ইমতিয়াজ উদ্দিন, কয়রা (খুলনা) : কয়রায় কর্মরত বৈধ সাংবাদিকের অনৈক্যে সাংঘাতিকরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রকৃত সাংবাদিকদের সীমাহীন হিংসা-বিদ্বেষ ও অনৈক্যের কারণে দিন দিন ভূয়া সাংবাদিকের উদ্ভব হচ্ছে। উপজেলার বেশকিছু বেকার ভবঘুরে ব্যাক্তি ধান্দাবাজির কৌশল হিসেবে পত্রিকা প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে কিংবা খুচরা বিজ্ঞাপন ও উপজেলার বিভিন্ন দপ্তর, থানা, ভূমি অফিস, বন বিভাগের অফিসসহ দূর্নীতির গন্ধমাখা অলিগলিতে হানা দিয়ে টু-পাইস কামিয়ে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও এসব সাংবাদিকদের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। কারণ, এসএসসি ও আন্ডার ম্যাট্টিক পাসরা কীভাবে সাংবাদিক হয়? সাংবাদিক পরিচয় দানকারি এসব সাংঘাতিক তৎপতরতা প্রদর্শনকারিদের কারণে পুরো সাংবাদিকতা পেশাটাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে। তাদের অপতৎরতায় মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সহজলভ্য কাজ হলো সাংবাদিক হওয়া-যার জন্য কোন যোগ্যতা, অভিজ্ঞতার প্রয়োজন পড়ে না। এদের অপতৎপরতায় সাধারণ মানুষ রীতিমত হতবাক হলেও মূলধারার সংবাদ কর্মীরা আশ্চর্যজনকভাবে নীরব। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কয়রা উপজেলায় সাংবাদিকদের মধ্যে কোন বৃহত্তর ঐক্য নেই। এই সাংবাদিকরা এতদিন ৩ ধারায় বিভক্ত ছিলেন। ইদানিং বিভক্তির ধারা আরো একধাপ বেড়েছে। রয়েছে তিনটি সংবাদিক সংগঠন বা প্রেস ক্লাব। এদের মধ্যে কয়রা প্রেস ক্লাব নামে ২টি ও কয়রা উপজেলা প্রেস ক্লাব নামে একটি সংবাদিক সংগঠন রয়েছে। আবার অনলাইন পোর্টালের সংবাদকর্মীরা মিলে আলাদা বলয় তৈরীর চেষ্টা করছে। এসব ক্লাবে একাধিক সদস্য থাকলেও পেশাদার সাংবাদিক হাতে গোনা কয়েকজন মাত্র। তবে উপজেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় বিভিন্ন অফিস-আদালতে এসকল ক্লাবের সদস্যদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে যেসকল নামের তালিকা দেয়া হয়েছে তার দুই-একজনের পত্রিকা থাকলেও অন্যদের পত্রিকার কোন খবর নেই। এ কারণে ওইসব হলুদ সাংবাদিকদের উপদ্রবে উপজেলার বহু সাংবাদিকরা সাধারণের কাছে হাঁসি-ঠাট্টার খোরাক হয়ে যাচ্ছে। তারা নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিতেও লজ্জা বোধ করেন। বৈধ সাংবাদিকদের অনৈক্যের কারণে কয়রায় সাংবাদিক ¯^ার্থ সংশ্লিষ্ট কোন ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচী কল্পনা করা যায় না। সাগর-রুনি ইস্যুতে দেশব্যাপী ঘোষিত কোন কর্মসূচী কয়রায় পালিত হয়নি। সাংবাদিকদের নামে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর বিষয়ে করো কলম গর্জে ওঠেনি। অতীতে অনেক সাংবাদিকের উপর পরিচালিত হামলা, ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের ঘটনায় নীরব ছিলেন সতীর্থরা। বর্তমানে সাংবাদিকদের এই অনৈক্য আরো চরম পর্যায়ে পৌছেছে। অনুষ্ঠান বর্জন, এক সংগঠন অপর সংগঠনের সদস্যদের নাম ধরে অনাকাংখিত সমালোচনা, পারষ্পরিক কুৎসা ইত্যাদি এখন অনেকের নিত্যনৈমিত্তিক অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এতে প্রশাসনের কতিপয় দুর্নীতিবাজ ও সমাজের অসৎ ব্যাক্তিবর্গ যেমন সুযোগ পাচ্ছে তেমনিভাবে লাই পেয়ে যাচ্ছে নতুন গজে উঠা সাংবাদিক নামধারী সাংঘাতিকেরা। এরা জোটবদ্ধ হয়ে বিবাদমান সাংবাদিকদের একেক গ্রæপের পেছনে গিয়ে অন্যগ্রæপের ক্ষতি করার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে। এদেরকে দালাল হিসেবে ব্যবহার করে একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ ব্যাক্তিবর্গ নিজেদের সুবিধা হাসিল করে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ মিলছে। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, অনেকে সাংবাদিকতার সাইনবোর্ডের আড়ালে দেদারসে চালিয়েযাচ্ছেন অপরাধ সিন্ডিকেট। রয়েছে ছিজনাল অবৈধ ব্যবসা। এমনকি সাংবাদিক সেজে দালালী পেশায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কয়রার নামকরা দেশদ্রোহী রাজাকারের সন্তানেরাও। রাজনৈতিক দলবাজির কারনে অনেক সাংবাদিক দলকানা একতরফা রিপোর্ট করতে সিদ্ধ হস্ত হয়ে উঠেছে। তারা মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের দলকে (দেশকে নয়) সেবা করতে চায়। সুযোগসন্ধানী সাংবাদিকরা এই পরিস্থিতি নিজেদের ¯^ার্থে ভালোভাবে কাজে লাগাচ্ছেন। শোনা যায়, এরকম সুযোগসন্ধানী সাংবাদিকদের অনেকেই কোনো কোনো আমলে হঠাৎ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যান, তা অনেকের চোখকেই পীড়িত করে। তবে এলাকার সুধীজনেরা বলেন, একজন অভিজ্ঞ সাংবাদিক তার প্রিয় রাজনৈতিক দলকে সহায়তা করতে চাইতেই পারেন। তবে তার রাজনৈতিক দায়িত্ব যেন সাংবাদিকতার পেশাগত দায়িত্ব নিরপেক্ষভাবে পালনে কোনো বাধা হতে না পারে। বা রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন যেন পাঠকের মধ্যে তার নিরপেক্ষতা সম্পর্কে কোনো বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে না পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ¯^নাম ধন্য এক পত্রিকার কয়রা উপজেলা প্রতিনিধি জানান, একসময় এ পেশার প্রতি সাধারণ ও সচেতন মহলের দুর্বলতা কাজ করত। অনেক সম্মান করত। এখন সাংবাদিকদের অনৈক্য ও এসব অযোগ্য সাংবাদিকদের কারণে পেশাদারিত্ব থেকে অনেকেই সরে আসছেন। কাজেই গণমাধ্যমের নীতিবান সাংবাদিকরা সত্যিই অসহায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুধি সমাজের একজন প্রতিবেদককে জানান, ঈদ বা অন্য কোন উৎসব আসলেই কয়েকজন সাংবাদিক উপজেলার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সরকারী বেসরকারী অফিসগুলোতে নামের তালিকা দিয়ে বেড়ায় বকসিসের জন্য। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে আরো বলেন, ওইসব হলুদ সাংবাদিকদের জন্য আজ উপজেলার প্রকৃত সাংবাদিকরা নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিতে বিব্রত বোধ করছেন। তবে ওইসব হলুদ সাংবাদিকদের ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও তিনি আশা ব্যক্ত করেন। উপজেলার কর্মরত বৈধ সাংবাদিকের অনেকেই সাংবাদিকদের অনৈক্যের জন্য উপজেলার সাংবাদিক নেতাদেরকে কিছুটা দায়ী করেন। তাদের মতে, কয়রা উপজেলায় এখন যারা বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃত্ব দেন তারা অনেকটা সংকীর্ণ মনের। আর তাদের জন্যই ঐক্য হচ্ছে না। তারা নেতার চেয়ার ধরে রাখতে বিরোধ জিইয়ে রাখেন।