করোনাকালীন সময়ে শিশুদের মানসকি স্বাস্থ্য

প্রকাশঃ ২০২০-০৭-১৯ - ১৮:০৮

সুজান্না লোপা বাড়ৈ : বর্তমান করোনার সংকটময় পরিস্থিতিতে মানুষের উদ্বেগ, উৎকন্ঠা যেমন বেড়েছে – রোগ নিয়ে ততখানি পাল্লা দিয়ে বেড়েছে জীবিকারও চিন্তা। ঘওে থাকাটা নিারপদ হলেও জীবিকার তাগিদে মানুষকে বের হতে হচ্ছে। যতখানি ভাবাচ্ছে পরিবার পরিজনের নিরাপত্তা ঠিক ততখানি ভাবাচ্ছে পরিবারের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, ভালো থাকা আর টিকে থাকার মনোজাগতিক লড়াইয়ে বেশিরভাগ মানুষই আজ মানষিক ভাবে বিপর্যস্ত। কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। পুরোপুরি আটকা একটা জীবন কাটাচ্ছে তার বিগত মার্চ ২০২০ মাস থেকে। প্রথম কয়েকটা দিন বেশ আনন্দেই কেটেছে – হয়ত। স্কুল ছুটি, পড়ালেখা নেই, নেই কোন ধরাবাধা নিয়ম। কিন্তু সময় যত একঘেয়েমি বন্দি জীবন তাদের মনের উপর ফেলতে শুরু করেছে বিরুপ ক্রিয়া। বন্ধুদের সাথে দেখা সক্ষাত নেই। সাইকেল চালানো, ফুটবল খেলা, ক্রিকেট খেলা, সাতার কাটা, বন্ধ হয়েছে সব। যাদের ভাইবোন রয়েছে তাদের দিনকাল কিছুটা সহনীয় হলেও যারা বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান তাদের একাকীত্ব গ্রাস করেছে। টিভি, মোবাইল আর কম্পিউটারে মুখ গুজে আর কতক্ষণ কাটানো যায়। এসব দিয়ে তো আর নিঃসঙ্গতা কাটানো যায়না, ঝগড়া, মারামারি করা না যায়, যদি প্রাণখুলে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে গল্প করা না যায় তাহলে একটা শিশুর মানষিক রোগী হতে বেশী সময় লাগেনা। এরপর শিশুটি যদি হয় কোন চাকুরীজীবি দম্পতির সন্তান। সারাদিন ঘরবন্দি সন্তানের মন ভরে ওঠে তখন বাবা-মায়ের প্রতি অজানা অভিমানে। সাথে শুধু হাত ধোও হাত ধোও, আর কতক্ষণ ভালো লাগে। এই করোনাকালীন সময়ে শিশুরা একাকিত্বে যে নিরবে নিভৃতে মানষিক রোগী হয়ে যেতে পাওে সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায়না। তাই এসময় অভিভাবকদের শত উৎকন্ঠায়ও শিশুদের দিতে হবে দুঃচিন্তামুক্ত, উজ্জল, প্রানবন্ত একটা সময়। এসব দুঃশ্চিন্ত, উৎকন্ঠা, মৃত্যুভয় থেকে তাদের রাখতে হবে অনেক দূরে। বাইরে যাই ঘটুক, যত দুঃশ্চিন্তাই ঘিরে থাকুক পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের শিশুদের সেসব থেকে দূরে রাখতে হবে। এসময়ে বাবা-মাকে পুরোপুরি হয়ে উঠতে হবে শিশুদের হারিয়ে যাওয়া বন্ধু। একসাথে হাসতে হবে কৃত্রিম ছোট ছোট দুষ্টমিভরা ঝগড়া করতে হবে, খেলতে হবে শিশুদের সাথে। বাবা-মা শিশুদের সাথে বিভিন্ন কম্পিটিশন করতে পারে – ড্রয়িং কম্পিটিশন, হাতেরলেখা ইত্যাদি। একসথে বসে গান গাওয়া, নাচ, লুডু খেলা, দাবা খেলা ক্যারম খেলা এমন আরও কিছু। এসবের ফাঁকে গল্পের ছলে তাদেরকে পুরোপুরি অভ্যস্থ্য করাতে হবে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্পর্কে। কিভাবে হাত ধুতে হবে, কখন ধুতে হবে, কতবার ধুতে হবে, কতক্ষল সময় নিয়ে হাত ধুতে হবে, পায়ে স্যান্ডেল পরা কেন জরুরী ইত্যাদি এমন সুন্দর করে তাদের রপ্ত করাতে হবে যে পরবর্তীতে আপনি যদি তাদের সামনে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল করেন – তারাই আপনাকে সতর্ক করবে। পুষ্টিকর খাবার কেন দরকার এটাও গল্পের ছলে তাকে শিখিয়ে দিন। প্রতিদিন অবশ্যই তাকে প্রার্থনা করতে উৎসাহিত করুন, সৃষ্টিকর্তার ভালোবাসা তাকে বোঝান, একসাথে বসে কিছু সময় ধর্মীয় আলোচনা করুন। সৃষ্টিকর্তার ভালোবাসা তাকে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করান। প্রতিদিন একসাথে ব্যায়াম করুন এবং অবশ্যই প্রতিদিন তাকে সাথে নিয়ে পড়তে বসান। তাকে প্রচুর উৎসাহ দিন। প্রসংসা করুন, মনে রাখবেন আপনার প্রশংসায় সে সামলে এগোনোর সাহস পাবে। আপনার উৎসাহে সে আরও আত্মবিশ^াসী হবে। কিন্তু আপনার সমালোচনায় বা ভর্ৎসনায় সে হীনমন্যতায় শেষ হয়ে যাবে। আর একসাথে সবকাজে এভাবে সময় কাটানোর মাধ্যমে আপনি হয়ে উঠবেন তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। চাকুরীজীবি বাবা-মায়ের উচিৎ দিন শেষে ঘরে ফিরে সারাদিনের রুটিন পড়ালেখা রান্নাবান্না সব ভুলে এককাপ গরম চা বা দুধ খেতে খেতে বাচ্চার সাতে এক ঘন্টা অন্তত গল্প করুন। যে কোন বিষয়। সে যা বলতে ভালোবাসে তাই শুনুন। মনোযোগ দিয়ে শুনুন। এরপর গল্পের ছলেই তাকে গাইডলাইন দিন। বিশ^াস করুন এই একটা ঘন্টা তার পুরো দিনের সর্বশ্রেষ্ঠ ঘন্টা হবে। চাকুরীজীবি বাবা-মায়েরা অফিস থেকে কিছুক্ষণ পরপর খবর নিন। অনলাইনে সুযোগ পেলে কথা বলুন।এ বিষয়ে শিশু বিশেষঞ্গ সিনথিয়া পাড়ই ,আদদীন আকিজ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ,খুলনা বলেন “এসময় শিশুদের পর্যপ্ত ঘুম দরকার। সুষম ও পুষ্টিকর খাবার যেমন ফলমুল ,শাকসবব্জি দুধ ডিম মাছ মাংস খাওয়ার সাথে সাথে পর্যপ্ত পানি পান করা দরকার।একই সাথে তাদের মানসিক চাপ থেকে মুক্ত রাখতে হবে এবং ব্যয়ম করা একান্ত জরূরী।”এভাবেই এই করোনাকালীন সময়ে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ, আমাদের সন্তানদের মানুষিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারবো এবং বাবা-মায়ের সাথে একটি চমৎকার সম্পর্কের ভিত্তি গড়তে পারবো যা সারা জীবনের জন্য অক্ষুন্ন হতে থাকবে।