কামরুল হোসেন মনি : খুলনা জেলা সদর কোর্টের পুলিশ ইন্সপেক্টর এর মুন্সী প্রভাষ চন্দ্র মল্লিক (কংনং-১০৫১) এর বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজের অজুহাত দেখিয়ে জেলা থানার জিআরও কাছ থেকে উৎকোচ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই স্থানে ৮-৯ বছর থাকার সুবাদে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করাসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন। কিন্তু সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীর একই স্থানে বেশিদিন চাকরি করার সুযোগ নেই।
গত কয়েকদিনের অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পাওয়া যায়। প্রভাষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জেলার জিআরও এর কাছ থেকে উৎকোচ নেওয়ার বিষয়ে তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলার সদর কোর্টের পুলিশ ইন্সপেক্টর এর মুন্সী প্রভাষ মামলার ডকেট ও সিডি জমা দেওয়ার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ম্যানেজের অজুহাত দেখিয়ে বিভিন্ন উপজেলা ও বিভিন্ন থানার সাব-ইন্সপেক্টরের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন কোর্টের ইস্যুকৃত ওয়ারেন্ট পুলিশ সুপারের মাধ্যমে সদর কোর্টে ইন্সপেক্টর মুন্সী প্রভাষের কাছে জমা হয়। তখন সে ওয়ারেন্টগুলো থানায় ডাকের মাধ্যমে না পাঠিয়ে তার মনোনীত কিছু এসআইদেরকে ডেকে মোটা অংকের অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে দিয়ে দেন। এছাড়া মুন্সী কনস্টেবল প্রভাষ বিভিন্ন জিআরও শাখা থেকে টাকা আদায় করে থাকেন। এর মধ্যে প্রতিদিন ও সপ্তাহে নির্দিষ্ট হারে টাকা আদায় করেন। এর মধ্যে রয়েছে জিআরও রূপসা কোর্ট এর কাছ থেকে ৩শ’ টাকা ও সপ্তাহে ৭৯০ টাকা, জিআরও ডুমুরিয়া কোর্ট থেকে প্রতিদিন ২শ’ টাকা ও সপ্তাহে ১ হাজার ২শ’ টাকা আদায় করেন। একইভাবে জিআরও তেরখাদা কোর্ট থেকে সপ্তাহে ৫৯০ টাকা, জিআরও দিঘলিয়া কোর্ট থেকে ৫৮০ টাকা, জিআরও ফুলতলা কোর্ট থেকে ৬৯০ টাকা, জিআরও বটিয়াঘাটা কোর্ট থেকে ৬৯০ টাকা ও জিআরও দাকোপ কোর্ট থেকে ৫৯০ টাকা সাপ্তাহিক হিসেবে চুক্তি অনুযায়ী উৎকোচ গ্রহণ করেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করার অজুহাত দেখিয়ে ওই সব জিআরও কাছ থেকে টাকা তোলেন। তার দাবিকৃত উৎকোচ না দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দোহাই দিয়ে বদলির হুমকি দেন। এসব বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কারণে অনেককে তার রোষানলে পড়ে বদলি হতে হয়েছে।
জানা গেছে, পুলিশ প্রশাসনের একই স্থানে দীর্ঘদিন থাকার নিয়ম নেই। সেই জায়গা থেকে ওই সব কর্মকর্তাকে সরকারি চাকরি নীতিমালা অনুযায়ী বদলি করতে হয়। দেখা গেছে, জেলা সদরের মুন্সী কনস্টেবল প্রভাষ ৮-৯ বছর একই স্থানে রয়েছেন। জিআরও দিঘলিয়া কোর্টের এএসআই দীপংকর। সে কনস্টেবল পদে থাকার পর থেকে এখন পর্যন্ত একই স্থানে তার ১৪-১৫ বছর কেটে গেছে। কিন্তু তাকে বদলি করা হয়নি। এছাড়া জিআরও দিঘলিয়া কোর্টে কনস্টেবল লুৎফর (কং-৫১৩), জিআরও ডুমুরিয়া কোর্টে কনস্টেবল তাইফুর (কং ৫৪১), জিআরও দাকোপ কোর্টে সামসুর (কং ৪৪৪)। তারা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে একই স্থানে কর্মরত আছেন। একই স্থানে দীর্ঘ বছর থাকার সুবাদে তারা বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন।
জেলা পুলিশ সুপার নিজামুল হক মোল্লা বলেন, সর্বোচ্চ একই স্থানে কোন কর্মকর্তা ২ বছরের বেশি থাকার নিয়ম নেই। অনেক সময় কোন কর্মকর্তাকে পারিবারিক অসুবিধা ও প্রশাসনের সুবিধার্থে রাখা হয়। তিনি বলেন, কোন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ কেউ লিখিতভাবে দিলে তা তদন্ত করে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। G2VAPE
খুলনা জেলা সদরের কোর্ট পরিদর্শক মোঃ মেজবাহ উদ্দিন বলেন, জেলা বিভিন্ন থানার মামলার আসামিদের নিরাপত্তার জন্য ব্যস্ত থাকি। জেলা সদরের কোর্টের পুলিশ ইন্সপেক্টরের মুন্সী প্রভাষ চন্দ্র মল্লিকের বিষয়ে কোন অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
খুলনা জেলার সদর কোর্টের পুলিশ ইন্সপেক্টর এর মুন্সী কনস্টেবল (কং ১০৫১) প্রভাষ চন্দ্র মল্লিক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রতিপক্ষ তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তিনি বলেন, আমি যদি সৎ বা ভালো কাজ না করতাম তাহলে কর্তৃপক্ষ আমাকে একই স্থানে দীর্ঘ বছর ধরে রাখতেন? আমার যোগ্যতা আছে বলে ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত একই স্থানে চাকরিরত আছি। কেউ যদি উপকার পেয়ে কিছু খুশি হয়ে টাকা দেয় ওইটা তো উৎকোচ বলে না। আমি একজনকে উপকার করেছি, তাই অনেকে খুশি হয়ে বকশিস দেন।