খুমেক’র ডেপুটি নার্সিং সুপার রোকেয়ার দুর্নীতি-১

প্রকাশঃ ২০২৩-০৯-১১ - ১১:৪৯

ডর্মেটরী থেকে কোটি টাকার সম্পত্তি

জন্মভূমি রিপোর্ট : খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেপুটি নার্সিং সুপার রোকেয়া খাতুন। যার উত্থানের পেছনে রয়েছে অভাবনীয় এক ইতিহাস। চাকরি জীবনে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডর্মেটরীতে থাকলেও আজ সে নগরীর ইকবালনগরে কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তির মালিক। তার স্বামীর আয়ের কোন উৎস না থাকলেও তার এই সম্পত্তির উৎস তিনি নিজেই। ছেলেকে পড়াচ্ছেন গাজী মেডিকেল কলেজে। আর এসব অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন অবৈধ উপার্জন দিয়ে। একের পর এক দুর্নীতির মাধ্যমে এই অর্থ উপার্জন করেছেন তিনি এবং তার স্বামী। ট্রেনিং বাণিজ্য থেকে শুরু করে রোস্টার বাণিজ্য সব জায়গাতেই তিনি অর্থ ছাড়া কিছুই চেনেন না। তাকে টাকা না দিলে পাওয়া যায় না কোন ট্রেনিং। যার কারণে একই ব্যক্তি বারবার ট্রেনিং নিচ্ছে, আর অন্যরা হচ্ছেন বঞ্চিত। বিভিন্ন কারণে তিনি অনেকবার শো-কজ খেলেও সব কিছু অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে ফিরে যান তার পুরনো রূপে। আর তার এসব অনৈতিক কাজে সহযোগিতা করেন তারই কিছু নিজস্ব ব্যক্তি। যার মধ্যে অন্যতম হোসনেয়ারা বেগম। এই হোসনেয়ারা হচ্ছেন তার ক্যাশিয়ার। যেখানেই অর্থ সেখানেই এই হোসনেয়ারা। তাইতো তিনি এই হোসনেয়ারাকে ৬টি পদে বহাল রেখেছেন। যেখান থেকে প্রতি মাসে তিনি পান মোটা অংকের টাকা। হাসপাতালের পরিচালককে ম্যানেজ করে ও নিয়মিত বখরা দিয়েই চলে তার এসব অনৈতিক কর্মকান্ড। বিভিন্ন সময় পরিচালককে তার বাসায় ডেকে এবং নগরীর বিভিন্ন হোটেলে ডেকে আপ্যায়ন করা তার নিয়মিত ব্যাপার।

সরকার নাম নির্ধারিত করে দিলেও রোকেয়াকে টাকা না দিয়ে যাওয়া যায়না ট্রেনিংয়ে। সরকারের নির্ধারিত নামের ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে তিনি পাঠান তার মনোনীত ব্যক্তিদের। আর এ জন্য তিনি ও তার সহযোগিরা রোকেয়ার বাসায় দেখা করার কথা বলে থাকেন নার্সিং কর্মকতাদের। তা না হলে হয় না ট্রেনিংয়ে যাওয়া। গত মে মাসে ঢাকা নার্সিং অধিদপ্তর থেকে আইসিইউ ট্রেনিংয়ের জন্য পূর্বে পাঠানো নাম অনুযায়ী খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৪জন সিনিয়র স্টাফ নার্সের নাম আসে। তারা হলেন, উর্মি মন্ডল, সৈয়দা রাবেয়া খাতুন, অনামিকা জেসমিন ও অশোকা রানী বশাক। কিন্তু ডেপুটি নার্সিং সুপার রোকেয়া ও হাসপাতালের পরিচালক রবিউল হাসান মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে মুক্তা খাতুন, রীতা বিশ^াস ও মুক্তি মন্ডলকে সেই ট্রেনিংয়ে পাঠান, যার স্মারক নং৪৫.০৩.০০০০.০০৮.১৪.১২০.২০২২-৩৪৩। তারপরও ট্রেনিং থেকে ফিরে তাকে দিতে হয় উপঢৌকন। এছাড়া গত জুলাই মাসে পরিচালকের ছাড়পত্রে এমআইসের ট্রেনিংয়ে যান ৩ নার্সিং কর্মকর্তা। শুধুমাত্র তাকে টাকা না দিয়ে ট্রেনিংয়ে যাওয়ার জন্য ওই ৩জনকে তিনি শো-কজ চিঠি পাঠান, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। কিন্তু টাকার নেশায় তিনি এতটাই মরিয়া যে কোনটা বৈধ, আর কোনটা অবৈধ তার বাচ-বিচারও ভুলে গেছেন তিনি। ওই শো-কজ নিয়ে পরিচালক ও ডেপুটি পরিচালক তাকে নিষেধ করলেও তিনি তাদের কথা না মেনে টাকার লোভে তাদেরকে পুনরায় শো-কজ চিঠি পাঠান।  প্রথম শো-কজের চিঠিটাই যেখানে অবৈধ, সেখানে সেই শো-কজের উত্তর না দেয়ায় ৪ দিন পর রোকেয়া ওই ৩জনকে পুনরায় শো-কজ চিঠি পাঠান। এ ব্যাপারে তাকে পরিচালক ও ডেপুটি পরিচালক জানতে চাইলে তিনি বলেন, অধিদপ্তর আমাকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়েছেন। আমি যেটা করব সেটাই সঠিক।

বিষয়টি নিয়ে ডেপুটি নার্সিং সুপার (ভারপ্রাপ্ত সুপার) রোকেয়া খাতুন টেলিফোনে বলেন, ইকবারনগরে আমার একটি চারতলা বাড়ি আছে। আমার সারাজীবনের অর্জন দিয়ে করেছি। আমি এখন খুবই অসুস্থ তাই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছি না। পরে কথা হবে।

অথচ তিনি পরিচালকের বিদায় উপলক্ষ্যে ব্যানার ক্রেস্টসহ অন্যান্য কাজ করার জন্য গত শনিবার রাত বারটা পর্যন্ত ব্যস্ত ছিলেন।