ইউনিক ডেস্ক : কাউকে কাঁদতে দেখলেই আমরা মনে করি, নিশ্চয় মানুষটা খুব কষ্টে আছে। তাইতো আর সময় নষ্ট না তার কান্না থামাতে লেগে পরি। এমনটা করা কিন্তু একেবারেই উচিত নয়। মনে রাখবেন, কান্না মানেই সবসময় দুঃখ কিংবা খারাপ কিছু নয়। আনন্দের অতিশার্যেও মানুষ কেঁদে ফেলে। তাই যে কাঁদছে তাকে বরং আরও বেশি করে কাঁদতে দিন। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, কাঁদার সময় আমাদের শরীরের একাধিক উপকার হয়ে থাকে, যা নানাবিধ রোগকে দূরে রাখতে ভূমিকা রাখে। আর গবেষকরা বলেছেন, আসলে কেউ যখন কান্নাকাটি করে তখন শরীরের অন্দরে নানা পরিবর্তন হতে থাকে, যে কারণে নানা সুফল পাওয়া যায়।
কান্নার আরও নানা উপকারিতা-
ক্ষতিকর টক্সিন বেরিয়ে যায়
সারাদিন নানাভাবে কিংবা নানা কারণে আমাদের রক্তে ক্ষতিকর টক্সিক উপাদান মিশে থাকে। এসব ক্ষতিকর উপাদানগুলিকে যদি দেহ থেকে বার না করে দেওয়া যায়, তাহলে শরীরের উপর মারাত্নক কুপ্রভাব পরে। একাধিক গবেষণায় বিশেষজ্ঞরা লক্ষ করেছেন, কাঁদার সময় শরীরে উপস্থিত এসব টক্সিক উপাদান চোখের জলের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কোন ধরনের শারীরিক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে
২০১১ সালে ফুড মাইক্রোবায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুসারে, কাঁদার সময় চোখের জলের সঙ্গে লাইসোজাইম নামে একটি রাসায়নিক শরীর থেকে বেরিয়ে আসে। এই উপাদানটি ৫-১০ মিনিটের মধ্যে আমাদের শরীরে উপস্থিত প্রায় ৯০-৯৫ শতাংশ জীবাণুদের মেরে ফেলে। ফলে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।
দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটে
কান্নাকাটি করার সময় ল্যাক্রিমাল গ্ল্যান্ড থেকে বেরতে থাকা জল, চোখের অন্দরে জমে থাকা ময়লা বার করে দেয়। সেই সঙ্গে আইবল এবং আইলিডকে এত মাত্রায় লুব্রিকেট করে দেয় যে দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, আরেকভাবে কান্নার সময় আমাদের চোখের উপকার হয়ে থাকে। সেটা কিভাবে? চোখের জল, চোখের অন্দরে থাকা একাধিক মিউকাস মেমব্রেনকে তরতাজা করে দেয়। ফলে দৃষ্টিশক্তির বেড়ে যেতে একেবারে সময়ই লাগে না।
স্ট্রেস কমায়বেশ
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কান্নার সময় আমাদের শরীর থেকে টক্সিক উপাদান বেরিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণও কমে যেতে থাকে। যে কারণে মানসিক চাপ বা মনের দুঃখ কমে যায়। প্রসঙ্গত, বর্তমান সময়ে যে যে রোগের কারণে সবথেকে বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যু ঘটছে সারা দুনিয়ার তার বেশিরভাগের সঙ্গেই স্ট্রেসের সরাসরি যোগ রয়েছে। তাই সে দিক থেকে বলতে গেলে স্ট্রেস কমিয়ে আমাদের আয়ু বৃদ্ধিতে পরোক্ষভাবে কান্নার অবদানকে অস্বীকার করা সম্ভব নয়।
শরীর চাঙ্গা হয়ে ওঠে
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, কান্নার সময় “প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভ সিস্টেম” অ্যাকটিভেট হয়ে যায়। আর এমনটা হওয়ার কারণে সব ধরনের ব্যথা, যন্ত্রণা এবং শারীরিক কষ্ট কমে যেতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীর একেবারে চাঙ্গা হয়ে ওঠে। আসলে মনের কষ্টে চোখের পাতা যখন জলে ভরে যায়, তখন আমাদের কারও পক্ষেই শরীরের এই ছোট ছোট পরিবর্তনগুলি খেয়াল করা সম্ভব হয় ওঠে না। কিন্তু বাস্তবে আসলে এমনটাই হয়ে থাকে।
মনে ভারসাম্য ফিরে আসে
ইয়েল ইউনিভার্সিটির গবেষকদের করা এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, কাঁদার সময় আমাদের মনের চঞ্চলতা কমে যেতে শুরু করে। ফলে সুখ হোক কী দুঃখ, যে কারণেই চোখে জল আসুক না কেন, মনের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে কোন কষ্টই হয় না। তাই তো কান্নার পর আমাদের এতটা হলকা লাগে। মনে হয় বুকে আটকে থাকা একটা বড় আকারের পাথর যেন নেমে গেল।