ইউনিক ডেস্ক : বাবা মায়ের উপর অভিমান, পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ, প্রেমে ব্যর্থ, পড়া-লেখারউপর চাপ, চাকরী না পাওয়াসহ বিভিন্ন তুচ্ছ কারণে খুলনায় আত্মহত্যার প্রবনতা বেড়েছে। গত এক বছরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেন্সিক বিভাগ ৬৫৯টি এবং চলতি মাসের ২০ দিনে ২৮টি আত্মহত্যার তালিকা রেকর্ড করেছে। তাদের প্রত্যেককে লাশকাটা ঘরে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। তালিকায় খুলনা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলা এবং আশপাশের জেলায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়া নারী পুরুষের নাম রয়েছে। আর আত্মহত্যার জন্য তারা সহজ উপায় হিসেবে বিভিন্ন প্রকার কীটনাশক, হারপিক, গলায় ওড়না পেঁচিয়েসহ নানান পথ বেছে নেয়। চলতি মাসেই মাত্র ২০ দিনে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেন্সিক বিভগ ২৮ জনের ময়না তদন্ত করে। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন সামাজিক অবক্ষয় থেকে মানসিক বিষণ্নতায় ভুগেই বেশীর ভাগ তরুণীরা এমন ভয়ঙ্কর পথ বেছে নিচ্ছে। ২০২২ সালে ৫৪৫ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্য করে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেন্সিক বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, গেল ২০২২ সালের জানুায়ারী মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এক বছরে ৫৪৫ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার মত জঘন্য পথ বেছে নেয়। যার মধ্যে নারী শিক্ষার্থী রয়েছেন ৩৪২ জন এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ২০৩ জন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা ভয়াবহভাবে বেড়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয় ভাবে উদ্যোগ নেওয়ার কথাও বলছেন তারা। আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ৭৭ জন, স্কুলের ৩১৯ জন, মাদ্রাসার ৫৪ জন এবং কলেজ পড়ুয়া রয়েছেন ৯৫ জন।
চলতি মাসের ২০ দিনে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়া অধিকাংশের বয়স চল্লিশের নীচে রয়েছে। গত ১৬ জানুয়ারী খুলনার লবনচরা থানায় ২/২৩ নং মামলায় দেখা যায় আত্মহত্যাকারী মইফুল বেগমের বয়স ৪০ বছর। ১৯ জানুয়ারী সোনাডাঙ্গা থানায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়া ছাত্র রানার বয়স মাত্র ২২ বছর। থানার ইউডি মামলা নম্বর ৫/২৩। ডুমুরিয়া থানার ইউডি মামলা নম্বর ১/২৩ এ আত্মহত্যাকারী রাফি গাজীর বয়স মাত্র ১৪ বছর। থানায় মামলা হয় ১৪ জানুয়ারী। খানজাহান আলী থানায় ইউডি মামলা নং ২/২৩ এ দেখা যায় ১০ জানুয়ারী আত্মহত্যা করেন গৃহবধু সাবিনা (৩৪)। বটিয়াঘাটা থানার ইউডি মামলা নং ১/২৩ এ দেখা যায় গত ৭ জানুয়ারী আত্মহত্যাকারী আলী আকবরের বয়স মাত্র ২৪ বছর। এছাড়া সূত্রটি জানায় গত ২০২২ সালে আত্মহত্যাকারীদের প্রায় ৮০ ভাগের বয়স ৪০ বছরের নীচে রয়েছে।
গত বছর জুলাই মাসেই সর্বোচ্চ ৬৯ জনের ময়না তদন্ত করা হয়। এছাড়া জানুয়ারী মাসে ৫৩ জন, ফেব্রুয়ারীতে ৪৯ জন, মার্চে ৪৬ জন, এপ্রিল মাসে ৫১ জন, মে মাসে ৫২ জন, জুন মাসে ৬৩ জন, আগষ্ট মাসে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় ৬২ জন, সেপ্টেম্বরে ৫৭ জন, অক্টোবর মাসে ৫৫ জন, নভেম্বরে ৪৭ জন এবং ডিসেম্বরে ৫৫ জনের ময়না তদন্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) খুলনা’র সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, রাষ্ট্র অভিভাবকের দায়িত্ব পালন না করায় এসব আত্মহত্যারমত ঘটনা ঘটছে। রাষ্ট্র যদি শিশু অবস্থা থেকে স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দিতো, তাহলে এমন হতো না। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের উপর অভিভাবকদের কঠিন চাপের কারণে তারা অনেক সময় মানসিক ভারসাম্য হারায় ফেলে। কৈশর বয়সে স্বাভাবিক রিলেশন করতে না দেয়ায় তারা মানসিক যন্ত্রনায় ভোগে। আর অভিভাবকরা তাদেরকে নিজের মত করে দেখে ভুল করে। এসবের কারণে তারা আত্মহত্যার পথ অনেক সময় বেছে নেয়।