কুকুর নিধনে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশঃ ২০১৮-০৯-২৫ - ১৩:০১

পথে-ঘাটে কোমলমতি শিশুদের নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা

কামরুল হোসেন মনি : শিশু পুত্র ইব্রাহিম (৬) ও শিশু কন্যা মরিয়ম (৫) দুইজনই কুকুরের আক্রমণের শিকার। তাদের দুই হাতের মাংস তুলে নিয়ে যায় বেওয়ারিশ কুকর। এদের মধ্যে একজন ভোরে মাদ্রাসা থেকে বাড়ি ফেরার পথে অপরজন বাড়ির মধ্যে খেলা করার সময় কুকুর তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সোমবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে এ ঘটনা ঘটে। এমন অবস্থায় পথে-ঘাটে কোমলমতি শিশুদের নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। খুলনা জেনারেল হাসপাতালে চলতি মাসে এ পর্যন্ত নতুন করে কুকুরের আক্রমণের শিকার হয়েছেন এমন সংখ্যা ৩৬২ জন। গড়ে প্রতিদিন আক্রমণের শিকার হচ্ছে ১৫ জন। এর মধ্যে শিশু থেকে বয়স্করা রয়েছে। হাইকোর্টে কুকুর নিধনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় খুলনা সিটি কর্পোরেশনের হাত-পা বাঁধা। এর ফলে দিনকে দিন কুকুরে আক্রমণের শিকার মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
খুলনা জেনারেল হাসপাতালের সূত্র মতে, ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টা পর্যন্ত নতুন করে কুকুরের আক্রমণের শিকার হচ্ছে এমন সংখ্যা ৩৬২ জন। সে হিসেবে গড়ে প্রতিদিন ১৫ জনের মতো কুকুরের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। সোমবার সকাল ১১টা পর্যন্ত কুকুর আক্রমণের শিকার হয়ে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন নিতে আসেন ১২ জন।
ওই হাসপাতালে কুকুরের আক্রমণের শিকার হয়ে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন নিতে আসা ইব্রাহিমের মা জামিলা খাতুন বলেন, ছেলেটি প্রতিদিনের ন্যায় সোমবারও আরবী পড়ার জন্য মাদ্রাসায় যায়। আসার পথে কুকুর তার ওপর আক্রমণ চালায়। পথচারিরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে। মরিয়মের আত্মীয় রেখা আক্তার বলেন, ঘরে-বাইরে কুকুরের আক্রমণ থেকে কেউ রক্ষা পাচ্ছে না। মরিয়ম ঘরের বারান্দায় খেলা করছিলো। কোথা থেকে একটি কুকুর এসে তার হাতে কামড় দেয়।
হাসপাতালের সূত্রে জানা যায়, গত আগস্ট মাসে এক রাতে ২২ জন মানুষ একটি কুকুরের আক্রমণের শিকার হন। যাদের মধ্যে ৫ জনের কুকুরের কামড়ের ক্ষত খুবই ভয়ঙ্কর। এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত বিভিন্ন বন্যপ্রাণী আক্রমণের শিকার হয়ে জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয় ৩১৯৯ জন ব্যক্তিকে। বন্যপ্রাণী আক্রমণের মধ্যে কুকুরের সংখ্যা বেশি। দিনকে দিন কুকুরের আক্রমণের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আক্রান্তদের ওই রোগ প্রতিষেধক ওষুধ সরবরাহ চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ মোঃ রেজাউল করিম সোমবার এ প্রতিবেদককে বলেন, গত দুই বছর আগে কুকুর ও বন্যপ্রাণী নিধনের কার্যক্রমে কিছু বিধিনিষেধ জারী করেছেন। পাগলা কুকুর ছাড়া কুকুর নিধন বা অপসারণ করা যাবে না। কুকুরের আক্রমণের সংখ্যা বেড়েছে স্বীকার করে বলেন, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকায় আমাদের হাত-পা এক প্রকার বাঁধা। বর্তমানে কুকুর প্রজননের সময়। এ সময় কুকুরের রাস্তা-ঘাটে উৎপাত বেশি দেখা যায়। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়লেও আমাদের কিছুই করার নেই। তবে পাগলা কুকুর ক্ষেত্রে নিধন কার্যক্রম শিগগিরই চালানো হবে।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, জলাতঙ্কের প্রতিষেধক ভ্যাকসিন সরবরাহ আছে। তিনি বলেন, দিনকে দিন যে হারে কুকুর আক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে সেই তুলনায় মাঝে মধ্যে ভ্যাকসিন সঙ্কট পড়ে যায়।
উল্লেখ্য, গত ৬ আগস্ট রাতে নগরীতে পাগলা কুকুরের কামড়ে ২০ জন ব্যক্তি আহত হয়েছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিরা ১৯ থেকে ৬৬ বছর বয়সের মধ্যে। ওই দিন রাতে খুলনা সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। আক্রান্ত ব্যক্তিরা জানান, এর বাইরে আরও ১০-১২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তারাও বিভিন্ন জায়গায় প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন।