খুলনা : বকেয়া মজুরী প্রদানের দাবীতে ২৫ দিন বন্ধ থাকার পর খুলনার আন্দোলনরত ৬ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে উৎপাদন শুরু হয়েছে। আগামী রবিবার থেকে বকেয়া মজুরী-বেতন প্রদানের প্রতিশ্রুতিতে শ্রমিকরা বৃহস্পতিবার সকালে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ দিয়ে মিল চালু করেছে। এর আগে খুলনার ৬ পাটকলে সিবিএ-নন সিবিএ নেতারা গেটসভা মাধ্যমে মিল চালু করার ঘোষণা দিলে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোস সৃষ্টি হয়।
শ্রমিকরা মজুরী স্লিপ ছাড়া কর্মস্থলে ফিরে যাবে না বলে উত্তেজনার সৃষ্টি করে। এ সময় শ্রমিক নেতারা শ্রমিকদের নানা প্রতিশ্রুতি ও ১১ দফা আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষনা করলে বেলা সাড়ে ১০টায় প্লাটিনাম, সাড়ে ১১ টায় ক্রিসেন্ট, পোৗনে ১২টায় স্টার জুট মিলের শ্রমিকরা নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে যান। অন্যদিকে জেজেআই, ইষ্টার্ন ও আলিম জুট মিলের শ্রমিক নেতারা গেট সভার মাধ্যমে সকাল সাড়ে ১০টায় এ তিনটি মিলের উৎপাদন শুরু হয়।
মজুরী কমিশন বাস্তবায়ন মহার্ঘ ভাতা, বকেয়া মজুরী বেতন পরিশোধসহ ১১ দফা বাস্তবায়নের গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে খুলনা-যশোরাঞ্চলের ৮টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে শ্রমিক আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলন চলাকালে কয়েকটি মিলে মজুরী প্রদান করতে ব্যর্থ হন মিল কর্তৃপক্ষ। ফলে খুলনা-যশোর অঞ্চলের ৮ রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকলের শ্রমিকরা মিল বন্ধ করে দেয়।
একদিকে ১১ দফা অন্যদিকে সকল বকেয়া মজুরীর প্রদানের দাবীতে চলতে থাকে টানা ২৪ দিনের কর্মবিরতি। এই পরিস্থিতিতে খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের নেতৃত্বে গত বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত যুগ্ম শ্রম পরিচালকের দপ্তরে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পুলিশ প্রশাসন, ৬ মিলের প্রকল্প প্রধান ও সিবিএ-নন সিবিএ নেতারা বৈঠকে তাদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধসহ ১১ দফা দাবি মেনে নেয়ার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যর প্রতিজোর দাবী জানান।
এ সময় মিলের প্রকল্প প্রধানরা রপ্তানীকৃত পাটজাত পণ্যে বিক্রির টাকাসহ স্ব-স্ব মিলের ব্যাংক একাউন্টে রক্ষিত অর্থের হিসাব দেন। এছাড়া আগামী রোববার প্লাটিনাম ৩, ক্রিসেন্ট ৩, ষ্টার ৩, ইর্ষ্টান ১, আলীম ১ ও জেজেআই জুট মিল ২ সপ্তাহের মজুরী পরিশোধ করতে পারবেন বলে জানান। পরবর্তীতে সেলের টাকা পাওয়া গেলে পর্যাক্রমে বাকী বকেয়া পরিশোধ করা হবে বলেও উল্লেখ করেন প্রকল্প প্রধানরা।
সভায় শ্রমিক নেতরা প্রকল্প প্রধানদের প্রত্যখ্যান করে মিলের এ্যাকাউন্টে রক্ষিত টাকা শ্রমিকদের মজুরী, কর্মচারীদের বেতন ও ২০% মহার্ঘ ভাতার ৬০ ভাগ পরিশোধসহ সমুদয় অর্থ তিনটি ভাগ করার কথা বৈঠকে উপস্থাপন করেন। দীর্ঘ ৩ ঘন্টার এ বৈঠকে সিবিএ নেতারা আগামী রোববার মজুরী প্রদানের প্রতিশ্রুতিতে মিল চালানোর আশ^াস দেন। এছাড়া বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল সিবিএ-ননসিবিএ পরিষদের ডাকা রোববারের ৪৮ ঘন্টা মিল ধর্মঘট এক সপ্তাহর জন্য পিছিয়ে দেন।
ত্রি-পক্ষীয় বৈঠকের সিদ্ধান্তের পর সিবিএ নেতারা বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় মিল চালুর ঘোষনা দিয়ে চালু করতে ব্যর্থ হয়। এ সময় নেতারা শ্রমিকদের তোপের মুখে পড়ে। পরে পর্যাক্রমে মিলগুলো চালু হয়। আন্দোলনরত ৮ পাটকলের মধ্যে গত ১৮ জানুয়ারী খালিশপুর ও দৌলতপুর মিলের শ্রমিকরা দুটি করে মজুরী হাতে পেয়ে উৎপাদন শুরু করে। মিলগুলি চালু হওয়ায় গোটা শিল্পাঞ্চলে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। শিল্প এলকার ব্যবসায়ীদের মধ্যেও স্বস্তি লক্ষ করা গেছে।