পরিচালকের ফেয়ারঅয়েলে ৭৯ হাজার টাকা চাঁদা উত্তোলন
ইউনিক ডেস্ক : খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেপুটি নার্সিং সুপার রোকেয়া খাতুনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। গত রবিবার খুমেক পরিচালককে ফেয়ারঅয়েল দেয়ার নামে ৪৫০ নার্সের নিকট থেকে ৭৯ হাজার টাকা চাঁদা উত্তোলন করেন। পরিচালক পেয়েছেন একটি পাঞ্জাবি, পায়জামা, আতর, তসবীহ, টুপি, জায়নামায ও কোরআন শরীফ। আপ্পায়ন করা হয়েছে আপেল, পেটিস আর মিষ্টি।
গত ১২ মে নার্স দিবসে ৩ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা চাঁদা উত্তোলন করেন। হাসপাতালে কর্মরত ৪৮৫ জন নার্সের প্রত্যেকের নিকট থেকে ৫০০ টাকা করে এই চাঁদা নেয়া হয়। আর চাঁদা উত্তোলনকালে ক্যাশিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তারই সহযোগী হোসনেয়ারা খাতুন।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে খুমেকের কয়েকজন সেবিকা এসব তথ্য দেন। তারা বলেন, বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠানের নামে রোকেয়া এবং হোসনেয়ারা চাঁদা উঠিয়ে থাকেন। অনুষ্ঠানে নাম মাত্র খরচ দেখিয়ে বাকী টাকার একটা অংশ পরিচালককে দেন। পরে সমুদয় টাকা রোকেয়া এবং হোসনেয়ারা ভাগাভাগি করে নিয়ে থাকেন। তাদের নিকট হিসাব চাইলেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ৪৮৫ জন নার্সের নিকট থেকে ২ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টাকা উঠাবার পর স্কোয়ার ওষুধ কোম্পানিসহ মোট ৮টি কোম্পনির নিকট থেকে আরও ৮৫ হাজার টাকা চাঁদা নেয়া হয়। এতসব টাকার হিসাব চাইলেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ডেপুটি নার্সিং সুপার রোকেয়া খাতুন। কয়েকজন সেবিকা জানান, রোকেয়ার নিকট হিসাব চাইলেই তিনি বলেন, কেন্দ্রের থেকে আমাকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়েছে। আমি কেউকে হিসাব দিতে রাজি নই। রোকেয়ার দাপটে তার ক্যাশিয়ার হোসনেআরা একাই ৬টি দায়িত্ব পালন করছেন। যেখানেই টাকার সুবিধা আছে সেখানেই হোসনেয়ারাকে দায়িত্ব দেয় রোকেয়া। সাধারন নার্সরা টাকার হিসাব চাওয়াতে তাদের সাথে দুর্ব্যাবহার করে রোকেয়া এবং তার দোসর হোসনেয়ারা। টাকার হিসাব নিয়ে নার্সদের তোপের মুখে পড়েন রোকেয়া। তিনি একটা মিটিং ডেকে ঘোষণা করেন, কত টাকা উঠেছে প্রকাশ করতে রাজি নই। যে টাকা উঠেছে তার থেকে খরচ হয়ে আর অবশিষ্ট আছে ২৫ হাজার টাকা। উপস্থিত নার্সরা খাত অনুপাতে খরচ জানতে চাইলেও তিনি দিতে অস্বীকার করেন। টাকা তোলার আগে রোকেয়া বলেছিলেন কেক কাটা হবে ৩ বেলা। অর্থাৎ সকালে ১টা, দুপুরে ১টা ও রাতে ১টা। কিন্তু তা না করে ১টাই কেক কাটা হয় দুপুরে। তাছাড়া খাবার ব্যাবস্থাপনায়ও ছিল নানা জটিলতা।
গত রোজায় ঈদে যাকাতের কথা বলে সবার কাছ থেকে জোরপূর্বক থেকে সর্বনিম্ন ১০০ থেকে ১০০০ টাকা করে তোলে রোকেয়া ও তার দোসররা। এ বিষয়ে সাধারণ নার্সরা জানতে চাইলে রোকেয়া বলে, পরিচালকের নির্দেশ এই টাকা সমাজকল্যাণ তহবিলে জমা দেয়া হবে। এটা নিয়ে নার্স সমাজের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বরাজ করে। কিন্তু রোকেয়া ক্ষমতাসীন হওয়ায় এটা নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় নি। অদ্যাবধি সেই টাকার কোন হদিস নাই।
রোকেয়া খাতুনের দুর্নীতির সহযোগী হিসেবে কাজ করেন হোসনেয়ারাসহ কয়েকজন। নির্দিষ্ট এই কয়েকজনকে দিয়েই চলে তার অর্থ বাণিজ্য। যার কারণে হোসনেয়ারাকে ৬টি দায়িত্বে রেখেছেন রোকেয়া। তার মাধ্যমে তিনি প্রতি মাসে পেয়ে থাকেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। হোসনেয়ারার ৬টি দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে, এ্যাক্টিং সুপারভাইজার, ৯/১০ ওয়ার্ডের অলিখিত ইনচার্জ, লিডারশীপ টিম, ‘কোপ’ নামক প্রজেক্ট, আইপাস ও ইন্টারনার্সদের ক্লিনিক্যাল টিচার। এসব জায়গা থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে তিনি রোকেয়ার মনোরঞ্জন করেন। অন্যদিকে রোকেয়া খুশি রাখেন পরিচালককে। এভাবেই চলছে খুমেক।