু হজ’ নামে একটি ওয়েবসাইট খুলেছেন। সেখানে তারা তাদের কর্মপরিধি, যাত্রালক্ষ্য ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য তথ্য সংক্ষেপে উল্লেখ করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, ‘পেডাল টু হজ’ গ্রুপে চারজন সাইক্লিস্ট রয়েছেন। কেনিয়াতে মৌলিক শিক্ষায় সামর্থ্য রাখে না, এমন শিশুদের শিক্ষার জন্য তহবিল সংগ্রহের জন্য তারা এভাবে হজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। দলটি আশা করছে, সবকিছু ঠিক থাকলে জুনের ১০ তারিখে তারা কেনিয়া থেকে হজের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন। সে লক্ষ্যে তারা নিজেদের প্রস্তুতও করেছেন। টানা পঁয়তাল্লিশ দিন দীর্ঘ সাইকেল ভ্রমণ করে নিজেদের ঝালিয়ে নিয়েছেন। পাহাড়ি এলাকায় সাইকেল নিয়ে কসরত করে মোটামুটি প্রস্তুতি নিয়েছেন। এই যাত্রায় তারা কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে নির্মাণাধীন ‘আল-ফুরকান টাওয়ার’ প্রকল্পের জন্য তহবিল সংগ্রহ করবেন। এরপর অবশিষ্ট অর্থ দিয়ে তারা কেনিয়ার নামাঙ্গা ও মাইলি তিশায় ‘আল-ফুরকান ইনস্টিটিউট ইন কেনিয়া’ (এটিআই) পরিচালনার জন্য ভবণ নির্মাণ করবেন। সে জন্য তাদের প্রয়োজন আড়াই লাখ মার্কিন ডলার। তারা আশা করছেন, এ যাত্রায় তারা নির্দিষ্ট ও কাক্সিক্ষত অর্থ সংগ্রহ করতে পারবেন। প্রসঙ্গত ‘আল-ফুরকান ইনস্টিটিউট’টি কেনিয়ার ধর্মীয় শিক্ষা ও জাগতিক শিক্ষার মিশেলে তৈরি যুগোপযোগী একটি শিক্ষানিকেতন। এখানে শিক্ষার্থীদের আবাসিক থাকার ব্যবস্থা এবং তাদের যাবতীয় খরচ বহন করার পাশাপাশি অন্যান্য প্রয়োজনীয় সব রকম সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে নির্মাণাধীন ‘আল-ফুরকান টাওয়ার’ আফ্রিকা থেকে সাইকেলযাত্রায় পবিত্র হজ পালনে রওনা হতে যাওয়া এটি প্রথম কাফেলা। কেনিয়ার নাইরোবি থেকে মক্কা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার মাইল পথ অতিক্রম করতে হবে তাদের। তারা গন্তব্যস্থল ও পথঘাটের মানচিত্র ইত্যাদিও সংগ্রহ করেছেন। সাইকেলে হজযাত্রায় প্রত্যাশী চার কেনিয়ানের সংক্ষিপ্ত পরিচয়-

মোহাম্মদ জহির

তিনি ‘পেডাল টু হজ ২০১৯’র প্রতিষ্ঠাতা ও মাহাদুদ দাওয়াহ্ সংগঠনের সদস্য। কেনিয়ার মুম্বাসাতে জন্মগ্রহণ করলেও নাইরোবি বেড়ে ওঠেন এবং স্থায়ী নিবাস গড়ে তোলেন। এর আগে অনেক দাতব্য ইভেন্টের প্রতি তার সমর্থন ও সক্রীয়তা দেখা গেছে। তার সবচেয়ে বড় নিবেদন ও কর্ম হলো ‘আল-ফারুকান ইনস্টিটিউট’র অভাবগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বাত্মক সহায়তা। তিনি তার সাইক্লিং দক্ষতার ক্ষেত্রে হাশিম ‘জুজু’ ও কেনিয়ান প্রশিক্ষক আবদি ইউসুফের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

মোহাম্মদ সালিম

মুম্বাসায় জন্মগ্রহণকারী সালিম একজন ফুটবল খেলোয়াড় ও উৎসাহী সাঁতারু হিসেবে তার স্পোর্টিং ক্যারিয়ার শুরু করেন। দরিদ্র শিশুদের শিক্ষার জন্য ‘পেডাল টু হজ ২০১৯’র প্রচারাভিযানের সময় তিনি পেশাদার সাইক্লিংয়ের সুইচ তৈরি করেন। পবিত্র হজযাত্রার আগে নির্ধারিত দীর্ঘ সড়কে সালিমের পারফর্ম অব্যাহত ছিল। তিনি তার বন্ধু মোহাম্মদ জহিরের অনুপ্রেরণায় এবং সাইক্লিং কোচ হাশিম ‘জুজু’র প্রশিক্ষণে এ যাত্রায় যেতে প্রবল উৎসাহী হয়ে ওঠেন।

ওসমান ইদরিসা দিন্দা

ওসমান ইদরিসা দিন্দা একজন পেশাদার বাইক মেকানিক। সাইক্লিংজগতে তিনি দীর্ঘ পনের বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। সাইক্লিংয়ের মাধ্যমে স্বতঃস্ফুর্ত আত্মযতœ ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা তৈরি হয় বলে তিনি এটি খুবই পছন্দ করেন। ওসমান তার দৃঢ়চেতা মনোভাব, পেশাদার কর্মনীতি ও আত্মিক ব্যবহারের মাধ্যমে দলের মনোভাব চাঙ্গা করতে সদা তৎপর।

আনোয়ার মানসুর

আনোয়ার মনসুরের জন্ম মুম্বাসায়। ১৯৯৮ সাল থেকে তিনি সাইক্লিংয়ের পেশা গ্রহণ করেন। কারণ তিনি তরুণ সাঁতারুদের কোচ এবং স্থানীয় বান্দারি সুইমিং ক্লাবের কোচিং সহকারী হিসাবে পার্টটাইম চাকরিতে নিয়োগ হয়েছিলেন। বর্তমানে আনোয়ার পেশাগত ক্যারিয়ার হিসেবে সাইক্লিংয়ে যুক্ত রয়েছেন। তিনি ‘টিম আরবিক কেনিয়া’র অধীনে সাইক্লিং করছেন। ‘হজ পেডাল’র সঙ্গে হজ সম্পন্ন করা ও আল-ফুরকানের অভাবগ্রস্ত শিশুদের শিক্ষাকে সমর্থন করা তার সর্বোচ্চ লক্ষ্য।