কেউ কেউ অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আনতে চায় : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশঃ ২০২৩-০২-০২ - ১৪:১২

ইউনিক ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশের কেউ কেউ দু-চার বছরের জন্য জাতীয় সরকারের নামে অনির্বাচিত একটি সরকারকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিতে চায়। তারা বলছেন, দু-চার বছরের জন্য অনির্বাচিত কেউ রাষ্ট্র পরিচালনা করলে মহাভারত অশুদ্ধ হবে না। আমি বলবো-এতে মহাভারত অশুদ্ধ হোক বা না হোক আমাদের সংবিধান অশুদ্ধ হয়ে যাবে। এটা আমরা হতে দিতে পারি না।’

রাজধানীর ঐতিহাসিক বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বুধবার বিকেলে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে কিছু লোক আছে যাদের স্থিতিশীলতা পছন্দ করে না। তারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে ক্ষমতায় আসতে চায়। ক্ষমতায় আসার এত খায়েশ থাকলে তাদের রাজনীতি করে নির্বাচনে আসা উচিত। জনগণ ভোট দিলে তারা ক্ষমতায় আসবে।’

রাজধানীর বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে ঐতিহ্যবাহী এই বই মেলার আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত সাতটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচনসহ ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২২’ বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। এসময় প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানাও উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয়ী বাঙালি জাতি ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে বিশ্বে ঘাতকের জাতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। আমরা এখান থেকে আবার বিজয়ী জাতির মর্যাদা লাভ করি।’

একুশে বইমেলার ইতহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছাত্রজীবনে আমি ও আমার বান্ধবী বেবি মওদুদ নিয়মিত বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আসতাম। এখানকার লাইব্রেরি আমরা নিয়মিত ব্যবহার করতাম। তখন আমরা একত্রে প্রতিটি বইমেলায়ও আসতাম। এখন ইচ্ছা করলেই আমি স্বাধীনভাবে এ মেলায় আসতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর পায়ে শেকল পরতে হয়েছে। ফলে স্বাধীনভাবে এখন আর আগের মতো এখানে আসতে পারছি না।’

প্রধানমন্ত্রী পদকপ্রাপ্তদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের সাহিত্যের একটি অপরূপ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এগুলোকে সংরক্ষণ করে সাহিত্য চর্চা বাড়াতে হবে।’

নিয়মিত সাহিত্য মেলার আয়োজন করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চার প্রতি তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে হবে। তাহলে তরুণরা সব ধরনের মাদক, জঙ্গিবাদ ও অপকর্ম থেকে নিজেদের রক্ষা করে সৃজনশীল চর্চার দিকে আগ্রহী হবে।’

দেশের লাইব্রেরিগুলো ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পুরো বিশ্ব এখন ডিজিটাল হয়েছে। আমাদের লাইব্রেরিগুলো ও এতে সংরক্ষিত বইগুলোর ডিজিটাল ভার্সন চালু করা হলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাঠকরাও আমাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবে।’

বাংলা ভাষার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মাতৃভাষা বাংলা এখন সারা বিশ্বে সমাদৃত। ২১ ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ্ববাসী পালন করে আসছে। জাতিসংঘে জাতির পিতা বাংলায় বক্তৃতা দিয়ে বিশ্ববাসীর সামনে বাংলাকে তুলে ধরেন। এখন আমিও জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে জাতিসংঘে বাংলায় বক্তৃতা দিচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত হচ্ছে উল্লেখ করে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘২০০৭ সালে একবার কিছু সময়ের জন্য অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এসে দুই বছর ছিলে। ওই সময়ে দেশের অর্থনীতি, মানুষের জীবনমান, ব্যবসা-বাণিজ্য, মৌলিক ও মানবাধিকার সব কিছুতেই ধ্বস নেমেছিল। দেশব্যাপী একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তখন তারা দুই বছর পর একটি নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। ওই সময়টাও ওদের খেয়াল করা উচিত।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থেকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। দেশটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা ও বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে বসাতে কাজ করছি। আমরা ক্ষমতা ভোগ করতে কিংবা আঁকড়ে থাকতে আসিনি। আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করছি। করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না হলে আমাদের এ অগ্রযাত্রা কোনভাবেই থেমে থাকত না। আমাদের অগ্রগতি আরও হতো।’