কপিলমুনি (পাইকগাছা) : মাদকের নীল ছোবলে বিষাক্ত হয়ে পড়েছে কপিলমুনি। প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে মাদকের বিকিকিনি হলেও প্রতিকারে আশানুরূপ কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বরং প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ব্যবসায়ীরা জীবন ধবংসকারী এ কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। ফোন করলেই বাড়িতে এমনকি তার গন্তব্য স্থানে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে এই মাদক। মাদকের ভয়াল থাবায় আক্রান্ত হয়ে এলাকায় বসবাসকারী অধিকাংশ তরুণ বিপথগামী হয়ে পড়েছে। ফলে একদিকে অপরাধের প্রবণতা যেমন বাড়ছে অন্যদিকে তরুণদের একটি অংশ দিক নির্দেশনাহীন হয়ে চরম সংকটে পতিত হচ্ছে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কপিলমুনি মাদক দ্রব্যের মধ্যে সব চেয়ে বেশী চলে ফেন্সিডিল, হিরোইন, ইয়াবা ও গাঁজা। এখন মাদক ব্যবসা চলছে ডিজিটাল স্টাইলে। মোবাইলে অর্ডার করলেই হোম ডেলিভারী দেয়া হচ্ছে মাদকদ্রব্য। এখন মোবাইল ম্যাসেজের মাধ্যমে অর্ডার করলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই মাদক পৌঁছে যায় সেবন কারীদের হাতে। এ সুবিধা পেতে হলে আগে নাম রেজিস্ট্রেশন করতে হয় সরবরাহকারীদের মোবাইলে। নাম এন্ট্রি থাকলে ম্যাসেজ পাঠালেই হাতের নাগালে পৌঁছে যায় মাদক। অপিরিচিত কেউ ম্যাসেজ পাঠালে ওই সিম বন্ধ করে অন্য সিম সক্রিয় করা হয়। সরাসরি মোবাইলে কল করেও তাদের পাওয়া যায় না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোটর সাইকেলে এক দল তরুণ-যুবক এ হোম ডেলিভারির জমজমাট ব্যবসা করে যাচ্ছে। এ সার্ভিস নেয়া অধিকাংশ মাদকের গ্রাহকই তরুণ-যুবক। দেশের নানা প্রান্তে মাদক দ্রব্য ছড়িয়ে দিতে সীমান্তবর্তী জেলা হিসেবে খুলনা জেলার কপিলমুনিকে বেছে নিয়েছে ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, কপিলমুনির পুলিশ ফাঁড়ি সন্নিকটে অবস্থিত কাঠ গোলা, ব্রীজ রোড, কালীবাড়ী ঘাট, পালপাড়া রোড, বালুর মাঠ ও কলেজ লেক এসব স্থানে সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে নেশা খোরদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর কাশিমনগর ও প্রতাপকাটীর কয়েকটি পয়েন্টে ফেন্সিডিল, গাঁজা ও ইয়াবা মজুদ করে সেখান থেকে উল্লে¬খিত স্থান সমূহে নিয়ে ফেরি করে রাস্তায় কিংবা মোড়ে তা বিক্রি অথবা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। কপিলমুনির শতকরা প্রায় ৭০ ভাগই যুবক আজ মরণ নেশায় আসক্ত কেউ বা ফেন্সিডিল কেউ বা ইয়াবা ও গাাঁজাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্যর প্রতি আসক্ত হচ্ছে। নেশার টাকা জোগাড় করতে তারা বেছে নিচ্ছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই সহ অন্যান্য আরও অনেক অপরাধ মূলক কর্মকান্ড। মাঝে মধ্যে স্থানীয় ফাঁড়ি পুলিশ লোক দেখানো দুই একটি অভিযান পরিচালনা করলেও মাদকের বড় ধরনের চালান উদ্ধার তো দূরের কথা, বরং অভিযান কালে এক, দু-পুরিয়া মাদক সহ যাদেরকে আটক করা হয় পরবর্তীতে ঠিক কি কারণে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয় তা এলাকাবাসী বধোগম্য নয়। আবার ঘটনার সময় স্থানীয় সাংবাদিক বৃন্দ তথ্য সংগ্রহে গেলে তাদের সাথে বিভিন্ন রকম তালবাহানা করা হয়। উল্লে¬খ্য, বিগত দিনে কপিলমুনি পুলিশ ফাঁড়িতে যোগদান কৃত অফিসার ইনচার্জদের ব্যাপক অভিযানে অত্র এলাকা থেকে আশানুরূপ মাদক দ্রব্য উদ্ধার হলেও বর্তমানে তা জিরো ট্রালারসে নেমে গেছে। ফলে বর্তমানে কপিলমুনিসহ আশপাশ এলাকায় মাদকের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর মাদকদ্রব্য সহজলভ্য হওয়ায় তরুণ ও যুবকদের নিয়ে অভিভাবকরা এখন উদিগ্ন। ‘কপিলমুনিতে মাদকের রমরমা কারবার চলছে’ স্থানীয় প্রশাসন মাদকের সিন্ডিকেট গুলোর কাছ থেকে নিয়মিত উৎকোচ গ্রহণ করে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে অভিনব পদ্ধতির নেটওয়ার্কের রাঘববোয়ালরা এখনও রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এ ব্যাপারে সচেতন এলাকাবাসী এ দূর্বিসহ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চেয়ে পুলিশের উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।