।। ওসমান গনি।।
মহামারি করোনাভাইরাসের আক্রমণে আজ সারাবিশ্ব অস্থির। এই ভাইরাসের আক্রমণ থেকে বাদ যায়নি এশিয়া মহাদেশের ছোট্ট আয়তনের একটি বাংলাদেশ। যে দেশের লোক সংখ্যা প্রায় ১৮/২০ কোটি।
গত মার্চ মাস থেকে করোনাভাইরাস বাংলাদেশে আক্রমণ করে। ধাপে ধাপে পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম যখন বাংলাদেশে আক্রমণ করে তখন সরকার দেশের মানুষকে করোনাভাইরাসের আক্রমণ ও সংক্রমণ হতে রক্ষার জন্য সারাদেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে। সরকারের সেই বিধিনিষেধ কে মান্য করে দেশের মানুষ অনেকটা নিরবতায় ছিল। সারাদেশে লকডাউন, সামাজিক দূরত্ত ও পারস্পারিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার কারনে দেশ একটা ভাল অবস্থানের মধ্যে ছিল। মিল কারখানা, গার্মেন্টস, বড় বড় শপিং মল বন্ধ, গণপরিবহন বন্ধ এসব ই ছিল বাংলাদেশের জন্য আর্শিবাদ।
পরবর্তীতে যখন দেশের অর্থনীতির কথা, বহির্বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে, দেশের মানুষের জীবনযাত্রার কথা চিন্তা করে মিল কারখানা, গার্মেন্টস, শহরের বড় বড় শপিংমল গুলো খুলে দেয়া হলো, মানুষের জনসমাগম একত্র হতে শুরু করল, সামাজিক দূরত্ব, লকডাউন ভেঙ্গে কর্মের তাগিদে ঘর ছেড়ে রাস্তায় বেড়িয়ে গেল, গার্মেন্টস ও কলকারখানায় শ্রমিকরা কাজ আরম্ভ করল তখন থেকেই হুহু করে দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়তে লাগল। এ যেন দেশে নতুন করে করোনাভাইরাসের চাষ শুরু করল সরকার। যে হারে ফসল ফলতে শুরু করছে তার ধারা যদি চলমান থাকে সামনের দিনগুলোতে সরকার করোনা আক্রান্ত রোগীর বাম্পার সংখ্যা বা ফলন পেতে পারে।
করোনা মহামারির মধ্যে গার্মেন্টস কারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত শ্রমিকদের জীবনের ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। পাশাপাশি তা সমগ্র দেশের জন্য অকল্যাণ বয়ে আনতে পারে বলে মনে করেন দেশের সচেনতন মহল।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের আগের যাবতীয় উদ্যোগ বিফলে যেতে পারে বলেও মনে করেন সচেতন মহল।পোশাক কারখানা ও শ্রমিকদের অনেক গুলো বিষয় জড়িত। গার্মেন্টস কারখানা হচ্ছে শ্রমঘন একটি শিল্প। অধিকাংশ গার্মেন্টস শ্রমিক কম ভাড়ার ছোট বাসায় থাকেন, যেখানে একই রুমে কয়েকজনকে থাকতে হয়। এছাড়া একাধিক পরিবারকে একই রান্নাঘর এবং বাথরুম ব্যবহার করতে হয়। করোনা রোধে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাটা যেখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সেই দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে না।
সবচেয়ে বড় কথা হলো আমাদের দেশের গার্মেন্টস মালিকরা শ্রমিকবান্ধব না। মালিকের মুনাফার দিকেই বেশি নজর। বর্তমান পরিস্থিতিতে গার্মেন্টস খোলা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য বেশ খারাপ। প্রধানমন্ত্রী যখন মালিকদের প্রণোদনা দিয়েছেন শ্রমিকদের বেতন ভাতার নিশ্চয়তার জন্য, সেখানে এমন তড়িঘড়ি করা উচিৎ হয়নি, আরও কিছুদিন দেখা উচিৎ ছিল।
এখন বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে করোনা পরিস্থিতি শোচনীয়। দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা যখন বাড়ছে, বিশেষজ্ঞরা যখন মে মাসকে চরম ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন, ঠিক সেই সময়ে পোশাক কারখানা খুলে দিয়ে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেওয়া হলো।
এই দুর্যোগের সময় পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া চরম আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এটা নষ্ট পুঁজিবাদী ব্যবস্থার চরম দৃষ্টান্ত, যেখানে জীবনের কোনো মূল্য নেই, শুধু মুনাফাটাই বড় বিষয়। যদি সেখানে বড় ধরনের কোনো সংক্রমণ হয়, তাহলে শুধু শ্রমিকরা নয়, সমাজের অন্যান্যরাও আক্রান্ত হবে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কনভেনশন বিরোধী। স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও কারখানা খোলার ফলে বিশ্বের কাছে আমাদের পোশাক শিল্পের ভাবমূর্তি এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যদি শ্রমিকরা আক্রান্ত না হয় তবুও দেশের সুনাম নষ্ট হয়েছে। এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মনে করল বাংলাদেশের কাছে মানুষের জীবনের চেযে টাকার মূল্য বেশী। তানাহলে এই দুর্যোগ মুহুর্তে গরীব ও অসহায় মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা সম্ভব হতো না।