ঢাকা অফিস : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কারাগারে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ শামীম আরজুর মৃত্যু স্বাভাবিক নয়; বরং এটি একটি হত্যা। শুক্রবার সাবেক ছাত্রনেতা শামীম আরজুর মৃত্যুতে দেওয়া এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব। আরজুর মৃত্যু প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, কারাভ্যন্তরে তাঁর মৃত্যু স্বাভাবিক নয়, বরং এটি একটি হত্যা। সরকারের নীলনকশা অনুযায়ী আরজুকে পৃথিবী থেকে চলে যেতে হলো। কারা কর্তৃপক্ষের চক্রান্তে আরজুর মৃত্যুর জন্য সরকারই দায়ী। কুষ্টিয়া জেলা বিএনপিকে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করতে তাঁর গতিশীল নেতৃত্বের জন্যই তিনি সরকারের প্রতিহিংসার শিকারে পরিণত হয়েছেন। সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, বর্তমান আওয়ামী সরকার দেশে পুরোনো বাকশাল ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন ও দেশকে গণতন্ত্রশূন্য করার লক্ষ্যে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যা, গুম ও তাদের বিরুদ্ধে অসত্য মামলা দায়ের করে পাইকারি হারে গ্রেফতারের মাধ্যমে কারাগারগুলো ভরে ফেলেছে। সত্যকে মিথ্যায় এবং মিথ্যাকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পুলিশ কাস্টডিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শেখানো বুলি বলানোর জন্য বিরোধী নেতাকর্মীদের রিমান্ডে নিয়ে ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হচ্ছে। পাশবিক নিপীড়ন-নির্যাতনে কারাগারে বন্দি অসুস্থ বিএনপির নেতাকর্মীদের বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হয়। হাসপাতালে ভর্তি করে তাদের জীবন বাঁচানোর কোনো চেষ্টা করা হয় না। নিষ্ঠুর দমনের বিভীষিকায় বাংলাদেশে বিরোধী শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার অভিযান চালানোর অংশ হিসেবে কারাগারে বন্দি বিএনপির নেতাকর্মীদের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, বলেন ফখরুল। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সরকারিপক্ষের দমন-পীড়নের কথা উল্লেখ করে বিএনপি নেতা আরো বলেন, কেউ যাতে টুঁ শব্দ করতে না পারে, সে জন্য কারাগারের ভেতরে-বাইরে চলছে বিরোধী দলের সক্রিয় নেতাদের জীবন হরণে নানাবিধ অমানবিক আচরণ। দুর্বিনীত দুঃশাসনের করাল গ্রাসে দেশবাসী অজানা আশঙ্কায়, আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা সরকারি দমননীতির শিকার হয়ে শুধু বাইরে নয়, মিথ্যা মামলায় কারাভ্যন্তরেও জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। একের পর এক কারাগারের ভেতরে বিএনপি নেতাদের জীবন চলে যাচ্ছে। বিবৃতিতে কারাগারে মৃত্যুবরণকারী শামীম আরজুর রুহের মাগফিরাত কামনা ও তাঁর শোকাহত পরিবার, শুভানুধ্যায়ী ও গুণগ্রাহীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান বিএনপির মহাসচিব। গত বৃহস্পতিবার কারাগারে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন শামীম আরজু। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে বিকেল ৪টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকার বলেন, বিকেল ৪টার দিকে শামীম আরজুকে জেলা কারাগার থেকে অসুস্থ অবস্থায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনার ১০ মিনিট পর তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি বলেন, ব্রেইন স্ট্রোকে আরজুর মৃত্যু হয়েছে। কুষ্টিয়ার জেল সুপার জাকের হোসেন বলেন, কারাগারে হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক এম এ শামীম আরজুকে চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কালেক্টরেট চত্বরে শহীদদের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে ফেরার পথে আরজুসহ বিএনপির ১০ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। পরের দিন নাশকতার মামলায় তাঁদের জেলহাজতে পাঠানো হয়। ওই মামলায় আরজু কারাগারে ছিলেন।