ইউনিক ডেস্ক : করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোতে টাকার প্রবাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া চলমান প্যাকেজগুলোর মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি অর্থনীতি সচল রাখতে উৎপাদনশীল খাতে অর্থের প্রবাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোতে পড়ে থাকা অলস অর্থ কাজে লাগানোর চিন্তাভাবনা চলছে। আর করোনায় যারা চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে আছেন, তাদেরকে বিকল্প কর্মসংস্থানে আর্থিক সহায়তা জন্য একটি ফান্ড করার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে।
সূত্র বলছে, এরই মধ্যে ‘প্রো পুওর বন্ড বা দরিদ্রবান্ধব বন্ড’ নামে একটি নতুন বন্ড চালু করার জন্য সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই বন্ডের মাধ্যমে সংগ্রহ করা অর্থ চাকরি হারানো বেকারদের কর্মসংস্থানে ব্যয় করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, দেশের অর্থনীতি সচল রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা যথেষ্ট। বাংলাদেশ ব্যাংক চায়, মহামারি করোনায় অর্থনীতি ও জীবন দুটোই ভালো থাকুক।
বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, ব্যাংকগুলোর হাতে এখন প্রচুর তারল্য রয়েছে। এই তারল্য একদিকে কাজে লাগবে। অন্যদিকে করোনায় সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলো উপকৃত হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ব্যাংক খাতে এখন অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, করোনার আঘাতে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের অনেক শ্রমিক-কর্মচারী চাকরি হারিয়েছেন। এদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রো পুওর বন্ডের অর্থ ব্যবহার করা হবে। এটি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, করপোরেট গ্রুপ, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বিক্রি করা হবে। প্রাপ্ত অর্থ কম সুদে ও সহজ শর্তে ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী সংস্থাগুলোর মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে বিতরণ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাজারে বন্ড ছেড়ে অর্থ সংগ্রহ করা একটি ভালো উদ্যোগ । তবে এই অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকা জরুরি। তিনি উল্লেখ করেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাত কেমন হবে তা এখনও অনুমান করা যাচ্ছে না। তবে প্রথম ধাপের চেয়ে কঠিন। এতে জীবন ও অর্থনীতির দুটোরই ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আছে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারকে আরও বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে দেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে। জীবন আগে। তবে এতে অনেকেই হয়তো বেকার হবে। এক্ষেত্রে সরকার সজাগ আছে। প্রথম ধাপে অর্থনীতি সচল রাখতে সরকারের নেওয়া উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। আগের করোনায় বেকারদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য যে বন্ড চালু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে সেটারও সাধুবাদ জানান তিনি।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, দরিদ্রবান্ধব বন্ড চালুর পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীকে স্মরণীয় করে রাখতে ‘বঙ্গবন্ধু শতবর্ষী বন্ড’ চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। এটিও বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বহুজাতিক সংস্থার কাছে বিক্রি করে টাকা তোলা হবে। এসব টাকায় করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন খাতে অর্থায়নের জন্য ব্যবহার করা হবে। বলা হচ্ছে, এইসব বন্ড থেকে সংগৃহীত অর্থ শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত সব পর্যায়ে দরিদ্র ও যাদের অর্থের প্রয়োজন রয়েছে ওইসব খাতে পৌঁছে দিতে পারলে অর্থনীতিতে এর সুফল মিলবে।
অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তাব হলো- সাময়িকভাবে এসএমই (ক্ষুদ্র ও মাঝারি) খাতে আরোপিত করহার কমানো এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশ দেওয়ার হার পুনর্বিবেচনা করা।