এসএম জামাল, কুষ্টিয়াঃ ‘ফিরে চল মাটির টানে’ স্লোগানকে সামনে রেখে কুষ্টিয়ায় ১০ রাতব্যাপী যাত্রা উৎসবের উদ্বোধন করা হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গনে এ উৎসবের উদ্বোধন হয়। জেলা শিল্পকলা একাডেমি এ উৎসবের আয়োজন করে। উৎসব চলবে আগামী ১৪ মার্চ পর্যন্ত। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক ও শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি মো. জহির রায়হান বলেন, যাত্রার এই সমৃদ্ধিকে ধরে রাখার জন্য এই আয়োজন করা। যাত্রা বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের আয়োজন অব্যাহত থাকবে এবং অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শিল্পক্ষেত্রে বিকশিত করতে এবং সুস্থ্যধারার সংস্কৃতি চালু রাখতে এ ধরনের অনুষ্ঠান প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করুন। জেলা শিল্পকলা যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পধারাটি বাঁচবে, অশ্লীলতার হাত থেকে আমাদের সংস্কৃতি রক্ষা পাবে।
ক্ষয়িষ্ণু সমাজকে কলুষিতমুক্ত করতে যাত্রাপালার কোন বিকল্প নেই বলেও উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুস্থ্য ধারার সাংস্কৃতিক চর্চা করতে সাংস্কৃতিক জনপদ এই কুষ্টিয়া সারাদেশে নেতৃত্ব দেবেন। দেশের মধ্যে দৃষ্টিনন্দন এই কুষ্টিয়া শিল্পকলা নির্মান করা হলে সেই স্বপ্ন পুরন হবে।
বিলুপ্তপ্রায় যাত্রাশিল্পীদের এ ধারা অব্যহত রাখতে সববাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানানো হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই অতিথিদের উত্তোরীয় পরিয়ে দেওয়া হয় এবং সম্মাননা স্মারক প্রদান করা অতিথির বক্তব্যে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি ও নজরুল একাডেমী জেলা শাখার সভাপতি আবদুর রশীদ চৌধুরী বলেন, গ্রাম বাংলার মানুষের বিনোদনের মুলেই ছিলো যাত্রাপালা। গ্রাম বাংলার বাস্তব চিত্র নিয়ে যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হতো।
বর্তমানে আর সেই যাত্রাপালা নেই। এখনকার মতো রেডিও টিভি, ও ইন্টারনেটের যুগে আগের মতো আর যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হয় না। তিনি আরও বলেন, যাত্রা হচ্ছে আমাদের লোকসংস্কৃতির সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী শিল্পমাধ্যম এবং এটা লোক শিক্ষারও বাহন। আরেক বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হাসান হাবিব বলেন, ঢোলের বাদক ও বাশির সুর আর আগের মতো নেই। এই শিল্পটাকে ধরে রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে আয়োজিত আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হাসান হাবিব, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারন সম্পাদক আমিরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক শাহীন সরকার, জেলা কালচারাল অফিসার সুজন রহমানসহ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট তামান্না তাসনীম, পার্থ প্রতীম শীল, আবু রাসেল ও জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উৎসবের ১০ দিনে ১০টি যাত্রাপালা মঞ্চস্থ হবে। রোববার প্রথম রজনীতে মঞ্চস্থ হয় ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’। আয়োজনকারী জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারন সম্পাদক আমিরুল ইসলাম জানান, অশ্লীল নৃত্য আর অসাধু ব্যবসায়িক চিন্তার প্রতিফলনে সভ্য সমাজের রুচিশীল মানুষকে যাত্রামুখী করতে এবং অপসংসস্কৃতির করালগ্রাসে বিলুপ্তপ্রায় যাত্রাশিল্পকে ধ্বংসের পথ থেকে বাঁচাতেই এমন উদ্যোগ।