কয়রা(খুলনা): বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত লবনাক্ত জমিতে বারি বিটি বেগুন চাষ করে কয়রায় কৃষকেরা বেশ লাভবান হয়েছে। ভাল ফলন দেখে প্রতিবেশী অনেক কৃষক বেগুন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে এবং সেই মোতাবেক বেগুন চাষ করে কৃষক ভাল ফলন উৎপাদন করতে পেরে বেশ খুশি। স্থানীয় কৃষকরা আরো বেশি করে সহযোগিতা করার জন্য সরেজমিন কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউটের নিকট দাবি জানিয়েছে।
কয়রা উপজেলায় ঝিলিয়াঘাটা গ্রামের কৃষক মোঃ আব্দুল্যাহ সরদার বলেন,তিনি ইতি পুর্বে স্থানীয় জাতের বেগুন চাষ করতেন তাতে পোকার আক্রমন হত এবং বেগুন উঠানোর পর ৩ ভাগের ১ ভাগ কখন ও অর্ধেক পরিমান বেগুন পোকায় ছিদ্র থাকার কারনে বাদ দিতে হত। তাতে তারা মুল্য পেতাম না। এত করে কুষকদের ব্যাপক ক্ষতি হতো। বর্তমানে সরেজমিন গবেষনা বিভাগ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট দৌলতপুর,খুলনার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার পরামর্শে বারি বিটি বেগুন চাষ করে ভাল ফলন পেয়েছি। তিনি আরও বলেন,১৬শতক জমিতে একটি পরীক্ষামুলক প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করে তাতে বিটি বেগুন-২ জাতের চারা রোপন করি। জানুয়ারী থেকে প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৪/৫ মন বেগুন বিক্রি করতে পারছি। যা থেকে পরিবারের খাবার পরও এ থেকে অর্থ উপার্জন করে ভালভাবে সংসারে চালাতে পারছি বলে তিনি জানায়। সরেজমিন গবেষনা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল ও বৈজ্ঞানিক সহকারী জাহিদ হাসান বলেন,বেগুন-২ জাতের চারা রোপন করে স্থানীয় কৃষকরা ভাল ফলন পেয়েছে। তারা বিটি বেগুন চাষাবাদে স্থানীয় কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। তারা বলেন, বিটি বেগুনে পোকা না থাকায় এবং কোন কীটনাশক ¯েপ্র না করার কারনে বেগুন গুলো বাজারে নিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে বিক্রি হয়ে যায়। কৃষি গবেষনার উদ্যোগে কয়রার কৃষকদের উৎসাহিত করার লক্ষে লবনাক্ত এলাকায় বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে পানি সাশ্রয়ী উন্নত সেচ প্রযুক্তি শীর্ষক প্রশিক্ষন গত রবিবার অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা কৃষি অফিসার এস এম মিজান মাহমুদের সভাপতিত্বে প্রশিক্ষনে প্রধান অতিথি ছিলেন সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.আবেদা খাতুন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নাজমুন করিম ড. সুজিত কুমার বিশ্বাস,ড.খোকন কুমার সরকার, রেহেনা পারভীন রানু,বৈজ্ঞানিক সহকারী মোঃ জাহিদ হাসান ও বিটিভি সাংবাদিক দেওয়ান সিরাজ। প্রশিক্ষক পরিচালনায় করেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল শাহাদাৎ ।এতে কয়রার অনেক কৃষক হাতে কলমে ও ফিল্ডে প্রশিক্ষন গ্রহন করেন।
সরেজমিন কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.মোঃ হারুন-অর-রশিদ বলেন,বিটি বেগুন এটি কোন হাইব্রিড জাত নয় বিধায় কৃষকেরা নিজেরাই বিটি বেগুনের বীজ উৎপাদন ও বিপনন এব্ং সংরক্ষন করতে পারবেন। এ ছাড়াও জিন সমৃদ্ধ বিটি বেগুনের খাদ্যমান এবং রাসায়নিক উপাদান গুলো দেশী বিদেশী উন্নত গবেষনাগারে পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে মানুষের স্বাস্থ্য,জীবজন্তু কিংবা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক কোন উপাদান পাওয়া যায়নি। অতি সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থিত আন্তর্জাতিক মানের ল্যাবটেরীতে বাংলাদেশের বিটি বেগুনের নমুনা পরীক্ষা করে ননবিটি ও বিটি বেগুনের মধ্যে কোন পার্থক্য পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানায়। কয়রা উপজেলার এমএলটি সাইটের দায়িত্বরত বৈজ্ঞানিক সহকারি মোঃ জাহিদ হাসান বলেন স্থানীয় কৃষকদের বিটি বেগুনের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন,বিগত বছর ২জন কৃষককে প্রদর্শনী দেওয়া হয় । এ বছর ৪জন কৃষককে প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। বিটি বেগুন মাঠ পর্যায়ে জনপ্রিয় পরিবেশ বান্ধব স্বাস্থ্য সম্মত সহজেই চাষ করা যায় বীজ রাখা যায় কৃষকের জন্য একটি লাভ জনক প্রযুক্তি এ জন্য কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠছে।