ক্রীড়া প্রতিবেদক : শক্তি, নামে-ভারে, পরিসংখ্যানে সবকিছুতেই এগিয়ে বাংলাদেশ। ফেভারিট হিসেবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নেমেছিল তামিমের দল। সাকিব-হৃদয়ের ব্যাটিং দৃঢতায় নিজেদের ওডিআই ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ। এমন রেকর্ডগড়া ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে রেকর্ড ৩৩৮ রান তুলে বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে সব উইকেট হারিয়ে ১৫৫ রানের বেশি করতে পারেনি আইরিশরা। ১৮৩ রানের বড় জয়ে নতুন রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ। এটিই ওডিআই ইতিহাসে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়।
শনিবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেওয়া ৩৩৯ রানের বড় লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকে দুর্দান্ত খেলতে থাকে দুই ওপেনার পল স্টার্লিং ও স্টিফেন ডোহেনি। এই দুজন মিলে প্রথম ১০ ওভারেই স্কোরবোর্ডে ৫১ রান তুলে ফেলে।
এরপর দলীয় ৬০ রানের মাথায় আইরিশদের প্রতিরোধ ভাঙে সাকিব। ১২তম ওভারে ৩৮ বলে ৩৪ রান করে উইকেটের পেছনে মুশফিককে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ডোহেনি। এরপর ২ রানের মাথায় সাফল্য এনে দেন পেসার এবাদত। দুর্দান্ত খেলতে থাকা স্টার্লিংকে উইকেটের পেছনে মুশফিকের ক্যাচে পরিণত করেন এবাদত। ৩১ বলে ২২ রান করে সাজঘরে ফেরেন স্টার্লিং।
প্রথম উইকেটের পর দ্বিতীয় উইকেট তুলে নিতেও খুব বেশি সময় নেননি এবাদত। দলীয় ৬৮ রানের মাথায় হ্যারি ট্র্যাক্টরকেও মুশফিকের ক্যাচে পরিণত করেন এবাদত। ৮ বলে ৩ রানে করে ফেরেন হ্যারি। এরপর সাকিব-এবাদতের সঙ্গে যোগ দেন পেসার তাসকিন। তুলে নেন আইরিশ অধিনায়ক বালবার্নির উইকেট। দলীয় ৭৩ রানে বালবার্নিকে বোল্ড করে আইরিশদের পাহাড়সম চাপে ফেলেন তাসকিন।
চতুর্থ উইকেটের পর পঞ্চম উইকেট হারাতেও খুব বেশি সময় লাগেনি সফরকারীদের। তাসকিনের বলে দলীয় ৭৬ রানের মাথায় সামনে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে স্লিপে রাব্বির হাতে ধরা পড়েন ট্র্যাক্টর। সবমিলিয়ে তাসকিন-এবাদতের জোড়া আঘাতে চাপে পড়ে যায় সফরকারীরা।
এরপর কার্টিস ক্যাম্পারকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন জর্জ ডকরেল। তবে তাতেও খুব একটা লাভ হয়নি। দলীয় ১০৯ রানের মাথায় ক্যাম্পার ও ১১৮ রানের মাথায় ডোহেনির উইকেট হারায় সফরকারীরা। এরপর বাকি ব্যাটাররা আর তেমন কোনো সুবিধা করতে না পারায় ১৫৫ রানে অলআউট হয় আয়ারল্যান্ড। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ চারটি উইকেট নিয়েছেন পেসার এবাদত। স্পিনার নাসুম তিনটি ও তাসকিন আহমেদ দুটি উইকেট নিয়েছেন।
এর আগে ব্যাট হাতে বাংলাদেশকে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন দুই ওপেনার তামিম-লিটন। যদিও দলীয় ১৫ রানের মাথায় উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন অধিনায়ক তামিম। ৯ বলে ৩ রান করে মার্ক অ্যাডাইর এর শিকারে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফেরেন এই বাঁহাতি ব্যাটার।
এরপর লিটনের সঙ্গে জুটি গড়েন আরেক টপঅর্ডার নাজমুল হোসেন শান্ত। ৩৪ রানের জুটি গড়ে দলীয় ৪৯ রানের মাথায় ফিরে যান ওপেনার লিটন। ক্যাম্পারের ব্যাক অফ লেন্থের বলে শর্ট কাভারে স্টার্লিংকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লিটন। ৩১ বলে ২৬ রান করে আউট হন এই ডানহাতি ব্যাটার।
এরপর সাকিবকে নিয়ে জুটি গড়েন নাজমুল শান্ত। তবে লিটনের বিদায়ের পর শান্তও বেশিক্ষণ ক্রিজে থিতু হতে পারেননি। দলীয় ৮১ রানের মাথায় ম্যাকব্রাইনের বলে বোল্ড আউট হন এই বাঁহাতি ব্যাটার। ৩৪ বলে ২৫ রান করেন শান্ত।
শান্তর বিদায়ের পর নবাগত তৌহিদ হৃদয়কে নিয়ে ১৩৫ রানের জুটি গড়ে তোলেন সাকিব। এই দুই ব্যাটারের ব্যাটেই মূলত বড় স্কোরের ভিত পায় স্বাগতিকরা। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫৩তম ফিফটি তুলে দলীয় ২১৬ রানে ব্যক্তিগত ৯৩ রানে আউট হন সাকিব। ৭ রানের জন্য ওয়ানডেতে নিজের দশম সেঞ্চুরির দেখা পেলেন না সাকিব।
সাকিবের বিদায়ের পর মুশফিককে নিয়ে নতুন করে জুটি গড়েন হৃদয়। এই দুই ব্যাটারের ব্যাটে বড় সংগ্রহের পথে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। ৮০ রানের জুটি গড়ে দলকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যান মুশফিক-হৃদয়। দলীয় ২৯৬ রানে ৪৪ রান করে বিদায় নেন মুশফিক। তার বিদায়ের পর টিকতে পারেননি তৌহিদ হৃদয়ও। ব্যক্তিগত ৯২ রানে বোল্ড আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন হৃদয়। শেষপর্যন্ত লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের প্রচেষ্টায় স্কোরবোর্ডে ৩৩৮ রানের বেশি তুলতে পারেনি বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট নিয়েছেন গ্রাহাম হিউম।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ৩৩৮/৮ (তামিম ৩, লিটন ২৬, শান্ত ২৫, সাকিব ৯৩, হৃদয় ৯২, মুশফিকুর ৪৪, ইয়াসির ১৭, তাসকিন ১১, নাসুম ১১*, মুস্তাফিজ ১*; অ্যাডাইর ১০-০-৭৭-১, হিউম ১০-০-৬০-৪, ম্যাকব্রাইন ১০-০-৪৭-১, ক্যাম্পার ৮-০-৫৬-১, ট্রেক্টর ৬-০-৪৫-০, ডেলানি ৬-০-৫০-০)
আয়ারল্যান্ড : ৩০.৫ ওভারে ১৫৫/১০ (ডোহেনি ৩৪, স্টার্লিং ২২, বালবার্নি ৫, ট্রেক্টর ৩, ট্রাকার ৬, ক্যাম্পার ১৬, ডকরেল ৪৫, ডেলানি ১, ম্যাকব্রাইন ০, হিউম ২*, অ্যাডাইর ১৩, ; মুস্তাফিজ ৬-০-৩১-০, তাসকিন ৬-২-১৫-২, নাসুম ৮-০-৪৩-৩, সাকিব ৪-০-২৩-১, এবাদত ৬.৫-০-৪২-৪)
ফলাফল : বাংলাদেশ ১৮৩ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : তৌহিদ হৃদয়