হেরাজ মার্কেটে সরকারি ওষুধ জব্দ : কোয়াক ডাক্তার ওষুধসহ আটক
কামরুল হোসেন মনি : সরকারিভাবে রোগীদের নামে বরাদ্দ হওয়া ওষুধ সরবরাহ থাকলেও বাইরে থেকে সেই ওষুধ কিনতে হচ্ছে রোগীদের। খুলনার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে রোগীদের বিনামূল্যের ওষুধ চুরি করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তা বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে নগরীর হেরাজ মার্কেটের ফার্মেসীগুলোতে। এ মার্কেট থেকেই সরকারি ওষুধ (এন্টিবায়োটিক) ১০ টাকার বিনিময়ে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন কথিত কোয়াক ডাক্তার ও ফার্মেসী দোকানীরা। দীর্ঘদিন ধরে খুলনার সরকারি হাসপাতাল থেকে ওষুধ পাচারে কাজ করছে একটি চক্র।
সোমবার খুমেক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ অভিনব পন্থায় এক রোগীকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে পিতৃমাতৃ মেডিকেল হলের মালিক ও কোয়াক ডাক্তার পরিচয়দানকারী চন্দন গাইনের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রকারের সরকারি ওষুধ জব্দ করেন। পরবর্তীতে তার স্বীকারোক্তিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে নগরীর হেরাজ মার্কেটে মেসার্স বেলী ড্রাগ হাউজ এ অভিযান চালিয়ে সরকারি বিক্রিয় নিষিদ্ধ ইনজেকশন ও ট্যাবলেট জব্দ করা হয়। অভিযানের সময় দোকানের মালিক মাসুদুর রহমান ডালু পলাতক ছিলেন। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ জাকির হোসেন এ অভিযান পরিচালনা করেন।
জানা গেছে, সোমবার সকালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক মহিলা রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রেসক্রিপশন দিলে ওই মহিলা রোগী তার কাছে থাকা ওষুধ বের করে দেখিয়ে বলেন এই ওষুধ খেলে কী হবে। তখন বিষয়টি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদের নজরে আসে। এই সরকারি ওষুধ কোন জায়গা থেকে কিনে এনেছেন এমন প্রশ্ন করা হলে মহিলা রোগীটি দোকানের নাম বলে দেন। ওই মুহূর্তে তত্ত্বাবধায়ক রোগীকে সাথে নিয়ে নগরীর বানরগাতি ১১২/২ ইসমাইল রোড এলাকায় গিয়ে পিতৃমাতৃ মেডিকেল হল নামক ওষুধের দোকানটি দেখিয়ে দেন। দোকানের মালিক ভজ হরি চন্দন গাইনকে দোকানে আসলে তার দোকান থেকে সরকারি বিক্রিয় নিষিদ্ধ নামীদামি এন্টিবায়েটিক ওষুধ জব্দ করা হয়। চন্দন গাইন স্বীকার করেন তিনি নগীরর হেরাজ মার্কেটে বেলী ড্রাগ হাউজ থেকে সরকারি ওষুধ কিনে রোগীদের কাছে বিক্রি করেন।
চন্দন গাইন এ প্রতিবেদককে বলেন, ৬ মাস ধরে নগরীর হেরাজ মার্কেট বেলী ড্রাগ হাউজ থেকে সরকারি বিক্রি নিষিদ্ধ ওষুধ কিনে এনে তা তিনি রোগীদের কাছে বিক্রি করছেন। ওই দোকান থেকে গড়ে সরকারি এন্টিবায়েটিক ওষুধগুলো এক পিস ১০ টাকা দরে কিনে আনেন। রোগীদের কাছে তা ২০ টাকায় বিক্রি করছেন। তিনি সরকারি ওষুধগুলো প্রতি মাসে হেরাজ মার্কেট থেকে কিনে এনে ব্যবসা করছেন।
খুমেক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক মহিলা রোগীর মাধ্যমে ওই দোকানীকে সনাক্ত করে সরকারি বিক্রিয় নিষিদ্ধ এন্টিবায়েটিকসহ বিভিন্ন প্রকার ওষুধ জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে চন্দন গাইনকে নিয়ে হেরাজ মার্কেটে নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে জেলাপ্রশাসককে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযানের জন্য হেরাজ মার্কেটে পাঠান। ডাঃ এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, কোন জায়গা থেকে ওইসব সরকারি ওষুধ বাইরে পাচার হচ্ছে তা আগে বের করা প্রয়োজন। যে কারণে নিজেই অভিযানে নামি।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ জাকির হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, চন্দন গাইনের স্বীকারোক্তিতে নগরীর হেরাজ মার্কেটে বেলী ড্রাগ হাউজে অভিযানে আসি। কিন্তু মালিক মাসুদুর রহমান ডালু পলাতক থাকায় মার্কেটের কমিটিকে সাথে নিয়ে তার দোকান তল্লাশি চালানো হয়। এ সময় সরকারি বিক্রয় নিষিদ্ধ কিটিরোলাক ইনজেকশন ১২০টি ও কার্ডন-(৫০) ২শ পিস ট্যাবলেট জব্দ করা হয়েছে। মালিক পলাতক থাকার কারণে দোকানটিকে সীলগালা করে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে ওই দোকানে পুনরায় আবারও তল্লাশি চালানো হবে।
পেশকার এসএম জাহাঙ্গীর আলম এ প্রতিবেদককে বলেন, আটক সরকারি ওষুধগুলো জব্দ করা হয়েছে। বেলী ড্রাগ হাউজ থেকে সরকারি বিক্রি নিষিদ্ধ ওষুধ ক্রেতা চন্দন গাইনকে সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে। আজ পুনরায় অভিযান চালিয়ে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, খুলনার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালগুলোতে সরকারি বিক্রয় নিষিদ্ধ ওষুধগুলো চুরি করে হাসপাতালের কতিয়পয় কর্মচারী কর্মকর্তার মাধ্যমে তা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হেরাজ মার্কেটে বিক্রি হচ্ছে। এর আগে আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল থেকে লাখ টাকার ওষুধসহ হাসপাতালের ফার্মাসিস্টসহ দুই জনকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। তারা ওই সময় স্বীকার করেছিলেন ওই সব সরকারি ওষুধ তারা নগরীর হেরাজ মার্কেটের কতিপয় দোকানে বিক্রি করে আসছেন। একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নগরীর হেরাজ মার্কেটে অভিযান চালিয়ে সরকারি বিক্রি নিষিদ্ধ ওষুধ, ফিজিসিয়ান স্যাম্পল ওষুধ ও ভেজাল ওষুধ আটক করেন। এ সময় মূল হোতারা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। একের পর এক অভিযানের পরেও থেমে নেই হেরাজ মার্কেটে ভেজাল ও সরকারি বিক্রিয় নিষিদ্ধ ওষুধ ক্রয়-বিক্রয় সিন্ডিকেট সদস্যরা।